রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরার পরিস্থিতি হয়নি: জাতিসংঘপ্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্ত্মর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার আহ্বান

216
1422

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ
রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরার মতো পরিস্থিতি রাখাইনের উত্তরাংশে এখনও হয়নি বলে মন্ত্মব্য করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আদ্রিয়ান এডওয়ার্ড বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্রে কী আছে- তা এখনও তারা দেখেননি।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়া মিয়ানমারের ওই জনগোষ্ঠীর রাখাইনে ফেরার বিষয়টি যেন স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে হয়, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। আদ্রিয়ান এডওয়ার্ড বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই আন্ত্মর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে এবং এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্ত্মুত।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ার পরদিন ইউএনএইচসিআরের এ প্রতিক্রিয়া এলো।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা চার লাখের মতো রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরম্নর পর আরও সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত্ম পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
তাদের ফেরার পথ তৈরি করতে বৃহস্পতিবার নেপিদোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত্ম সোয়ে একটি সম্মতিপত্রে (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সই করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রম্নপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরম্ন করা এবং এজন্য যত দ্রম্নত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্ত্মর্জাতিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের শরণার্থী অধিকারবিষয়ক পরিচালক বিল ফ্রেলিক বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভস্ম হয়ে যাওয়া গ্রামগুলোতে বার্মা এখন তাদের উন্মুক্ত বাহুডোরে ফেরত নেবে এমন ধারণা হাস্যকর।’ তিনি আরো বলেন, ‘পাবলিক রিলেশনের একটি স্টান্টবাজিতে সমর্থন না দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এটা স্পষ্ট করা উচিত যে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্ত্মর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোনো প্রত্যাবাসন হবে না।’ফেরত যাওয়া ব্যক্তিদের ক্যাম্পে রাখার ধারণার ইতি টানতে হবে। এছাড়া জমিজমা ফেরত দেয়া এবং ধ্বংস করা বাড়িঘর, গ্রাম পুনর্গঠনসহ আরো অনেক শর্ত দিতে হবে।’
ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আন্দ্রে মাহেসিচ বলেন, ‘স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরের সম্পৃক্ততা থাকাটা প্রচলিত একটি চর্চা। যেকোনো ধরনের প্রত্যাবাসন চুক্তিকে আন্ত্মর্জাতিক মানদ- মানা হচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে ইউএনএইচসিআর।’ তারা এখনও চুক্তির বিস্ত্মারিত দেখেননি।মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, দুই দেশের তরফে পৃথক যে দুটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে গুরম্নত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আমলে নেয়া হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে, ভবিষ্যতে সহিংসতা থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, তাদের বৈধ পরিচয়ের সমস্যা মেটানো এবং তাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে কিনা সেটা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকারবিষয়ক পরিচালক চারমেইন মোহাম্মদ বলেন, জাতিসংঘ ও আন্ত্মর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই আলোচনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে। আর যখন কিনা বাংলাদেশে এখনও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল অব্যাহত রয়েছে তখন তাদের ফেরতের চুক্তি ‘প্রিম্যাচিওর’।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 5 =