কুমিল্লাতে ২টি হসপিটাল হলো মৃত্যুকূপ! জামাল উদ্দিন স্বপন, কুমিল্লা:

0
1369

কুমিল্লায় পৃথক হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পরে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জেলার লাকসাম উপজেলার সদরের ‘রংপুর পলি ক্লিনিক’ নামে একটি হসপিটাল ভাংচুর করে। রোববার সন্ধ্যা থেকে গভীররাত পর্যন্ত ওই প্রাইভেট হাসপাতালে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ওই হাসপাতালের মালিক ডাক্তার যোগেশ চন্দ্র রায় গা-ঢাকা দেয়।অপর ঘটনাটি ঘটেছে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরের ‘নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মডার্ন হসপিটাল’ নামের ক্লিনিকে। ওই হাসপাতালে অচেতন করার (অ্যানেসথেশিয়া) চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানোর পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
লাকসামে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, লাকসাম উপজেলার নরপাটি গ্রামের অহিদুর রহমানের স্ত্রী রংমালা বেগমকে (৫৫) গত শুক্রবার লাকসাম পৌরশহরের রংপুর পলি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরদিন শনিবার রাতে ওই হাসপাতালের মালিক ডাক্তার যোগেশ চন্দ্র রায় নিজেই রোগীর পাকস্থলিতে পাথর অপারেশন করেন।এরই মধ্যে রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলে রোববার বিকেলে ওই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে স্বজনরা হাসপাতালে আসার আগে চিকিৎসক ওই রোগীকে একটি ইনজেকশন পুশ করলে রোগী বমি করতে থাকে। একপর্যায়ে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খবর পেয়ে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে হাসপাতাল ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও ওই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একাধিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা এবং কিডনি চুরিরও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে একই উপজেলার ইরুয়াইন গ্রামের আরবের রহমানের অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার যোগেশ অপারেশনকালে মারা যায়। ওই ঘটনায় ১০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা দিয়ে কোনরকমে পার পায় ওই হাসপাতালের মালিক। এছাড়াও মাত্র কয়েক বছর আগে অপারেশনের নামে কিডনি চুরি করে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায়ও ওই ডাক্তারের লক্ষাধিক টাকা জরিমানা হয়।
এদিকে, জেলার নাঙ্গলকোট সদরে ‘নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মডার্ন হসপিটাল’ নামের ক্লিনিকে অচেতন করার (অ্যানেসথেশিয়া) চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানোর পর এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া নার্সের বদলে ওই অপারেশনে চিকিৎসকের সহযোগিতায় ছিলেন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক নিজেই।মারা যাওয়া খুকি বেগম (২৭) নাঙ্গলকোট পৌরসভার বাতুপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। ওই ক্লিনিকে অচেতন করার চিকিৎসক ওমর ফারুক গত শনিবার বিকেলে এ প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করার পর তাঁর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে তড়িঘড়ি করে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
খুকি বেগমের মা বলেন, অপারেশনের পরই খুকির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালের ম্যানেজার আজাদ আর ডাক্তার ফারুক মিলে খুকির অপারেশন করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ওমর ফারুকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মডার্ন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মো. আজাদ হোসেন অচেতন করার চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + 12 =