মোজাহারুল ইসলাম ও আবু সুফিয়ান কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) হইতে ॥
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী স্কুলগুলো শুধুমাত্র কাগজ কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই কোন শিক্ষার অস্তিত্ব। একটি মহল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল করার নামে সরকারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বাহাগিলী ইউনিয়নে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল ৩টির মধ্যে একটি স্কুল চলমান রয়েছে। বাকী ২টি স্কুলের সাইনবোর্ড দেয়া থাকলেও নেই কোন শিক্ষার লেশ। ‘এলাকাবাসী জানায় এসব স্কুল বানিয়ে সরকারী ভাবে অনুদান নেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ২টি ওয়ার্ডে ৩টি প্রতিবন্ধী স্কুল হলে কমপক্ষে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় ১০টি করে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রয়োজন। এত প্রতিবন্ধী কি এলাকায় আছে?’ বাহাগিলী ইউনিয়নে একমাত্র প্রতিবন্ধি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পাঠদান করে আসছে বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়টি। বাহাগিলী সরকার পাড়ার নূরুল হুদা শাহ বলেন যারা শিক্ষার নামে ছাত্র ছাত্রী ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সরকারকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক। তিনি বলেন বাহাগিলী ইউনিয়নে একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল হচ্ছে বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী একশতাধিক। যে ভাবে বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছে তাতে মনে হয় এরা সরকারী ভাবে অর্থ পায়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে কোন ঠাসা করতে পাশাপাশি বাহাগিলী বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও অটিজম স্কুল খুলেছে। এ স্কুলে নেই কোন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী। স্কুলটি ২০১৬ সালে স্থাপিত দেখানো হলেও কার্যক্রম আজ পর্যন্ত নেই। সরকারের উচিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
নয়ানখাল এলাকার এছমোতারা বেগম জানান,বাহাগিলী ইউনিয়নে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ও অটিজম স্কুলটি ২মাস আগে টিন দিয়ে ঘড় তুলে ঘেড়াঘিড়ি করছে। তবে এখনও তাদের কোন ছাত্র ছাত্রী চোখে পড়েনি। আর এত প্রতিবন্ধি স্কুল হলে ছাত্র ছাত্রী পাবে কোথায়?
একই এলাকার মোকছেদুল ইসলাম জানান, এগুলো স্কুল পড়ালেখা করার জন্য নয় এসব স্কুল দিয়ে সরকারী কাছ থেকে অনুদান নেয়ার জন্য। আর এই এলাকায় একটি প্রতিবন্ধি স্কুল ভাল ভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করতে এতগুলো স্কুল করা।
বাহাগিলী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ও অটিজম স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে সাড়ে ১২টায় স্কুলের সকল কক্ষ বন্ধ। প্রতিটি কক্ষের ভিতরে ২/৩ টি করে বেঞ্চ আছে। নেই কোন শিক্ষক কর্মচারী বা শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পরে স্কুলের সামনে অবস্থিত একটি বাড়ী থেকে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোতালেব হোসেন বের হয়ে এসে বলেন প্রধান শিক্ষক স্কুলের কাজে বাহিরে আছেন এজন্য স্কুল বন্ধ। স্কুলের কতজন শিক্ষক আছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন মোট শিক্ষক কর্মচারী ১৫জন। কোন সংস্থার অনুমতি নিয়ে স্কুল পরিচালনা করছেন? এ উত্তরে সহকারী শিক্ষক বললেন গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার (ভিডিও)। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক সবকিছু নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বাহাগিলী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন উদ্দীনের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকের ফোন পেয়ে বলেন,আপনাকে তথ্য দিব কেন? আমার যেখানে তথ্য দেয়ার দরকার সেখানেই তথ্য দিব।
বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অটিষ্টিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। প্রতিবন্ধীরাও যে জাতীর বোঝা নয় তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতি স্কুলটি। প্রতিবন্ধীদের মন মস্তিস্কের বিকাশ ঘটাতে এবং শারিরীক গতি ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত দুপুরে নাস্তা দেয়ার পর উন্নতমানের সাউন্ড সিষ্টেমের মাধ্যমে গান ও নাচ শিখিয়ে তাদেরকে শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করছে। যাদের বাক শক্তি ছিল না তারা এখন কথা বলতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে নিয়মিত ভাবে প্রতি মাসে দুইবার ডাক্তার দিয়ে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাহাগিলী আদর্শ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরকত ই-খোদা মুকুল বলেন,বাহাগিলী আদর্শ প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীরা শুরুতে যেমন ছিল তার থেকে বর্তমানে ৫০% ভাগ শিক্ষার্থী বাক ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে উন্নতি লাভ করেছেন। তবে একটি মহল আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আমার প্রতিষ্ঠানকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করছে।
বাহাগিলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ্ দুলু বলেন,তিনি বলেন পূর্বে থেকেই বাহাগিলী ইউনিয়নে দুইটি প্রতিবন্ধী স্কুল আছে। তবে নতুন কোন স্কুল হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।