নতুন আইজিপি দায়িত্ব নিলেন

0
9423

নবনিযুক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, কোনো গোষ্ঠী যদি মনে করে বিশৃঙ্খলা করে তারা তাদের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে তাহলে তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী। অতীতে দেশের সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা দেশ ও জাতির নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কাজ করে গেছে। এই অঙ্গীকার যেমন তাদের আগেও ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ পুলিশ সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বাঙালির উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব দিয়েছেন সেই দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করবো এই অঙ্গীকার আমার রয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের সদ্য বিদায়ী আইজিপি একেএম শহীদুল হকের ‘বিদায়ী সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিদায়ী আইজিপি একেএম শহীদুল হকের গতকাল ছিল শেষ কার্যদিবস। তিনি দুপুরের পর পুলিশ সদর দপ্তরে আসেন। বিদায়ী সভার পাশাপাশি তিনি মিডিয়া সেন্টারে আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। পুলিশের একটি দল নতুন আইজিপি ও বিদায়ী আইজিপিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের সদস্যরা তার গাড়ি রশি দিয়ে টেনে সদর দপ্তরের সীমানার বাইরে নিয়ে গিয়ে তাকে বিদায় দেন। সদ্য নিয়োগ পাওয়া আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশের পেশা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটা মেনে নিয়েই আমরা সর্বক্ষণ কাজ করি। আজকের দিন এবং আগামীকালের দিন একই রকম যাবে না। দুইদিন দুই রকম ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে। এটাই বাস্তব কথা। আমার দীর্ঘ ৩২ বছর পুলিশিং জীবনে এটাই দেখে এসেছি। কাজেই কোনো দেশবিরোধী গোষ্ঠী বা কোনো চক্রান্তকারী গোষ্ঠী যদি ভেবে থাকে যে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে তাদের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যস্থলে যাবেন তাহলে তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের অবশ্যই মনে আছে বিদায়ী আইজিপি একেএম শহীদুল হক একটি ঝড় ও সীমাহীন নৈরাজ্যের মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ওই সময় একটি গোষ্ঠী দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ শক্তহাতে সেটি দমন করেছে। অতীতের ন্যায় পুলিশ সেই ভূমিকা পালন করবে। সেখান থেকে এক চুল পরিমাণও সরে আসবে না। এটাই পুলিশের অঙ্গীকার। আমরা যেমন অতীতে জনগণের সহযোগিতা নিয়ে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেছি। ভবিষ্যতেও যেই প্রতিকূল পরিস্থিতি আসুক না কেন আমরা আমাদের পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবো না। তিনি আরো বলেন, আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নেই। পুলিশের মধ্যে এখন বড় পরিবর্তন এসেছে। মেধাবী সব ছেলেমেয়েরা এই বাহিনীতে এসেছে। বিদায়ী সংবর্ধনায় একেএম শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের একটি কঠিন মুহূর্তে আমাকে আইজিপির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় আপনারা সবাই দেখেছেন, চক্রান্তকারীরা কিভাবে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছিল। রাষ্ট্রের সম্পদ পুড়িয়ে দিচ্ছিল। এ সময় অনেক পুলিশ নিহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। সেই সময়ে পুলিশ খুব শক্তভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো নাশকতাকারী, সন্ত্র্ত্রাসী ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে ছাড় দেয়নি। পুলিশ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিল। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া আইজিপির প্রতি আমার পরামর্শ দেশবিরোধী কোনো চক্রান্তকারী যেন বাংলার মাটিতে ঠাঁই না হয়। পরে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে তিনি বলেন, আমার ৩২ বছর চাকরি জীবনে কোনো হতাশা নেই। আমি জনগণের ভালোবাসা পেয়েছি। পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সদস্য আমার এই কর্মজীবনে সহযোগিতা করেছে। নতুন আইজিপির সামনের চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নিয়োগ পাওয়া আইজিপির সামনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচন। গত নির্বাচনে একটি দেশবিরোধী চক্র চক্রান্ত করেছিল। পুলিশ তা রুখে দিয়েছে। আগামী নির্বাচনও সদ্য নিয়োগ পাওয়া আইজিপির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার, গাজীপুর জেলার এসপি হারুনূর রশীদ, মুন্সীগঞ্জ জেলার এসপি জাহেদুল আলম ও পুলিশ সদর দপ্তরের এডিশনাল এসপি মুক্তা ধর। তারা সবাই বিদায়ী আইজিপির আগামী জীবনের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + 6 =