Site icon Aparadh Bichitra

দরকষাকষিতে মালিক-শ্রমিক মজুরি নির্ধারণ নিয়ে

পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় এরই মধ্যে চতুর্থ নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের মাধ্যমে নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে দরকষাকষিতে যাচ্ছে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। ন্যূনতম মাসিক মোট মজুরি হিসেবে ১৬ হাজার টাকা দাবি করে আসছে শ্রমিকপক্ষ। একে অস্বাভাবিক রকম বেশি বলে মনে করছে মালিকপক্ষ। মজুরি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে চলতি সপ্তাহে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

দেশের পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট একাধিক শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবে বিজিএমইএ। এরই মধ্যে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে বৈঠকের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। প্রথম বৈঠকটি হবে আগামী বৃহস্পতিবার। এটি হবে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সঙ্গে। বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা শ্রমিক ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে তিন থেকে চারটি বৈঠক করব। সেখানে নিম্নতম মজুরির বিষয়ে মতামত চাওয়া হবে। পাশাপাশি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থাও তাদের অবহিত করা হবে। এ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, সক্ষমতা ও শ্রমিকের জীবনমানের বিষয়গুলো দুপক্ষই যদি অনুধাবন করতে পারে, তাহলে মজুরি কাঠামো নির্ধারণে তা সহায়ক হবে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে বৈঠকের কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা। তবে মজুরি বোর্ড গঠনের পর পরই যেহেতু বৈঠক, তাই সেখানে মজুরি নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করছেন তারা। আইবিসির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, এ বৈঠক হবে মজুরি নিয়ে দরকষাকষির একটি অংশ। আইবিসির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি মাসিক ১৬ হাজার টাকার দাবি জানানো হবে। প্রতি বছর ডিসেম্বরের দিকে পোশাক শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় মজুরি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। মজুরি বোর্ড গঠনের সময় শ্রমিকদের আন্দোলনের ব্যাপ্তিও বেড়ে যায়। এ অসন্তোষ এড়াতে মজুরি বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে গত ৮ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এতে সাড়া দিয়ে বোর্ড গঠনে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নাম চেয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। গত ২ জানুয়ারি পোশাক খাতের প্রায় অর্ধশত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম মন্ত্রণালয়। এরপর ১৪ জানুয়ারি বিজিএমইএ প্রতিনিধি ও গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তারা। বৈঠকের পর পোশাক শিল্পের চতুর্থ মজুরি বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন বোর্ডে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। শ্রমিকদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সামছুন্নাহার ভূইয়া। মজুরি বোর্ড ঘোষণার দিন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছিলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় আন্দোলনের পর আমরা মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেছি। আমরা মনে করেছি আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। কারণ শ্রমিকরা আমাদের। আমাদের শিল্প থাকলে শ্রমিকের প্রয়োজন আছে। আবার যেহেতু দেশে শ্রমিক আছে, আমাদের শিল্পেরও প্রয়োজন রয়েছে। মালিকপক্ষ হিসেবে আমরা নিজেরাই যদি আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী একটা মজুরি কাঠামো দাঁড় করাতে পারি, সেটা সবার জন্যই ভালো। উল্লেখ্য, পোশাক শ্রমিকদের সর্বশেষ মজুরি পর্যালোচনা করা হয় ২০১৩ সালে। সে বছর অদক্ষ শ্রমিকের নিম্নতম মাসিক মূল মজুরি ৩ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।