এখনো টগবগে চালের দাম

0
565

সরকারি গুদামে চালের মজুতের পরিমাণ ৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে।

বেসরকারি খাতের আমদানিও ২০ লাখ টনের ওপরে উঠেছে।

সরবরাহ বাড়লেও চালের দাম কমেনি।

দুই মাস ধরে মোটা চালের দর ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় ওঠা-নামা করছে।

গত এক মাসে চিকন চালের দর কিছুটা বেড়েছে।

সরকারের চালের মজুত নিয়ে যাঁরা চিন্তিত তাঁদের জন্য সুসংবাদ আছে। ভালো খবর আছে বেসরকারি খাতের আমদানি নিয়েও। দুই বছর পর সরকারি গুদামে চালের মজুতের পরিমাণ ৮ লাখ টন ছাড়িয়েছে। চাল ও গম মিলিয়ে তা ছাড়িয়েছে ১১ লাখ টন। বেসরকারি খাতের আমদানিও ২০ লাখ টনের ওপরে উঠেছে। আর চালের দাম নিয়ে যাঁরা চিন্তিত, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদটি থেকেই যাচ্ছে।

সরবরাহ বাড়লেও চালের দাম কিন্তু কমেনি। দুই মাস ধরে মোটা চালের দর ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় ওঠা-নামা করছে। আর গত এক মাসে চিকন চালের দর কিছুটা বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চালের দর বৃদ্ধি পেয়ে মান ভেদে ৫৪ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ও মাঝারি মানের চালের দর অপরিবর্তিত আছে। বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়। সব মিলিয়ে গত এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মানিত ফেলো এম আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এবারের আমন উৎপাদন ভালো হয়েছে। যে পরিমাণ চাল এখন দেশের বিভিন্ন গুদাম ও বাজারে আছে তাতে অবশ্যই মোটা চালের দাম ৪০ টাকায় নামার কথা। কেন তা নামছে না, তা গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা দরকার।

গরিব মানুষের কী হবে

মোটা চালের দাম ৪০ টাকার ওপর উঠে গেলে সরকার খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচি চালু করে। দুই মাস ধরে মোটা চালের দর ৪৫ টাকার ওপরে রয়েছে, কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তর ডিসেম্বরে ওএমএস বন্ধ করার পর এখনো চালু করেনি। তবে খোলা বাজারে আটা বিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে ওই কর্মসূচি চালু করবে খাদ্য অধিদপ্তর। এর বাইরে আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে ১০ টাকা কেজি দরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হবে। ২০১৬ থেকে চালু হওয়া ওই কর্মসূচির শুরুতেই দরিদ্র মানুষকে বাদ দিয়ে সচ্ছল মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত করা সহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় নতুন তালিকা তৈরি করে। কিন্তু সরকারি গুদামে চালের মজুত কম থাকায় গত সেপ্টেম্বরে ওই কর্মসূচি স্থগিত করেছিল সরকার। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমন চাল সংগ্রহ চলছে। এর আগে আমরা ওএমএস চালু করার পর তেমন একটা সাড়া পাইনি। এখনো আমরা চালের মজুত বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি, যাতে প্রয়োজনের সময় তা সরবরাহ করা যায়। প্রয়োজন মনে হলে ওএমএস চালু করব। এ ছাড়া মার্চ-এপ্রিলে আমরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।’ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) চলতি মাসে বিশ্বের খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা ১৬টি দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে ৭টি দেশকে উচ্চঝুঁকি ও ৯টিকে মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিতে আছে বলে হুঁশিয়ারি করে বলেছে, এই দেশগুলোতে প্রধান খাদ্যের দাম বেড়ে বিপুল পরিমাণ গরিব মানুষ বিপদে আছে। উচ্চঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাম যৌথভাবে রয়েছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে এই খাদ্য-সংকট দেখা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি বিপজ্জনক অবস্থায় থাকবে। তাই গরিব মানুষের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ সতর্ক করে দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন চালের দাম যা আছে তা মার্চ-এপ্রিলে গিয়ে কিছুটা বাড়তে পারে। সে সময় গরিব মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে চাল সরবরাহ করা জরুরি। তবে সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী মনে করেন ওএমএস বন্ধ করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নামে ১০ টাকায় চাল বিক্রির যে কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে তা যতটা না গরিব মানুষদের জন্য, তার চেয়ে বেশি নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই চাল যতটা না গরিব মানুষ পাবে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাবেন। এতে দারিদ্র্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই গত কয়েক মাসে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ গরিব হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 3 =