অব্যাহত রোহিঙ্গা নিপীড়ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর হতে হবে

0
742

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে-জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এমন তথ্য দিলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, ইউএনএইচসিআর তাদের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যার ভিত্তিতে তথ্য দিয়ে থাকে; কিন্তু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে আগে আসা পুরনো রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের যোগসাজশে নির্যাতনের শিকার বহু রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ অস্বাভাবিক নয়। বছরের পর বছর যেভাবে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী, তাতে পালিয়ে আসা ছাড়া নিরীহ মানুষের কিছু করারও নেই।

 

আগে থেকেই নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। সর্বশেষ ২৫ আগস্ট ফের রোহিঙ্গা নিধন শুরু হওয়ার পর পালাতে গিয়ে পরবর্তী ৬ দিনে নাফ নদীতে ডুবেই মারা গেছেন ৫৫ জন। নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইনে মারা গেছেন কয়েকশ’। নির্যাতন-নিধনের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যুগের পর যুগ রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভাগ্যাহত রোহিঙ্গাদের পক্ষে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার পাশাপাশি মানবতার জন্যও তা লজ্জাজনক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উদ্বেগের বিষয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে উগ্র বৌদ্ধরাও রোহিঙ্গাদের নিধনের পাশাপাশি তাদের বাড়িঘর, চাষাবাদ, এমনকি মসজিদসহ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। আশার কথা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মুসলিম দেশ রোহিঙ্গা ইস্যু জাতিসংঘে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ মাসে সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা করার জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ তৈরির বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা নিপীড়নে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার বাংলাদেশ। তারপরও নিজেদের সীমিত সামর্থ্যরে মাঝেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়া সাময়িক এসব উদ্যোগ যে কোনো কাজে আসবে না তা অতীতে বিভিন্ন সময়ের ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলো একযোগে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভূমিকা রাখলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা যাবে বলে আমরা মনে করি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × five =