Site icon Aparadh Bichitra

আবার লোকসানে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়

দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রবণতায় সরকারের মাথাব্যথা বাড়ছে। গত সাড়ে তিন বছর মুনাফা করার পর দাম বাড়ার কারণে এবার লোকসানের বলয়ে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বেড়ে চলায় এই লোকসানের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে না। সরকারের মাথাব্যথার এটাই কারণ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছরের মধ্যে আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর কাজ চলছে।

মাস দেড়েকের মধ্যে শুরু হতে যাওয়া সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোই বেশি করে চালাতে হবে। ফলে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন তেল বেশি আমদানি করতে হবে। তাই বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে। বিপিসির সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের মধ্যভাগ থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় দুই বছর ছিল ৩০ থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে। কিন্তু দেশে দাম না কমানোয় বিপিসি ২০১৪-১৫ সালে ৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ৭ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালে ৪ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা মুনাফা করে। মাস দুয়েক ধরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭০ ডলারে উঠেছে। ফলে গত ডিসেম্বর মাসে বিপিসি মোট ২৫০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিপিসি প্রতি লিটার ডিজেলে চার টাকারও বেশি এবং প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে প্রায় ১০ টাকা করে লোকসান দিচ্ছে। তবে পেট্রল ও অকটেনে বিপিসির মুনাফা অব্যাহত আছে। কিন্তু পেট্রল ও ডিজেলের ব্যবহার অনেক বেশি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত লোকসানই হয় বিপিসির। হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে সর্বমোট প্রায় ৫৯ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ টন ডিজেল ও প্রায় ৯ লাখ টন ফার্নেস তেল। এ বছর মোট ৬১ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হবে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টনের বেশি থাকবে ডিজেল ও ফার্নেস তেল। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার বৃদ্ধির কারণেই তেলের আমদানি বাড়াতে হচ্ছে বলে বিপিসির সূত্র জানায়। এ ছাড়া বিপিসির সূত্র জানায়, তেলের আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে। বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কেনা বিদ্যুতের দামও পরিশোধ করতে হয় ডলারে। এদিকে তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি এই সময়ে ডলারের মূল্যও বেড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি যেমন বাড়তি লোকসানে পড়েছে, তেমনি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপরও চাপ তৈরি হচ্ছে। জানতে চাইলে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেলের যে দাম দেশে স্থির করে রাখা হয়েছে, তাতে ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার হলেও বিপিসির লোকসান হওয়ার কথা নয়। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে তাঁদের লাভ-লোকসানের ওপর একটা প্রভাব তো পড়বেই। ম. তামিম বলেন, তেলের দাম বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত সহনীয় হলেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং তা ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার হলে দেশের অর্থনীতি প্রচণ্ড চাপে পড়বে। এই বিপদের কথা আগে থেকেই বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সক্ষম হয়নি।