Site icon Aparadh Bichitra

মৃত্যুর পরেও মিলছে না মুক্তি জঘন্য লাশ বানিজ্যে মাতোয়ারা পুলিশ কনষ্টেবল থেকে ফরেনসিক প্রধান !

নোমান মাহমুদ ঃ ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবন দিয়ে, সম্ভ্রম দিয়ে নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এই গনতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের শতভাগ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি বাঙ্গালী জাতি। আর তাই নিজের দেশে, নিজের মাটিতে প্রতিটি পদক্ষেপে পর্যদুস্ত হতে হচ্ছে এই জাতির। প্রতিনিয়ত অপদস্থ হতে হচ্ছে খোদ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দ্বারা। দুর্নীতি আর অনিয়মের রোষানলে জীবন্ত মানেুষের হাত থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যুর পরেও যেন হাঁসফাস করছে মৃতের আত্বা। লাশ বানিজ্যের কাছে অসহায় নিথর দেহ। কোন দূর্ঘটনায় মৃত্যু হলেই হয়, সেই লাশ নিয়ে বানিজ্যে মেতে ওঠে পুলিশ কনস্টেবল, হাসপাতাল ডোম, ফরেনসিক চিকিৎসক এমনকি ফরেনসিক বিভাগের প্রধান পর্যন্ত। মৃত্যুও পরেও মিলছে না মুক্তি। একদিক স্বজন হাড়ানোর সীমাহীন বেদনা, অন্যদিকে স্বজনের মৃতদেহের উপরে দূর্নীতির খড়গ। কোন দূর্ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধারের পর তা লাশবাহী গাড়িতে ওঠার পর থেকেই শুরু। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পৌছতে টাকা, হাসপাতাল মর্গে লাশ হিমাগারে সংরক্ষন করতে টাকা, ময়নাতদন্তের পর লাশ ভালভাবে সেলাই করতে টাকা, মৃতের গোসলে টাকা, কাফনে টাকা, কফিনে টাকা, লাশ নিজ বাড়িতে পৌছতে টাকা, এমনকি দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারন নির্ণয় করতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আনতেও টাকা। আর এই টাকা টাকা করতে করতে, টাকার খড়গ মেটাতে গিয়ে জীবন্ত মৃত্যুবরন করে মৃতের স্বজনরা। অথচ কোন দূর্ঘটনায় বা ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুবরনকারী ব্যাক্তির সরকারী সহায়তা প্রাপ্তি নাগরিক অধিকার। রয়েছে সরকারী বরাদ্ধও। তবুও লাশ প্রতি আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। সাভার মডেল থানা থেকে শুরু করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত লাশের কার্যক্রম পর্যবেক্ষনে এসকল চিত্র ফুটে ওঠে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসকল লাশ থেকে প্রাপ্ত কোন অর্থই গ্রহন করেন না সাভার মডেল থানা পুলিশের উপঃ পরিদর্শক থেকে শুরু করে অন্যান্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন। তবে অর্থের এ লোভ সংবরন করতে পারেনা সাভার মডেল থানায় দ্বীর্ঘদিন যাবত কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মোঃ গোলাম নবী। সাভার মডেল থানার আইনী কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট লাশের আনা-নেওয়া ও ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। লাশের কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকতে থাকতে নিজেই যেন হয়ে পড়েছেন লাশ, হাড়িয়ে ফেলেছেন বিবেক। আর লাশ প্রতি আদায় করছেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাশের কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধীক ব্যাক্তি জানান, বিভিন্ন বাহানায় গোলাম নবী লাশের স্বজনদের নিকট হতে কালভেদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করেন। একটি লাশ গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌছাতে লাগে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। মর্গের হিমাগারে লাশ সংরক্ষন করতে হিমাগারের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিকে দিতে হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। অতঃপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ভালভাবে সেলাই করতে ডোমকে দিতে হয় ২ হাজার টাকা, লাশ গোসল করাতে ২ হাজার টাকা। এরপর লাশ কোথায় যাবে, লাশের কাফনের কাপড়, কফিন আর লাশ গন্তব্যে পৌছাতে গাড়ির ভাড়া সহ লাশের স্বজনদের সাথে দর-কষাকষি করে তৈরী করা হয় একটি খরচের প্যাকেজ, যার অংক কালভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর দর-কষাকষির এ দায়িত্বটি পালন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডোম সেকেন্দার। আবার অভিযোগ রয়েছে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আনতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদকেও দিতে হয় ২ হাজার টাকা। শুধুমাত্র এই অত্যাচার থেকে মুক্তি পায় অজ্ঞাতনামা লাশ। লাশ বানিজ্যের এই নিষ্ঠুর খেলা পর্যবেক্ষনে মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা যদি মৃতকে জেগে ওঠার ক্ষমতা দিতো তবে এসকল মৃত ব্যাক্তির লাশ বুঝি বিবেকহীন দূর্ণীতিবাজদের হাত থেকে মুক্তি পেতে বিচারের আশা ছেড়ে দৌড়ে পৃথিবী ছেড়ে নরকে ঝাপ দিতো। কিন্তু আফসোস সৃষ্টিকর্তা মৃতকে এই ক্ষমতা দেয়নি তাই নিরবে এই অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া এসকল মৃতদেহের আর কোন গতান্তর থাকে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের স্বার্থে গ্রহন করা নানা পদক্ষেপ, দূর্নীতির বিরূদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও গুটিকয়েক অসাধূ ব্যাক্তির জন্য তা বাস্তবায়নে সরকারকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। বাধাগ্রস্থ হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। অনতিবিলম্বে লাশ বানিজ্যের এই অমানবিক কর্মকান্ড বন্ধ করা না গেলে হয়তো আগামীতে এসকল লাশের স্বজনদের আহাজারী ক্রমাগত আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যার শিকার হবে এদেশের সাধারন মানুষ। (অপরাধ বিচিত্রা)