বিত্তবৈভবের লোভে মা বাবার প্রশ্রয়ে ট্যুরিষ্ট গাইড মহাপ্রতারক আরিয়ানের ফাঁদে রাজধানীতে বহু মেয়ের জীবন, সংসার ধ্বংস আফতাব নগরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট

0
3185

প্রতারণা নতুন কোন ঘটনা নয়। রাজধানী সহ সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটেই চলছে। শোবিজের নামে, ট্যুরিজমের নামে অনেক আগে থেকেই এ ধরনের প্রতারণার খবর পত্রপত্রিকায় প্রচারের খবর আমরা সকলেই কম বেশী অবগত। টাঙ্গাইলের অধিবাসি এই তরুন বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এলাকায় পরিচিত। আরিয়ানের মা এই প্রতারণায় প্রশয় দিচ্ছে বলে টাঙ্গাইলের এলাকাবাসি জানিয়েছে। মেয়েদের পটাতে ফটু আরিয়ানের এখন ব্যবসায়ে পরিনত হয়েছে। আর এই অপকর্ম করতে করতে আরিয়ান এখন অন্ধকার জগতের আরো নানা অধ্যায়ে সিদ্ধহস্ত।

 

 

অপরাধ বিচিত্রার ঈগল টিম অনুসন্ধানে গিয়েছে টাঙ্গাইলে আরিয়ানের বাবা মায়ের পারিবারিক এলাকায়। সেখানে অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধান চলছে। আরিয়ার ওরফে সোহাগ ওরফে রাসেল এক এক সময় এক এক নামে সে পরিচিত। ইয়াবা, নারি পাচার, সাপ্লাই, বিদেশী মদের ব্যবসা সহ অন্ধকার জগতের নানা ব্যবসায়ের মাষ্টার মাইন্ড এই ছেলে। অবাক করার মত বিষয় হচ্ছে বাবা ও মাই নাকি এসব কাজে বেশ সহায়তা করে থাকে। দেখুন আরো চাঞ্চল্যকর অজানা তথ্য।

রাজধানীতে মডেল তারকা বানানো, ভুয়া বিয়ের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মুলহোতা কাওসার আহম্মেদ খান সোহাগ ওরফে আরিয়ানের বিরুদ্ধে ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সহ মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, জুয়ার আসর, দেহ ব্যবসার দালালী সহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার শেল্টারে আরিয়ান এতটা বেপরোয়া গতিতে এসব অপকর্ম চালিযে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা তার কাছে কোন পাত্তা পায় না এবং কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পায় না। তাছাড়া প্রতিবাদ করেও কোন সুবিধা করতে পারেনা। কেননা প্রতিবাদ করতে গেলে আরিয়ান ভুক্তভোগি ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের বিয়ের পরবর্তী তার সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হুমকি সহ প্রাননাশের হুমকি দিয়ে রাখে। লোকলজ্জা ও মানসম্মানের কথা চিন্তা করে ধনাঢ্য পরিবারের অভিবাবকরা মোটা টাকার বিনিময়ে আরিয়ান সিন্ডিকেটেরে সাথে সমঝোতা করে। কিন্তু তাতেও আরিয়ান তাদেরকে নিঃষ্কৃতি দেয়না। যখন তখন তাদের নিকট মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে মানসম্মান নষ্ট করার জন্য নিকট আত্মীদের কাছে ঐ সমস্ত আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও গুলো পৌছে দেয়। পরে ভুক্তভোগি পরিবার গুলো বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দেয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ইচাঈল গ্রামের লিয়াকত আলী খানের প্রতারক পুত্র কাওসার আহম্মেদ খান সোহাগ ওরফে আরিয়ান খান। তবে আরিয়ান নামেই ফেসবুক সহ শোবিজ জগতে সে বেশী পরিচিত। মডেল নায়িকা বানানো, বিভিন্ন লোকেশনে দেশি বিদেশী পর্যটকদের মেয়ে মানুষ সাপ্লাই দেয়া, সুন্দরী রমনী দ্বারা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ইয়াবার চালান পাচার করা সহ ভারতে নারী পাচার করা তার পেশা ও নেশা বলে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন। আরিয়ান দেখতে কিছুটা সুদর্শন। কথা বলে খুব মিষ্টি ভাষায়। ফেসবুকে রয়েছে তার একাদিক আইডি। বিভিন্ন ছবি নায়িকা, মডেল তারকা, পরিচালকদের সাথে তার রয়েছে হট সম্পর্ক এমন গল্প হরহামেশাই শোনা যায় তার মুখে। ৫ মিনিট কথা বলে যে কোন মেয়েই তার সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক করতে চাইবে। আর এটাই আরিয়ানের প্রধান কৌশল। আরিয়ান প্রথম ধাপে ধনাঢ্য পরিবাররের বিবাহিত অবিবাহিত যেকোন মেয়েকে টার্গেট করে তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে বন্ধুত্ব করে নেয়। পরে তাকে ফেসবুকে গ্রুপের সদস্য করে। আর ফেসবুকের সুত্র ধরে হায় হ্যালো করে করে কিছু দিন পার করে এবং খুব ব্যস্ততা দেখায় আর মাঝে মধ্যে মেয়েদের আজগবী গল্প শুনিয়ে নিজের প্রতি কিছুটা দুর্বল বানিয়ে বন্ধত্বটাকে গভীর করে তুলে। এসময় সে ভুলেও কারো সাথে মিস বিহেভ বা খারাপ আচরন করেনা। এভাবে এক সময় ঢাকা শহরের নামি দামি ড্যান্স ক্লাব, মদে বার ও জৌলশপুর্ন রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রন করে তাদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়ে বন্ধুত্ব সম্পর্কটাকে আরো বেশী গভীর করে তুলে। স্বাভাবিক নিয়মেই মেয়েরা তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েরা একটু আনন্দ বিলাসি হওয়া তারা আরিয়ানের পাতানো ফাঁদের জালে খুব সহজেই পা দিয়ে আটকা পড়ে। আরিয়ানের ভদ্র আচরনের তারা বুতে পারেনা তারা কোন জালে বন্দি হচ্ছে। আর যখন বুঝতে পারে তখন তাদের বেরিয়ে আসার কোন সুয়োগ থাকেনা। আরিয়ানের প্রতারণার জালে আটকা পড়ে প্রথমে হারায় সতীত্ব, পরে হারায় টাকা আর টাকা। প্রথম পর্যায়ে আরিযান মেয়েদের সাথে এমন ভদ্র আচরন করে যেন সে ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারেনা। একটা মেয়েকে বশে আনার জন্য সে দীর্ঘ সময় ধর্য্য ধরে তার পিছনে ২/৩ লাখ টাকা খরচ করে ২০/৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে আনার জন্য। আর একাজে বেশীর ভাগ সময়ই সে সফলতা লাভ করে। কারন আরিয়ান তার পিছনেই সময় ও অর্থ ইনভেষ্ট করে যে কিনা কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। একজন কোটিপতি বাবার মেয়ে যদি আরিয়ানের সাথে এক মুহুর্ত আড্ডা দিয়ে তার পকেটের ১০ হাজার টাকার বিল খুয়াতে পারে। তাহলে ঐ মেয়ে আরিয়ানের প্রেমে পড়বে না, এমন কোন অনিশ্চয়তা আছে কেউ মনে করে না। একটা মেয়ে যখন দেখে তার বন্ধু তার সাথে সব সময় ভালো আচরন করছে আর তার পিছনে লাখ টাকা খরচ করেছে বিনিময়ে কোন কিছু দাবী করছে না, তাহলে ঐ মেয়ে নিজের থেকেই ঐ ছেলের প্রতি ৯৫ ভাগ দুর্বল হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর মেয়েদের এই দুর্বলতাকে আরিয়ান খুব সহজেই কাজে লাগায় ২য় ধাপে। বিভিন্ন কলা কৌশল ব্যবহার করে আরিয়ান মেয়েদেরকে তার প্রতি দুর্বল করে। হাতে দামি মোবাইল, পরনে ফ্যাশনাবল পোশাক, সারাক্ষণ ব্যবসায়িক কথাবার্তা, ব্যস্ততা দেখানো, কাকে মডেল বানাতে হবে, কোথায় টুরিষ্ট ইভেন্ট এ্যারেঞ্জ করতে হবে এসব গল্প আর ব্যস্ততা দেখিয়ে মেয়েদেরকে সে আকৃষ্ট করে তুলে। আরিয়ান ১ম ধাপে এমন কিছু কান্ডঘটায় যা অবিশ্বাস্য। মেয়েদের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য সে যৌন চাহিদা মেটানোর সুযোগ পেয়ে ফিরে আসে। এতে তার প্রতি মেয়েদের বিশ্বাসের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এভাবে একটা সময় পার করে আরিয়ান ঐ মেয়েদের মানসিক চাহিদা অনুযায়ী মিউজিক গানের মডেল তারকা, র‌্যাম্প মডেল, বিজ্ঞাপন তারকা, টুরিষ্টদের জন্য ইভেন্ট এ্যারেঞ্জ করা, ড্যান্সার ইত্যদি সহ বিভিন্ন উচ্চাবিলাষি আইটেমে তারকা হওয়ার প্রস্তাব দেয়। আর মেয়েরা কোন কিছু চিন্তা ভাবনা না করে আরিয়ানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় এবং সে অনুযায়ী দৌড় ঝাঁপ শুরু করে। আর আরিয়ান শুরু করে ২য় ধাপ। এ কাজের জন্য সে মেয়েদেরকে বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যায়। যেখানে আগে থেকেই সেটিং করা তাকে সিসি ক্যামেরা। আরিয়ান তার টার্গেটের মেয়েকে তার নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে প্রচুর পরিমানে নেশা জাতীয় দ্রব্য জুসের সাথে মিশিয়ে খেতে দেয়। নেশা যুক্ত জুস খেয়ে মেয়েটা যখন অচেতন হয়ে পড়ে, তখন আরিয়ান তার শরীরের জামা কাপড় খুলে যৌন সঙ্গম করে এবং সেগুলো গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে রাখে। পরে যখন মেয়েটা বুঝতে আরিয়ান তার সতীত্ব হরণ করেছে। তখন সে বিমুর্ষ হয়ে পড়ে। কিন্তু আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে যা কিছু হয়েছে তা শুধু তাকে কাছে পাওয়ার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু তখনো তাকে ব্ল্যাকমেইল করার পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় না। পরবর্তীতে ঐ মেয়েকে বিয়ে বসার জন্য বাধ্য করে আরিয়ান। প্রবাসির স্ত্রী মিথিলাকে এমন ফাঁদে ফেলে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন আরিয়ান। আর হাতিয়ে নেন অন্তত ৩০ লাখ টাকা। এই কাজে আরিয়ানকে পুনাঙ্গ সহযোগিতা করে তার মা কুলছুম আক্তার ও বাবা লিয়াকত আলী খান। মিথিলার জীবনের ঘটনা সহ ডজন খানেক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে সাথে সম্পর্ক করে আরিয়ান কিভাবে, কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার সচিত্র প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করবে অপরাধ বিচিত্রা।
আরিয়ানের এ ঘটনা তার বাবা মাকে বার বার জানানোর পরেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে। এ স্ক্রংান্ত তথ্য প্রমান অপরাধ বিচিত্রার দপ্তরে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।
আরিয়ানের নামে কোর্টে ও স্থানীয় থানায় ভুক্তভোগিদের দায়ের একাদিক মামলা ও জিডি রয়েছে। আরিয়ানকে শেল্টার দিচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদ। আর বিভিন্ন মেয়েদের পারিবারিক তথ্য খুব সহজে আরিয়ানের জন্য সংগ্রহ করেন আরিয়ানের চৌদ্দ নম্বর স্ত্রী বা তার পার্টনার সানজিদা। আরিয়ান ফাদের একটা প্রধান ভুমিকা পালন করে সানজিদা। সানজিদা সহজ কৌশলে মেয়ের সাথে মিশে তাদের পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ এবং আরিয়ানের পরামর্শে বিভিন্ন ভিআইপি পুরুষ লোকদের সাথে আনন্দ ফুর্তি জন্য ব্যবস্থা করে। এতে করে সানজিদা হাতিয়ে নেয় টাকার মোটা অংশ ভাগ পায়। সানজিদা কিভাবে আরিয়ানকে সহযোগিতা করে সেই ভুক্তভোগিদের ঘটনা নিয়ে পরবর্তী পর্ব প্রকাশ হবে। এ দিকে সর্বশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে টাঙ্গাইলে এমপি রানার মেয়ের সাথে এ ধরনের সম্পর্কের কারনে আরিয়ানকে টাঙ্গাইলে আটক করে ভস্তায় ভরে তাকে কয়েকদিন আটকিয়ে রাখে । এমপি রানার মেয়ে থেকেও লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে তার মা বাবা স্থানীয় নেতাকর্মিদের কাছে মাপ চেয়ে মোটা অংকের জরিমানা দিয়ে আরিয়ানকে মুক্ত করেছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রা অনুসন্ধান চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 + sixteen =