ঈদযাত্রায় সড়কপথে ভোগান্তির অন্ত না থাকলেও ট্রেনে ও বিমানে কিছুটা স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরতে পারতেন সাধারণ মানুষ। কমলাপুর রেলস্টেশনের স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ায় অনেক ট্রেনকে বিলম্বে ছেড়ে যেতে হয়। এতে বাড়িমুখী মানুষকে বিশেষত নারী ও শিশুদের তীব্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অন্যদিকে উড়োজাহাজ সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তিনটি উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়ায় অভ্যন্তরীণ সিডিউল ভেঙে পড়েছে বিমানের। ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরার চাপের সময় ট্রেন-বিমানের এমন বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঈদযাত্রায় সড়ক ও রেলপথে ভোগান্তি, যানজট, গাড়ির সিডিউল বিপর্যয় নতুন নয়।
এবার ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে বিমানের বিপর্যয়। এতে আকাশপথের অনেক যাত্রী ঈদ করতে আদৌ বাড়ি যেতে পারবেন কিনা সে দুশ্চিন্তায় পড়লেও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা প্রশ্নাতীত নয়। প্রতিবছরই একই অবস্থা বিরাজ করলেও পরিস্থিতির কেন কোনো পরিবর্তন নেই? বলার অপেক্ষা রাখে না, একেবারে শেষ মুহূর্তে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের দৌড়ঝাঁপ, খানাখন্দ ভরাটের উদ্যোগে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ঈদযাত্রা শুরুর অন্তত এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে। উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার বাসিন্দাদের যানজটে পড়তে হচ্ছে অন্তত ২ থেকে ৫ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা পৌঁছতে ৭-৮ ঘণ্টার জায়গায় ১০-১২ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। মেঘনা-গোমতী সেতু সরু হওয়ার কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়ে ২ থেকে ৬ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীদের। বছরের পর বছর একই সমস্যায় কেন মানুষকে ভুগতে হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। মোটা দাগে যে কয়টি সমস্যা দীর্ঘ যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তা হল-অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা সড়ক, সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করতে না পারা, সড়কে চাঁদাবাজি, পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অপর্যাপ্ত উপস্থিতি, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও বেপরোয়া চাঁদাবাজি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হলে এসব সমস্যা মোকাবেলা করা কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মেঘনা-গোমতী সেতু সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভাঙা সড়ক, ট্রেন-বিমানের কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে ঈদের ছুটির অন্তত এক মাস আগে থেকে সমন্বিত পর্যবেক্ষণ এবং স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন যাত্রীদের স্বস্তির ঈদভ্রমণ দিতে পারে।