প্রতিদিনই রক্তক্ষরণ হচ্ছে শেয়ারবাজার

0
1092

সরকারের শেষ বছরে বিনিয়োগকারীদের আশা ছিল শেয়ারবাজার আরও চাঙ্গা হবে। বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু এখন উল্টো তারা শঙ্কিত। প্রতিদিনই রক্তক্ষরণ হচ্ছে শেয়ারবাজারে। কারসাজিতে উধাও হয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি টাকার পুঁজি। গেল ৫ কার্যদিবসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চিত্রও প্রায় একই। মাত্র এ কয়েকদিনেই অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এর মধ্যে রোববার একদিনেই বাজারমূলধন কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত চার বছরের মধ্যে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৪ বছরে বাজারে এভাবে টানা দরপতন দেখা যায়নি। এর আগে এই সরকারের মেয়াদকালে দু’বার শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ঘটেছে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ছিল অন্তত সরকারের শেষ সময়ে বাজারে গতি আসবে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও চাঙ্গা হবে। কিন্তু গত সপ্তাহে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই বাজারে ছন্দপতন ঘটে, যা ধারাবাহিকভাবে চলছে। এখন আবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গুজবনির্ভর আতঙ্কে ভয় পেয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি দিচ্ছে। আবার অনেকে এ পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাকেও দায়ী করছেন। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) যথাযথ তদারকি না থাকা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেয়ার বিষয়টিও সমালোচিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলার রায়ের কথা রয়েছে। রায়ে খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে অস্থির হয়ে উঠবে দেশ- এমন গুজব রয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোয়। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে, এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কিত না হয়ে এ সুযোগে কম দামে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। বিশেষ করে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার কম দামে কেনার এমন সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। সংশ্লিষ্টদের দাবি, কারসাজি করেই এভাবে বাজার খারাপের দিকে নেয়া হচ্ছে। অতীতে অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এভাবে কম দামে শেয়ার কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা লুটছে সুযোগসন্ধানীরা। জানতে চাইলে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে- এ আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। এছাড়া এখন বাজারে অস্থিরতার অন্য কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের ভাষায় এটাকে বলা হয়, আউট সাইট শক (বাইরে থেকে অপ্রত্যাশিত কোনো দুর্যোগ)। ফলে ৮ তারিখের আগে বাজার স্থিতিশীল করার জন্য খুব বেশি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই। ওইদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির মূল্যকে একসঙ্গে বাজারমূলধন বলা হয়। সামগ্রিকভাবে শেয়ারবাজারের উত্থান-পতনের বিষয়টি বাজারমূলধন থেকেই সহজে মূল্যায়ন করা হয়। ২৯ জানুয়ারি ডিএসইর বাজারমূলধন ৪ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ৫ কার্যদিবসে তা কমে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বাজারমূলধন কমেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে মূল্যসূচক কমেছে ৩০৭ পয়েন্ট। প্রায় চার মাস পর ডিএসইর বাজারমূলধন কমে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে সোমবার ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ৮৬৯ পয়েন্ট। এরপর সোমবার সকালে ১১৬ পয়েন্ট কমে যায় সূচক। তবে ওইদিন আইসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাপোর্টে তা আবার টেনে তোলা হয়েছে। ফলে শেষ দিনশেষে সূচক কমেছে ১৮ পয়েন্ট। বড় বড় হাউসকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার বিক্রি করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ রয়েছে। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবেই বাজারে কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে। কারণ গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএসইর গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৪৩৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাজারে আতঙ্ক রয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি কী হবে। বিনিয়োগকারীদের বিবেচনা হল ওই রায়ে বড় কিছু হলে শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। শান্তি বিনষ্ট হবে। তিনি বলেন, এ আতঙ্ক অযৌক্তিক এবং অহেতুক। কারণ ওইদিন বড় কিছু হলেও বর্তমান বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, এর আগে মুদ্রানীতিতে নেতিবাচক কিছু আসতে পারে, ওই আতঙ্ক ছিল। কিন্তু আতঙ্ক কেটে গেছে। কারণ মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে রোববার জরুরি বৈঠক করে বিএমবিএ ও ডিবিএ নেতারা। বৈঠক শেষে ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে শীর্ষ ৩০ ব্রোকারেজ প্রতিনিধির বক্তব্য শুনেছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six − 5 =