৩০ জায়গায় চাঁদা দিতে হয় এক ট্রাক মাল আনতে

0
1320

কাঁচা বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান পর্যাপ্ত থাকার পরেও, খুচরা বাজারে হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সবজির দাম। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কিছু কিছু সবজির দাম বেড়ে কেজি প্রতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩০ টাকা। দাম বাড়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে অভিযোগ উঠছে অতি মাত্রায় চাদাবাজি ও নিয়মের বাইরে গিয়ে টাকা আদায়।

কারওয়ান বাজারের আড়ৎদার জালাল বলেন, ঢাকায় ১ ট্রাক মাল আনতে আমাদের ৩০ বার চাঁদা দিতে হয়। কারওয়ান বাজারে ঢোকার সময় পুলিশকে চাঁদা না দিলে তারা রেকার লাগিয়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করে দেয়। তাদের সাথে বাড়াবাড়ি করতে গেলে আমরা এখানে ব্যবসা করতে পারব না। অনিয়ম নিয়ে কথা বললে তার পরের দিনই আমাদের এখান থেকে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যেতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের নামে এখান থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয় কিন্তু রশিদে লেখা থাকে ২০ টাকা। এসময় তিনি অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বলেন আপনারা তো সব দোষ আমাদেরকে দিয়ে থাকেন, যে আমরাই সব কিছুর দাম বাড়াই, কিন্তু এসব নিয়ে কিছু লিখেন না। অথচ সবার সামনেই ঘটচ্ছে এই সব কিছু। সরকার এধরনের অন্যায় বন্ধ করতে পারলেই খুচরা বাজারে দামটা ঠিক থাকবে। কারওয়ান বাজারে আড়ৎদার সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক আফসান আলী বলেন, আমাদের বাজারের সাথে ৪টা রাস্তা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু মালামাল নামানোর জন্য বর্তমানে সেই রাস্তা সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। সিটি কর্পোরেশন ১ বছর আগে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে তা ইজারা দিয়েছে। যারা এ ইজারা নিয়েছে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অনেক, ফলে তাদের ইচ্ছা মতো টাকা তুলছে, কোনো ধরনের নিয়মকানুনের ধার ধারছে না তারা। অধিক মাত্রায় চাঁদাবাজির প্রভাব পণ্যের দামে পড়ছে এবং এই প্রভাব খুচরা বাজার পর্যন্ত পড়ছে। আমরা এই সবকিছু নিয়ে এক সময় প্রতিবাদ করে ছিলাম কিন্তু এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। এ সবকিছু নিয়ে ২০০৬ সালে আমাদের এক নেতাকে সন্ত্রাসী বানিয়ে হত্যা করেছে। কারওয়ান বাজার অনেক জটিল জায়গা। তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল বাজারে মাল ঢুকতে পারছে না, বাজারে মালামালের সরবরাহ অনেক কম। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, মালবাহী ট্রাক ভেতরে আসার আগেই রাস্তা থেকে মাল নামিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে রাস্তায় যানজট লেগে যাচ্ছে আর নাম হচ্ছে কাওরান বাজারের। অথচ সেই মাল বাজারের ভিতরে ঢুকছেই না। এতে আমাদের মালামালের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। সাধারণ আড়ৎদাররা ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছে না। চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি জানার জন্য কাওরান বাজারে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশনের কর অফিসে গেলে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। সরেজমিন দেখা যায় কারওয়ান বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো থেকে একজন চাঁদা তুলছে। তার কাছে চাঁদা তোলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই টাকা পার্কিং চার্জ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। এই টাকা কে নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কারো নাম বলতে চাননি এবং সেখান থেকে পালিয়ে যান। মহাখালি থেকে বাজার করতে আসা আবুল হোসেন বলেন, আমরা এখানে আসি কিছু কমের আশায়। রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে কিছুটা কমে পাওয়া যায়। তবে দিন দিন এখানকার দামটাও হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 + four =