জমিতে চাষের জন্য উৎকৃষ্ট ফসল মরিচ

0
2873

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যের চাহিদা। খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না ফসলি জমি। তাই অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য উন্নয়ন করছেন অনেক কৃষক। দীর্ঘ দিন অনাবাদি বা কখনোই চাষ না হওয়া জমিতে সাধারণত সব ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। এসব অনাবাদি জমিতে চাষের জন্য উৎকৃষ্ট ফসল মরিচ।

২০১৪ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মরিচ চাষ ও উৎপাদন সম্পর্কিত নমুনা জরিপ করে। দেশব্যাপী এই জরিপে দেখা যায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মরিচ চাষ করেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৭ জন কৃষক (ন্যূনতম ১ শতাংশ জমি)। বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত ভাবে মরিচ চাষ করেন সর্বমোট ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৭ জন কৃষক। তবে আশার কথা হচ্ছে যত দিন যাচ্ছে তত মরিচ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। মরিচ উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, নাটোর, পাবনা, যশোর জেলার কৃষকরা। দেশের মরিচের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করেন এসব এলাকার কৃষকরা। কৃষকরা সাধারণত আবাদ করে থাকেন বালি, ঝুরি, বিন্দু, ইরি, মিঠা, বাওয়া, আকালি ইত্যাদি জাতের মরিচ। তবে, মরিচ চাষ লাভজনক হয়েছে উচ্চ ফলনশীল বারোমাসি বারি-১, বারি-২, বারি-৩ এসব জাতের মরিচ আসার পর থেকে। অত্যন্ত সহনশীল হয় এসব জাতের মরিচ গাছ। প্রতিটি গাছে সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০টি মরিচ হয়ে থাকে। প্রতিটি মরিচের ওজন হয় প্রায় ৩ গ্রাম। স্বাদ ও ঝালের দিক থেকেও এগিয়ে এসব উচ্চ ফলনশীল মরিচ। এসব জাতের মরিচ সাত থেকে আট দিন অপচনশীল থাকে কিন্তু অন্যান্য জাতের মরিচ তিন থেকে চার দিনেই নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা ও শুকনা মরিচের হার হয়ে থাকে ৪:১। যা অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। যার ফলে মরিচ শুকিয়েও লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। মরিচ ক্ষেতে ফল আসতে সময় লাগে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন। মরিচ সংগ্রহ করা যায় চার থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত। প্রতি  বিঘা মরিচ ক্ষেতে কৃষকের গুনতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বারোমাসি ফসল হওয়ার কারণে গাছ মরার সঙ্গে সঙ্গে আবারো রোপণ করা যায় মরিচ গাছ। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, যেসব উঁচু জমিতে সাধারণত ধান আবাদ হয় না, সেসব অনাবাদি জমিতে প্রথমে মরিচ চাষ করে ভালো সফলতা পান। তারপর থেকে ধানি জমিতেও মরিচের চাষ শুরু করেন। এই মরিচ ক্ষেতের নিতে হয় ব্যাপক পরিচর্যা। কারণ খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে মরিচ গাছ। মরিচ গাছের প্রধান রোগ হচ্ছে পিপড়ি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে পাতা কুঁকড়িয়ে নষ্ট হয়ে যায় মরিচ গাছ। তাই কৃষকদের লক্ষ্য রাখতে হয় এই রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গেই পাতা কেটে ফেলতে হয় এবং দিতে হয় কীটনাশক। প্রায় দুই বছর যাবৎ প্রায় ১১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেন মোকলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলের জমির তুলনায় দ্বিগুণ নজর রাখতে হয় মরিচ ক্ষেতের। পিপড়ি’র আঘাত হানলেই নিতে হয় ব্যবস্থা। পিপড়ি রোগে আক্রান্ত গাছ ২ থেকে ৩ দিনের মাঝে না কাটলে আক্রান্ত হয়ে যায় অন্য গাছ। রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ লাভলু বলেন, কৃষকরা যেটাকে পিপড়ি রোগ বলছেন এটা আসলে ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। সময়মতো কীটনাশক দেয়া এবং আক্রান্ত গাছের পাতা অন্য গাছের পাতার সঙ্গে স্পর্শ না করে তুলে পুড়িয়ে ফেলা এর একমাত্র প্রতিকার। মরিচ চাষে সফলতার আরেকটি কারণ বীজ নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় না কৃষকদের। তারা নিজেরাই খুব সহজে সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উৎপাদন করছেন উৎকৃষ্ট মানের বীজ। তবে, অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয় চাষীদের। ক্রেতার অভাবে মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায় মরিচ। কৃষকদের দাবি সরকারি ভাবে মরিচ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হলে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না তাদের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − fourteen =