কৃষকরা বেছে নিয়েছেন বিদেশী ফুল গ্লাডিওলাস

0
1422

ধান চাষে উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ কারণে নিশ্চিত লাভের ফসল হিসেবে ফরিদপুরের কৃষকরা বেছে নিয়েছেন বিদেশী ফুল গ্লাডিওলাস। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই গ্লাডিওলাসসহ অন্যান্য ফুলের চাষ বাড়ছে। ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ফরিদপুর সদর, মধুখালী ও নগরকান্দা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়েছে।

চলতি বছর প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত ফুল এখানেই বিক্রি হয়। তিনি আরো জানান, ফরিদপুর জেলার মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য উপযোগী এবং অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে ফুল চাষ বাড়ছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের কৃষক মোসলেম উদ্দিন ধান রোপণ করে ধারাবাহিক ক্ষতির মুখে পড়লে তিন বছর আগে ওই জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন গ্লাডিওলাস। জমির পরিমাণ ছিল এক একর। প্রথম বছরেই ভালো মুনাফা পাওয়ায় পরের বছর তিন একর জমিতে ফুল চাষ করেন। ব্যাপক সাফল্যের পর এ বছর সাত একর জমিতে ফুল চাষ করেছেন মোসলেম উদ্দিন। তার ফুল স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকার শাহবাগেও যায়। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেক চাষী ও বেকার যুবক ফুল চাষ শুরু করেছেন। একই এলাকার বিল্লাল হোসেন, হযরত আলী, আনোয়ার হোসেন জানান, তারাও ফুল চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। অনেক চাষী গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি গাঁদা ও গোলাপ ফুলের চাষও করছেন। চলতি বছর সফল ফুলচাষী বিল্লাল হোসেন শহরতলির পিয়ারপুরে দুই একর জমিতে করেছেন গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলের চাষ। বর্তমানে বিল্লাল হোসেনের ক্ষেত হলুদ, সাদা, লাল ও গোলাপি রঙের গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলে ভরে গেছে। তিনি জানান, বিভিন্ন দিবসকে লক্ষ করে ফুল চাষ করা হয়। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। বর্তমানে প্রতিটি গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বিশেষ দিবসগুলোয় দাম বেড়ে যায়। এলাকার পথিকৃৎ ফুলচাষী মোসলেম জানান, এক বিঘা জমিতে ফুল চাষ করতে খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ ফুল বিক্রি করা যায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। এছাড়া বীজ বিক্রি করেও ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আবুল বাসার মিয়া বলেন, সদর উপজেলার মল্লিকপুর, পিয়ারপুর, শিবরামপুর, হাটগোবিন্দপুর, পরানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুল চাষ হচ্ছে। চাষীদের ফুল চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ প্রণোদনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × three =