‘‘ভোলায় কোচিং বাণিজ্য সিন্ডিকেট’’ শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী

0
1474

ঃ                                দ্বীপ জেলা ভোলার আনাছে কানাছে চিপা চাপায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কোচিং বাণিজ্য কোচিং সেন্টার। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা । দুশ-চিন্তায় অভিবাবকগণ। ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী  বিদ্যা-নিকেতন গুলো এবং ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়/ ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল গুলো দীর্ঘ দিন যাবত শুনামের সহিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমাহার ছিলো। কিন্তু ইতিমধ্যে সেই শুনাম আর নাম লন্ডভন্ড হয়ে মাটির সঙ্গে মিলে তৈরি হয়েছে কোচিং বাণিজ্য। প্রতিবছর বোর্ড পরিক্ষায় ভালো শুনাম অর্জন করার নামটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইদানিং যে কোচিং বাণিজ্য চলছে তা দেখে মনে হয়  দিন রাত ২৪ ঘন্টাই  ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি চালু রয়েছে। এতে সমস্যায় পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশে সঠিকভাবে শিক্ষকদের পাঠদান না থাকায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
গোপন সূত্রে জানায়,  শিক্ষকদের অনাকাংঙ্খিত কোচিং বাণিজ্যের ফলে  শ্রেনীকক্ষে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপর  বাড়ছে অতিরিক্ত মানষিক চাপ। যারা স্কুলে প্রাইভেট/কোচিং এ আসছে তাদেরকে দ্বিতীয় বার ক্লাসে উপস্থিত দেখা যাচ্ছে না বলেও জানানে।
বর্তমান প্রাইভেট/কোচিং এর ফলে ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টিকে অভিবাবকেরা স্কুল কাম কোচিং সেন্টার বলে অভিহিত করেছেন।

 

IMG_20170329_165030
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য বন্ধে নীতিমালা ২০১২ আইনপাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রালয়। কিন্তু সরকারের কোন নীতিমালা মানছে এবং তোয়াক্কা করছে না সরকারী বালিকা  উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
নীতিমালায় উল্লেখ্য আছে যে, সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয় কলেজ ও মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোচিং  অথবা প্রাইভেট পড়াতে পারবে না।শিক্ষা মন্ত্রালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কোচিং বানিজ্য বন্ধে নীতিমালা চালু করলেও ‘‘ফলাফল দাঁড়িয়েছে তার উল্টো।’ সরকারী নীতিমালার দোহাই দিয়ে যে কোচিং বা প্রাইভেট ঘর ভাড়া নিয়ে চলত তা প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠানের শ্রেনীকক্ষেই অতিরিক্ত ক্লাসের নাম দিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকা।এর ফলে দেখা যাচ্ছে শ্রেনী কক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের ইচ্ছাকৃত অমনোযোগী। শিক্ষাকে ব্যয়বহুল ও বানিজ্যকরণ রোধ প্রকল্পে সরকারী আইন জারী হলে প্রথম পর্যায়ে এই ব্যবসায়ীরা একটু হোঁচট খেলেও নতুন কৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মোটা অংকের অর্থ উপার্জনকারী একশ্রেনীর শিক্ষক আইনে ফাঁক-ফোকর বের করে সরকারের জারি করা নীতিমালা ও অভিবাবকদের বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এই শিক্ষা বানিজ্য।বর্তমানে ওই সকর শিক্ষাকেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে বলেও জানা যায়।
অভিবাবকের অভিযোগসূত্রে জানায়,  শিক্ষকেরা বলছে তাদের কাচে প্রাইভেট না পড়লে পরিক্ষায় ফেল করিয়ে দিবে। অতিরিক্ত ক্লাসের নামে প্রকাশ্যে কোচিং/প্রাইভেট বাণিজ্য চলছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা  পর্যন্ত বিনা বাধায় চলতে থাকে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে এ কোচিং।বাসায় আমাদের মেয়ে/ছেলেরা বলে আজ ক্লাশ করবো না কোচিং করে চলে আসবো।ক্লাশ হয় না স্যারেরা শুধু ক্লাশ টাইমে কথা বলে আমাদেরকে পড়ায় না। এজন্য আম্মু ক্লাশ করবো না। প্রাইভেট পড়ে আসবো।
এদিকে  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেনী কক্ষের মতোই ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকেরা।যাতে কোনোভাবেই বুঝায় যায় না এখানে কোচিং চলে না ক্লাশ চলে।
সরে জমিনে আরো ঘুরে দেখা যায়, শ্রেনীকক্ষে তেমন আশানুরুপ উপস্থিতি দেখা না গেলেও বিদ্যালয়ের অন্য ভবনে কোচিং/প্রাইভেট ক্লাসে আছে যথেষ্ট শিক্ষার্থীরা।  প্রাইভেট এর সময় শুরু হলে স্কুলের প্রধান গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। যাতে বহিরাগত  থেকে বুঝা না যায় এখানে কি চলছে। বিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন দিবা শাখার গনিত বিষয়ের শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান ও মাহাবুর রহমান, বাংলা বিষয়ের শিক্ষিকা আফরোজা আক্তার,ইংরেজি বিষয়ের আবদূর রহিম ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোঃ ছানী। এদের দেখাদেখি বাদ যায় না বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষকেরাও।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়াদ হাসানের সাথে আলাপ করলে বলেন, ভোলা সদর উপজেলায় কোন ধরনের অতিরিক্ত ক্লাস হয় না । আমাদের রুটিন অনুযায়ী সব ক্লাস হয়।এছাড়া সেকায়েপের মাধ্যমে যে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া তার মাধ্যমে কোন অতিরিক্ত ক্লাস হয় না ভোলা সদর উপজেলাতে।আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
গত বুধবার সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,মেইন গেইট দিয়ে ঢুকতে ডান পাশ্বে দিয়ে কলের অপর পাশের কক্ষে দরজা জানালা বন্ধ করে ভিতরে পড়াচ্ছে বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক অনিন্দিতা হালদার।দড়জা কড়া দিয়ে খুলতে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি সম্পূর্ন অস্বীকার করেন এবং বলেন তিনি পঞ্চম শ্রেনীর ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু শ্রেনীকক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান যে তিনি প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।
একই সময় প্রভাতি শাখার বিদ্যালয় চলাকালীন সময় অন্য পাশের আরেক রুমে পড়াচ্ছেন প্রভাতি শাখার নবম শ্রেনীর শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ক শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান।
এবিষয়ে তাৎক্ষণিক শিক্ষক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নবম শ্রেনীর  শিক্ষক সে ষষ্ঠ শ্রেনীর অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। এসময় তার কোনো ক্লাশ নেই  বিদ্যালয়ে এজন্য  সে ক্লাস নিচ্ছেন।
তিনি এসময় আরো বলেন, অভিবাবক প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত দিয়েছে তার পরেই তিনি অনুমতি দিয়েছে এবং তালিকা ভাগ করে দিয়েছে। এছাড়া সে অন্য কোন শিক্ষার্থী পড়ান না।
অপরদিকে বিকাল ৩টায় দিবা শিফটের ক্লাস চলাকালীন সময়ে পড়াচ্ছেন মোঃ জহিরুল ইসলাম ও মোঃ মিল্টন। মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান,সে প্রভাতি শাখার শিক্ষক,সে এই সময়ে অতিরিক্ত ক্লাসের চতুর্থ শ্রেনীর বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এবং তার পাশের ক্লাসে পড়াচ্ছেন মোঃ মিল্টন তিনিও একি দাবী করেন যে সরকারী নীতিমালানুযায়ী সে অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন তৃতীয় শ্রেনীর ইংরেজি বিষয়ের।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা ২০১২ এর ৩নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত রয়েছে যে। ‘‘কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবে না।’’ তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে দৈনিক অন্য প্রতিষ্ঠানের সীমিত সংখ্যক ১০জনের বেশি শিক্ষার্থী পড়াতে পারবেন না।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের তথ্যনুসারে জানা যায়, জহিরুল ইসলাম নামের শিক্ষক ইসলাম শিক্ষার একজন শিক্ষক বটে।  কিন্তু সে অতিরিক্ত ক্লাস নামে কোচিং/প্রাইভেট ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে মোঃ মিল্টন হচ্ছেন শারিরীক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক তিনিও অতিরিক্ত ক্লাস নামে কোচিং ক্লাসে ইংরেজি পড়াচ্ছেন।প্রভাতি শাখার বিদ্যালয় ছুটি হয় ১১টা৪৫মিনিটে আর পঞ্চম শ্রেনীর ছুটি হয় ১০টা ২০মিনিটে।  ১০টা৩০মিনিটের থেকে পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট শুরু করে দেয় পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষিকা মনিরুননেসা সূমী।
তিনি শ্রেনীকক্ষে গনিত বিষয়ে পাঠদান করালেও প্রাইভেটে সে ইংরেজি বিষয়সহ সব বিষয়ে পাঠদান করিয়ে থাকেন।
আরো তথ্যানুসারে জানা যায়, মনিরুননেসা সূমী তিনি সমাজ বিষয়ের শিক্ষক।দিবা শাখার শ্রেনী শিক্ষক গনিত বিষয়ের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম তিনিও বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কমবেশি ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেনীর সব বিষয়ে পড়াচ্ছেন। তাদের কাছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই রয়েছে জিম্মিবস্থায় প্রাইভেট/ কোচিং না  পড়লে সাময়িক পরিক্ষা গুলোতে ফেল করানোর বড় মাসুল।
আরো দেখা গেছে বন্ধ সময়, যে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট/কোচিং করতে আসে তারা প্রায়ই বিদ্যালয়ের ড্রেস পরাবস্থায়।
এবিষয়ে অপেক্ষামান অভিবাবকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ আছে যে প্রাইভেট টাইমে স্কুল ড্রেস পরে  আসতে হবে।  বাচ্চারা স্কুলে ঢুকার পরই গেইট বন্ধ করে দেয়া। অভিবাবকেরা চাইলেও ভিতরে কী হচ্ছে? কে পড়াচ্ছেন তা কিছুই জানা যায় না।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত কুমার দেব এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের নীতিমালা আছে যদি শিক্ষার্থীরা মনে করেন নিদিষ্ট ক্লাস সময়ে বাহিরে যদি অতিরিক্ত ক্লাসের প্রয়োজন তাদেরই পড়াচ্ছে। তারা সরকারে অনুমোদিত আইন মেনে চলছে।
দিবা শিফটে কেনো প্রভাতির ক্লাস নিচ্ছেন এ প্রশ্নত্তোরে প্রধান শিক্ষক জানান, তারা দিবার ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকেরা তাদের শিক্ষার্থীদেরই পড়াচ্ছেন।
ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে আরো আলাপ করলে  তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।  আমরা কোচিং বা অতিরিক্ত ক্লাসের সাথে জড়িত না। আমার কোন অনুমতি না নিয়ে তারা এই কোচিং হয় না।আমি স্কুল দেখি এর বাহিরে কী হচ্ছে তা দেখার বিষয় না। আমি স্কুলকে দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে একাডেমিক ভবন  আলাদা ও কোচিং ভবন আলাদা।একাডেমিক এর কোন শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট ভবন এর এখানে কেউ আসতে পারবে না। আমরা কেউই কোচিং এর সাথে জড়িত না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) সুব্রত কুমার সিকদার এর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করলে তিনি জানান, অভিযোগটি অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন,জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন স্যারের সাথে আলাপ করে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো বলেন, মিটিং এর মাধ্যমে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে নিয়মনুসারে বলা আছে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত স্কুল চলাকালীন সময়ে কোন ধরনের প্রাইভেট/কোচিং বিদ্যালয়ে পড়াতে পারবেন না। এ বিষয়ে মনিটরিং এর জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে পাঠাবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুব্রত কুমার আরো বলেন, আমি ওয়াদা করছি এর সাথে জড়িত সকলের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − seven =