Site icon Aparadh Bichitra

ক্রমক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ সামাজিক অবক্ষয় রোধে পদক্ষেপ নেয়া হোক

দেশজুড়ে যেভাবে খুন, ধর্ষণ-নিপীড়ন, নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর আসছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগেরই বটে। কেবল পত্রিকাতেই নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ১০টি খবর ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে ধর্ষণের বিহিত না করে উল্টো ধর্ষণের শিকার নারীকে শারীরিক নির্যাতনসহ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা, চুয়াডাঙ্গায় মা-মেয়েকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর ও মেহেরপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি শিউরে ওঠার মতোই ঘটনা। সালিশের নামে নিরীহ নারীদের অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, প্রভাবশালীদের স্বার্থরক্ষায় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মাতব্বরদের আইন হাতে তুলে নেয়ার মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। বর্তমান সময়ে সালিশের নামে আইন হাতে তুলে নেয়ার সাহস তারা কীভাবে পান তা আমাদের বোধগম্য নয়। এত গেল গ্রামের চিত্র।

 

অন্যদিকে নগরে উচ্চবিত্তদের মধ্যে নৈতিকতার অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বনানী ও পরীবাগের সাম্প্রতিক আলোচিত তিনটি ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। অবাক করার বিষয়, বনানীর রেইনট্রি হোটেল ও পরীবাগের ধর্ষক-নিপীড়করা যে কেবল পারিবারিক আশকারা পেয়েছেন তা-ই নয়, খোদ জন্মদাতা পিতা কর্তৃক তাদের অপকর্মে সহায়তা করার মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে। তরুণদের মধ্যে মাদক-ইয়াবার নেশা এবং ব্যবসাও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় তরুণ সমাজের মধ্যে একদিনে তৈরি হয়নি। প্রশ্ন হল, বাবা-মা ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা কেন তাদের সন্তানদের সৎ, চরিত্রবান, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন? কেন কিছু অভিভাবক খোদ সন্তানের অপকর্মের সহায়ক ও সঙ্গী হচ্ছেন? এর পেছনে অনেক কারণের মধ্যে যান্ত্রিক জীবন, বেপরোয়া ভোগবিলাস, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবকেই দায়ী করা যায়। মাদকদ্রব্য গ্রহণ, জঙ্গিবাদে জড়ানো, ধর্ষণ-নির্যাতন ও গ্রাম্য সালিশের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে হলে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগের বিকল্প নেই। সরকার বা পরিবার কেউই একা এটা করতে পারবে না। এজন্য অভিভাবককে সন্তানের প্রতি মনোযোগ ও সময় দেয়ার পাশাপাশি তার সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার একটি জাতির উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত। ফলে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিশেষ কর্মসূচি নেয়ার পাশাপাশি যে কোনো অপরাধের বেলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সালিশের নামে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা গেলে নিরীহ মানুষের ভোগান্তি ও প্রভাবশালীদের অন্যায়প্রবণতা কমাতে তা সহায়ক হবে।