ঐতিহ্যবাহী মধুপুর শালবন চরম বিপন্ন দশায়

0
956

দেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন ঐতিহ্যবাহী মধুপুর শালবন আজ চরম বিপন্ন দশায় পতিত হয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও স্থানীয় নৃ-জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গারোদের সরকারি জমিতে জমিদারি মনোভাবের ফলে এ বনের মোট পাঁচ ভাগের চার ভাগই উজাড় হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ কখনো দুর্বৃত্তদের সহায়তা করে থাকে, কখনো বা রহস্যজনক কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

বন অধিদপ্তর ও কয়েকটি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, হাজার বছরের প্রাচীন মধুপুর শালবন, ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চলের পর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন। এ বনকে দেশের মধ্যাঞ্চলীয় বনভূমি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এ বনের বিস্তৃতি গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও মোমেনশাহী জেলার অংশ জুড়ে। এক সময় রাজধানী ঢাকার কাঁটাবন পর্যন্ত এ বনের সীমানা থাকলেও আজ তা শুধুই অতীত, বইয়ের পাতায় লেখা ইতিহাস। সরজমিনে পরিদর্শন ও ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বন ধ্বংসের পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বা প্রভাবশালী ও স্থানীয় নৃ-জনগোষ্ঠী বিশেষ করে একশ্রেণির গারোর অনৈতিক বাসনা প্রধান ভাবে দায়ী। তাদের সঙ্গে অলিখিত সমঝোতায় টাকার বিনিময়ে দখলে সহায়তা করে একশ্রেণির বন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বন বিভাগের সৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের এখানে হয় “অবৈধ বাণিজ্যের” ভাগ নিতে হয়, নয়তো চুপ থাকতে হয়। স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধেও সংঘবদ্ধ গাছচোর ও ভূমিখেকোদের পক্ষপাতিত্ব করার এন্তার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ বলেছে, পেশাদার গাছচোর ও কাঠ পাচারকারীরা দিনের চেয়ে রাতের আঁধারে তাদের অপকর্ম সারলেও এসব গাছ ও কাঠ নিয়ে মজুদ করা হয় বন এলাকার স’মিলগুলোতে। আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে পুলিশ ও বন বিভাগের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে গাছচোরেরা বিশেষ ধরনের টোকেন ব্যবহার করে থাকে। মধুপুর বনের গাছ লোপাটের ‘চক্র কাহিনী’ এখন সবারই জানা থাকলেও তা ভাঙ্গার স্থায়ী উদ্যোগ নেই। এর নেপথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে লোপাটচক্রের গডফাদার সম্পর্কিত চাঞ্চল্যকর তথ্য। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে মধুপুর বন নিয়ন্ত্রণ করছেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সরোয়ার আলম খান আবু। গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় শালবন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিল বিএনপির সভাপতি মো. জাকির হোসেন সরকার এর লোকজন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রকও বদলায় বলে দৈনিক মানবজমিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে। আরো জানা যায়, মধুপুর শালবন এলাকায় গারো, কোচ ও বর্মন এই তিন সমপ্রদায়ের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস করলেও গারোরাই নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বেশির ভাগ গারো ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকেরা নিরীহ ও শান্তিপ্রিয়। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় এ মৃং দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, বন আমাদের মা, বন আমাদের সব। আমরা বন ধ্বংস করনবো- এটা হতেই পারে না। তিনি বলেন, বন বিভাগের এক ধরনের বিশেষ স্লিপের মাধ্যমে গাছচোরেরা দিনের বেলা বনের গাছ কাটছে আর রাতের বেলা ভ্যান, গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িতে করে তা পাচার করছে। এ ছাড়া একদিকে নিজের নামে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করছে, অন্যদিকে চারা রোপণ করার সময় ১০ টাকার চারা ১৫/২০ টাকা দেখিয়ে সরকারি তহবিল থেকে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 5 =