পটিয়ার স্বামী সত্যানন্দ-মঙ্গলদাশ আশ্রমে সর্বধর্মীয় তোরণ চাই

0
1497

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম আন্দোলন সংগ্রামের সফল যোদ্ধা মাস্টারদা সূর্যসেনের গুরু ও মামা ছিলেন পরমহংস শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ মহারাজ। তেমনিভাবে স্বামী সত্যানন্দের সংস্পর্শে এসেছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, পুলিন দে, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, বিনোদ বিহারী প্রমুখ। দেশপ্রেম, মানবকল্যাণ, আত্মত্যাগের দীক্ষাদানের গুরু স্বামী সত্যানন্দ সেই সময়েই রাজনীতিকদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শ্রীমৎ স্বামী মঙ্গলদাশ মহারাজ (কালাবাবা) ভারতের বৃন্দাবন হতে এসে সত্যানন্দের সাথে মিলিত হয়ে পটিয়ার কেলিশহরে প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে যোগসিদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে বর্তমানে সিদ্ধাশ্রমের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন স্বামী নিত্যানন্দ পুরী মহারাজ। প্রতিবছর এপ্রিল মাসে এবং বাংলা বৈশাখ মাসে সর্বধর্মের সমন্বয়ে এখানে আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধর্মের মণীষিরাও যোগ দেন সম্মেলনে। প্রধান সড়ক থেকে ২ কিলোমিটার ভেতরে এই আশ্রমের অবস্থান, যা বর্তমানে ধর্মীয় তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই সিদ্ধাশ্রমে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, শিখ, জৈন ধর্মের মোহন্ত মহারাজবৃন্দ নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। এ বছর আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন মাইজভা-ার দরবার শরীফের মাওলানা সৈয়দ মফিজ উদ্দিন আল্ হাছানী আল্ মাইজভা-ারী। অতিথি ছিলেন রাহে ভান্ডার কধুরখীল দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন ছুফী ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ্, পটিয়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. সংঘপ্রিয় মহাথেরো, নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর চার্চের ইনচার্জ ফাদার রবার্ট গণছালভেছ, গুরুদুয়ারা শিখ টেম্পলের গ্রন্থি ভাই সিংবীর সিং, বাহাই সেন্টারের পরিচালক মি. সাঈদ হাকিকি, সূফীতত্ত্ব গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল ইউসুফ প্রমুখ। মানবকল্যাণ, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং সর্ব ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়ে সারা বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এই সিদ্ধাশ্রম। প্রত্যেক ধর্মে সম্প্রীতি ও সৎভাব স্থাপন করাই আন্তঃধর্মীয় সম্মেলনের মূখ্য উদ্দেশ্য। দেশ ও জাতীর মঙ্গল কামনায় ধর্মীয় প্রার্থনা করা হয় সকাল বিকাল সন্ধ্যায়।

দুঃখের বিষয়, স্থানীয় একটি কুচক্রীমহল এই সিদ্ধাশ্রমের মানবকল্যাণমুখী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে তারা বাধা দান করে আসছে জিরো জিরো পয়েন্টে (খেজুর তলা) সত্যানন্দ ও কালাবাবা যোগসিদ্ধাশ্রমের সড়কের মাথায় সর্বধর্মীয় তোরণ নির্মাণে। যোগসিদ্ধাশ্রমের নামে সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের কাজেও বাধা দিয়েছিল তারা, কিন্তু তাতে সফল হয়নি। প্রায় আড়াই কি.মি. সড়ক নির্মিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে, যা যোগসিদ্ধাশ্রম সড়ক (আইডি নং- ৪১৫৬১৫২৪৬) নামে উক্ত দপ্তরে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। এই যোগসিদ্ধাশ্রম সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের নিবন্ধনকৃত (নং-চট্ট/৩২৯)। কেলিশহরের আর.এস ৩ ও ৪ নং সিটে এবং বি.এস চূড়ান্ত জরিপে ৭৭১৮ দাগে জিরো জিরো পয়েন্টে কেলিশহর মৌজার পরিমাপ করে পাওয়া যায়। পটিয়া উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক সার্ভে জরিপে যোগসিদ্ধাশ্রমের সড়কের মাথার সর্বধর্মীয় তোরণ নির্মাণ হলে কোন প্রকার সমস্যা হবে না মর্মে প্রতিবেদনও সরেজমিনে দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়নেও বাধা দেওয়া হয়েছিল, তাতে কাজ হয় নি।

স্বামী সত্যনন্দ মাস্টার দার গুরু এবং মামা ছিলেন। তাদের দীক্ষাদান করতে গিয়ে অনেক বাধাবিপত্তি সহ্য করতে হয়েছে এমনকি প্রাণপাতের ঝুঁকিও নিতে হয়েছিল। তাই ভাল কাজে জনগণ এবং প্রশাসন এগিয়ে আসলে সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করা যায়। যোগসিদ্ধাশ্রমের সম্পাদক প্রকৌশলী পিংকু দাশগুপ্ত’র আবেদন ভূমি প্রতিমন্ত্রী বরাবরে তোরণ নির্মাণের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অগ্রগামি করা হয়। এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করা হলে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে সরেজমিনে তদন্ত করে তোরণ নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক ও আইনানুগ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও যোগসিদ্ধাশ্রমের সর্বধর্মীয় তোরণ নির্মাণে কুচক্রীরা বারবার বাধা প্রদান করে আসছে কোন প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। তারা এই এলাকায় কোন প্রকায় উন্নয়ন হোক, তা চায় না।

আশ্রমের সাংগঠনিক সম্পাদক সদীপ দেবনাথ সজীব জানান, ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন করা হলে এর প্রেক্ষিতে উপসচিব হাবিব মো. হালিমুজ্জামান তোরণ নির্মাণে বাধা অপসারণ করতে মহা পুলিশ পরিদর্শক বরাবরে নির্দেশনা দিয়েছেন। আশ্রমের সম্পাদক প্রকৌশলী পিংকু দাশগুপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) বরাবরে আবেদন করেছেন সড়কের মাথায় জিরো জিরো পয়েন্টে সর্বধর্মীয় তোরণ নির্মাণে আইনি সহায়তা প্রদান করতে। বাস্তবে দেখা গেছে, স্থানীয় কুচক্রীমহল প্রশাসন এবং আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্যায়ভাবে তোরণ নির্মাণকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বারবার বাধা প্রদানসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে, যা শান্তিকামী জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যোগসিদ্ধাশ্রম বিভিন্ন মানবকল্যাণমূলক পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে কেলিশহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে রাস্তা নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রায় আড়াই কি.মি রাস্তা এবং  ত্রিশ মি. দৈর্ঘ্য কালভার্ট নির্মাণ করা হয় আশ্রম সড়কের উন্নয়ন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন জানানো হলে এসি লেন্ড পটিয়া এবং সার্ভেয়ার মনিরুল আজাদ সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেন। এই যোগসিদ্ধাশ্রমের সড়কের প্রবেশের সম্মুখে একটি সর্বধর্মীয় তোরণ নির্মাণ হলে কোন প্রকার সমস্যা হবে না মর্মে প্রশাসনিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তবুও কেন বারংবার বাধা দেয়া হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করে স্থানীয় কুচক্রীমহল কর্তৃক তোরণ নির্মাণে বাধা অতিক্রম করতে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন।

 

ডা. শোভন দাশ, প্রচার সম্পাদক স্বামী সত্যানন্দ ও মঙ্গল দাশ যোগসিদ্ধাশ্রম, কেলিশহর, পটিয়া, চট্টগ্রাম।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − 8 =