Site icon Aparadh Bichitra

গ্লাসশিল্পেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি

অন্যান্য পেশার মতো এখন গ্লাসশিল্পেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কাচ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বনির্ভর। কাচশিল্পে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকার কাচের বাজার আছে। প্রতি বছর এসব কাচের চাহিদা বাড়ছে। তাই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দেশেই এখন কাচ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ধাপে ধাপে এই কাচশিল্পের প্রসার ঘটছে।

দেশে এখন প্রায় সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, এর মধ্যে নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, এমইবি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, দ্য বেঙ্গল গ্লাস ওয়ার্কর্স লিমিটেড অন্যতম। দেশ-বিদেশের কাচের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে উৎপাদনের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হচ্ছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের। প্রতি বছর এসব শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানেরও। বর্তমানে এসব শিল্পে যারা কাজ করছেন এর বেশিরভাগই বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস থেকে ডিপ্লোমা ইন গ্লাস টেকনোলজি বিষয়ে পাস করা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি থেকে গ্লাস টেকনোলজি বিষয়ে এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাচ বের হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার এক মাসের মধ্যে এখানে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন গ্লাস টেকনোলজিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়।’ তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় প্রতিটি গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানেই আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।’ এখান থেকে পাস করে কাউকে বেকার থাকতে হয় না বলে জানান আইয়ুব আলী। এই কোর্সটিতে ভর্তি হতে হলে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় যে-কোনো বিভাগ থেকে জিপিএ-৩.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে এসএসসিতে গণিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩ থাকতে হবে। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এখানে আটটি সেমিস্টারে দুটি শিফটে ক্লাস নেওয়া হয়। প্রথম শিফট শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট, দ্বিতীয় শিফট শুরু হয় দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। কাচশিল্প উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় শ্রমিকের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগেও লোক নিয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এএইচএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে প্রকৌশলী, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, ইউটিলিটি, ভ্যাট, হিসাব, প্রশাসন, মানবসম্পদ, আইটি ইত্যাদি বিভাগে প্রতি বছর কমবেশি লোক নেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে বেশি গ্লাস টেকনোলজি বিষয়ে বিশেষ দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদের নিয়োগ করা হয়।’ দেশের অন্যান্য সব শিল্পের মতো এ খাতেও তরুণদের কাজের প্রচুর সুযোগ আছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন কাচ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানেও বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা এখন ভালো বেতনে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস থেকে পাস করেন আবিদ হোসেন। তিনি এখন দ্য বেঙ্গল গ্লাস ওয়ার্কস লিমিটেডে ফার্নেস প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, ‘কাচের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে, এর মধ্যে ফ্লোট গ্লাস, টেবিলওয়্যার গ্লাস, কনটেইনার গ্লাস ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয় উপসহকারী প্রকৌশলী (গ্লাস) পদে। এদের কাজ হলো কারখানার মেশিনারি অপারেশনাল কাজগুলোর তদারকি করা।’ কাচশিল্প উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ড ও বিভিন্ন জব পোর্টালের মাধ্যমে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। এছাড়া যারা এসব প্রতিষ্ঠানে নিজের পেশা গড়তে চান, তারা সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার দিয়েও নিয়োগ পেতে পারেন। বর্তমানে দেশে ও বিদেশে একজন গ্লাস টেকনোলজিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের অনেক চাহিদা রয়েছে। চীন, দুবাই, জামার্নিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন এ দেশ থেকে লোক নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করে প্রথম অবস্থায় প্রতিষ্ঠানভেদে ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যায়। এছাড়া তিন থেকে ছয় মাস পর প্রতিষ্ঠানের বোর্ড কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বোনাস, ওভারটাইম, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ নানাধরনের সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন বলে জানান আবিদ হোসেন।