কোমায় স্মার্টকার্ড প্রকল্প ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

0
678

বহু ঢাকঢোল পেটানো স্মার্টকার্ড প্রকল্প এক ধরনের কোমায় চলে গেছে বলা যায়। ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি মানুষের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার শর্তে ফরাসি কো¤পানি অবার্থুর টেকনোলজিসের (ওটি) সঙ্গে চুক্তি করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু চুক্তির মেয়াদের অতিরিক্ত এক বছরেও অর্থাৎ চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ ৭০ হাজার বা ২.৮৬ শতাংশ স্মার্টকার্ড পৌঁছেছে মানুষের হাতে। স্মার্টকার্ড প্রকল্পের শম্বুক গতি নিয়ে যখন সবাই হতাশ, তখন আবার এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে স্মার্টকার্ড প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম। জানা যায়, ফরাসি কো¤পানি ওটির অবহেলা, চুক্তি লঙ্ঘন, সাব-কন্ট্রাক্টে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করানো ও অসহযোগিতার কারণে বহু কাক্সিক্ষত ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশর অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পটি এখন মৃতপ্রায়। আরও উদ্বেগের বিষয়, প্রকল্পের মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ করে মোট ব্যয় ৮১৬ কোটি টাকার অর্ধেক ৪০৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ওটি।

 

প্রশ্ন হল, যেখানে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময় দিয়েও আশানুরূপ কাজ পাওয়া যায়নি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আচরণও সন্তোষজনক নয়, সেখানে অর্ধেক বিল কো› যুক্তিতে বিদেশি কো¤পানিটিকে পরিশোধ করা হল? এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বিদেশি কো¤পানির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, সময়ক্ষেপণ, টালবাহানা, শর্তভঙ্গ ও চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। মালয়েশিয়ার একটি কো¤পানির সঙ্গে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি নিয়ে এবং বিভিন্ন বিদেশি কো¤পানির উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে প্রচুর সময় ও অর্থের অপচয়ের খেসারত দিতে হয়েছে দেশকে। আমরা মনে করি, দেশে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগসন্ধানীদের আশকারা ছাড়া বিদেশি কো¤পানির পক্ষে বড় ধরনের অনিয়ম ও অবহেলা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ওটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি তদন্তসাপেক্ষে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের অবহেলা ও কমিশন বাণিজ্যের মতো শুভঙ্করের ফাঁকি আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ বিদেশি কো¤পানিগুলো যদি অনিয়ম-দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়, তাহলে যে কেবল জনগণের করের অর্থ ও সময়ের অপচয় হয় তা-ই নয়, একইসঙ্গে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিতেও আঘাত আসে। সেক্ষেত্রে অনেকের ধারণা হবে, এ দেশে অনিয়ম করে পার পাওয়া যায়। ওটির অবহেলাই এর নজির। অন্যথায় একাধিকবার মেইল পাঠানোর পরও জবাব না দেয়ার মতো
সাহস একটি বিদেশি কো¤পানি পায় কীভাবে?
খবরেই বলা হয়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চুক্তি হওয়ার পর থেকে কাজে ধীরগতিসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে ওটি। সব ধরনের হার্ডওয়্যার রিপেয়ার ও রিপ্লেসমেন্টসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সেটা তারা করেনি। এমনকি কার্ড প্রক্রিয়াকরণসহ অন্যান্য কাজের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা; কিন্তু সেটাও করা হয়নি। সব ক্ষেত্রে সরকারকে অনেকটা জিম্মি করে অর্ধেক টাকা তুলে নেয় ফরাসি কো¤পানিটি। আমরা মনে করি, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় এবং অবহেলার কারণে দেশ ক্ষতির মুখে পড়ায় কো¤পানিটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করা যেতে পারে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বিদেশি কো¤পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বনের ক্ষেত্রেও জোর দিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five − one =