Site icon Aparadh Bichitra

চরম শিক্ষক সংকটে রংপুর সরকারি কলেজ ॥ প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অর্ধেক ॥ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

জয় সরকার ঃ
চরম শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে উত্তরাঞ্চলের ঐহিত্যবাহী বিদ্যাপীঠ রংপুর সরকারি কলেজে। ফলে কলেজে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। এতে করে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সম্মান ও মাষ্টার্স কোর্সের ক্ষেত্রে এ সংকট সবচাইতে বেশি। প্রতিনিয়ত শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ঐহিত্যবাহী এই বিদ্যাপীঠটি তার ঐহিত্য ও গৌরব হারাতে বসেছে বলে আশংকা করছেন শিক্ষানুরাগীরা।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালের ২৫ জুলাই রংপুর কলেজ নামে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকে নাম হয় রংপুর সরকারি কলেজ। ১৯৯৩ সালে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। বর্তমানে কলেজটিতে এইচএসসি, ডিগ্রি পাস কোর্স, ১৪ টি বিষয়ে অনার্স এবং ৭ টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এ সকল বিষয়ে ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। তবে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবেন যারা তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। মাত্র ৬৫ জন। এমনিতেই সৃষ্ট পদের সংখ্যা কম। তার উপর বিভাগীয় প্রধান, মিটিং, কলেজ সম্পর্কিত কাজ, ব্যক্তিগত সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে একাধিক শিক্ষক ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে কলেজে নিয়মিত ক্লাস হয় না। এতে করে মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয় শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সেশনজট কমানো নীতির কারণে এক বছরের কোর্স নেমে এসেছে ৬ মাসে। ৭ মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে কোর্স সমাপ্ত হয় না। এ সকল কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিমত শিক্ষানুরাগীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভূক্ত কলেজগুলোতে যে সকল বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে নিয়মানুযায়ী সে বিভাগের জন্য ৭ জন শিক্ষক প্রয়োজন এবং যে সব বিষয়ে অনার্সসহ ¯œাতকোত্তর (মাষ্টার্স) রয়েছে সে বিভাগের জন্য ১২ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু এই কলেজের অনার্স কোর্স চালু থাকা কোনো বিভাগেই ৩/৪ জনের বেশি শিক্ষক নেই এবং অনার্সসহ ¯স্স্ত (মাষ্টার্স) কোর্স চালু থাকা কোনো বিভাগেই ৫/৬ জনের বেশি শিক্ষক নেই। যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক। কলেজ সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কলেজে শিক্ষকদের জন্য ৭৪টি পদ রয়েছে। এদের মধ্যে ৭টি পদ শূণ্য রয়েছে। শূণ্য পদগুলো হলো, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ১জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক ১জন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ১জন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক ১জন, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ১জন, দর্শন বিভাগের সকারী অধ্যাপক ১জন ও প্রভাষক ১জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের অন্যান্য বিভাগগুলোর তুলনায় সব থেকে খারাপ অবস্থা দর্শন বিভাগের। এই বিভাগের ৪টি বর্ষের প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুই জন। এর মধ্যে একজন বিভাগীয় প্রধান। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনো রকমে চলছে এ বিভাগের ৪টি বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান। অথচ এ বিভাগে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও ১জন প্রভাষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা বিভাগে রয়েছেন মাত্র ৩জন শিক্ষক। সেখানেও প্রভাষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া কলেজের অন্যান্য বিভাগগুলোর অবস্থাও শোচনীয়।
কলেজের বিভিন্ন বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, শিক্ষক সংকট, কলেজ বন্ধ থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নিয়মিত ক্লাস হয় না। বছরের শুরুতে দু-চারটি ক্লাস হওয়ার পর ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নির্ধারিত সময়ে কোর্স সমাপ্ত করতে হিমশিম খেতে হয়। দর্শন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী দুলাল মিয়া জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে এক ব্যাচের ক্লাস চললে বাকি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়ান। রসায়ন বিভাগের ছাত্র এসএম সুজন মিয়া জানান, বছরে ৩০ থেকে ৪০ দিনের বেশি ক্লাস হয় না। অথচ কমপক্ষে ৩০০টি ক্লাস হওয়ার কথা। যাঁদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে তাঁরা বাইরের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে সিলেবাস শেষ করেন। আর যাঁদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই তাঁরা ক্লাসের পড়া শেষ করতে পারেন না। তাঁদের ফলাফলও খারাপ হয়। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শ্যামল চন্দ্রও একই কথা বলেন।
কলেজের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আমরা ক্লাস নিতে আগ্রহী। কিন্তু শিক্ষক সংকটে তা সব সময়ে সম্ভব হয় না। তবে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়েও আমরা পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
এ ব্যাপারে রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কানিজ উম্মে নাজমা নাসরীন বলেন, আমাদের কলেজের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। আমরা সবসময় কলেজে ভালো পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আমাদের শিক্ষার্থী অনেক। সে তুলনায় শিক্ষক কম, সেটা ঠিক। কিন্তু শিক্ষকের পদের সংখ্যা কম হওয়ায় আমরা চাইলোও কিছু করতে পারি না। শিক্ষকের পদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে । আশা করি দ্রুত এ সমস্যার সমাধাণ হবে।