চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে কয়েক শত কৃষকের আলুক্ষেত পাতা মোড়ানো (মোজাইক) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান। ফলে আলু চাষিরা ক্ষতির কবলে পড়ার আশংকা করছেন। জানা যায়, প্রতি মৌসুমের ন্যায় চলতি মৌসুমেও চন্দনাইশ এবং সাতকানিয়ার আলু চাষিরা যথানিয়মে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমদিকে জমিতে পুরোদমে আলু রোপণ শুরু করে। আলুর চারা গজিয়ে উঠার পর দেখা যায় প্রায় আলু ক্ষেতই পাতা মোড়ানো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
চন্দনাইশে চলতি মৌসুমে ৬৩০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে, চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া, হাছানদ–ী, দোহাজারী, চাগাচর, চন্দনাইশ পৌরসভা ও সাতকানিয়ার খাগরিয়া, নলুয়া, চরতি আমিলাইশ এলাকায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। গাছে আলু ধরার সময় ঘনিয়ে এলেই প্রায় সব আলুক্ষেত আক্রান্ত হয়ে পড়ে মোজাইক ভাইরাস নামে এক রোগে। এ রোগের কারণে আলু গাছের পাতাগুলো মুড়িয়ে গাছের সতেজতা কমে যায়। ফলে গাছে আলু ধরলে তা আকারে অনেক ছোট হয়ে যায়। মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় চলতি মৌসুমে আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না বলে আংশকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে কৃষক। মরা শঙ্খচরে প্রায় ৭০–৮০ ভাগ আলুর ক্ষেতে এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে বলে কৃষকেরা জানান। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই বৈরি আবহাওয়ার কারণে আলু চাষের ফলন ভালো না হওয়ায় ভালো নেই এ এলাকার কৃষকেরা। ক্ষেতে গাছ বেড়ে উঠার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভাইরাস। ফলে পচে মুড়িয়ে যাচ্ছে আলুর নরম কোমল পাতা। সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতিমধ্যে তাদেও ক্ষেতের ৬০ ভাগ আলু গাছের পাতা সতেজ নেই। এভাবে পুরো চরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আলু ক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। জমিতে আলু চাষ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে তাদের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এভাবে পুরো চরের চাষিরা ক্ষতির আশংকা করছেন। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসে জানানোর পর কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতে আলু ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। গত কয়েক বছর আগে আলু ক্ষেতে ব্যাপক আকারে এ রোগটি দেখা দিয়েছিল। চলতি মৌসুমে এ রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। চন্দনাইশের দোহাজারীর পৌর এলাকার কৃষক মো. আয়ুব জানান, তার ২ কানি জমির আলু ক্ষেত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা জানান, মোজাইক নামের একপ্রকার ভাইরাস আলু ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষেত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আলুর আকার ছোট হয়ে যায়। তারা এ সমস্যা সমাধানে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান। বিশেষ করে মাকড়সা দমন করার জন্য কৃষকদের এটোমাইট নামক ওষুধ ও বাহক পোকা দমনে টিডো অথবা ইমিটাফ নামক ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শামীম হোসেন চলতি মৌসুমে আলু ক্ষেতে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে আলু চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কীটনাশক ব্যবহারের পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান।