Site icon Aparadh Bichitra

খাদ্যশস্য সংগ্রহে বিপর্যয় বিকল্প ব্যবস্থা সমন্বিত ও জোরদার হোক

সরকার নির্ধারিত খাদ্যশস্য তথা ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে ১৫ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। এর মধ্যে ৭ লাখ টন ধান ও ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিল; কিন্তু সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪১ টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৭.১০ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ শতাংশই অনার্জিত রয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ না থাকা যথেষ্ট উদ্বেগের। তাই যে কোনো মূল্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও মজুদ পর্যাপ্ত রাখতে হবে। সরকার অবশ্য বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে, এটি ইতিবাচক।

 

জানা যায়, চলতি বছর হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে আগাম বন্যা, ব্লাস্ট রোগ ও দেশজুড়ে তীব্র মৌসুমি বন্যার কারণে বোরো এবং অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিরও ভূমিকা রয়েছে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অপূর্ণ থাকার পেছনে। এছাড়া হাওর অঞ্চলে বর্ধিত ত্রাণসেবা ও দেশজুড়ে কাবিখা-ভিজিএফ কার্যক্রমের কারণে সরকারি খাদ্য মজুদ তলানিতে ঠেকেছে। আপৎকালীন খাদ্য মজুদ ১০ লাখ টনের কাছাকাছি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা কম-বেশি ৪ লাখ টনে চলে এসেছে। এ অবস্থায় সরকারি খাদ্যশস্য মজুদ তলানিতে থাকা ও সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও চালের দাম নিয়ে কারসাজি করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা, খাদ্য মজুদ ঠিক রাখা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ যে কোনো সমস্যা মোকাবেলায় ১৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তির ৫০ হাজার টন চাল এসেছেও, বিষয়টি স্বস্তির। কারণ চাল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের চালবাজির নজির নেহায়েত কম নয়। সরকার অবশ্য বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিকে উৎসাহিত করতে এর শুল্ক প্রথমে ৩০ থেকে ১০, পরে তা-ও কমিয়ে ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। তবে এক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা থাকা দরকার। চাল যেহেতু আমাদের প্রধান খাদ্য উপকরণ, তাই এটির আমদানির ক্ষেত্রে কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তারা উৎপাদনে আগ্রহ হারালে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়বে। খাদ্যশস্য আমদানি, সংগ্রহ এবং উৎপাদনে ভর্তুকি সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের সব সময় সচেতন থাকা কাম্য।