স্বর্ণ চোরাকারবার সব গোপন তৎপরতার সন্ধান করতে হবে

0
717

স্বর্ণ চোরাচালান ও বিমানবন্দরে স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনা মাঝে মাঝে আলোচনায় এলেও এর পেছনে যে বড় ধরনের সিন্ডিকেট জড়িত, তা জানা গেছে আলোচিত একটি ধর্ষণ মামলার সূত্র ধরে আপন জুয়েলার্সের শোরুমগুলোতে অভিযান চালানোর পর। অন্তত সাড়ে ১৫ মণ স্বর্ণ আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা হলেও কো¤পানিটি মাত্র ৪২ কেজির মতো স্বর্ণ মজুদের ঘোষণা দেয়, তা-ও কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে তার কোনো সু¯পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। কেবল আপন জুয়েলার্সই নয়, অন্যান্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ সংগ্রহের পথ যে অস্বচ্ছ ও সন্দেহজনক তা বলাই বাহুল্য। শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বর্ণ চোরাকারবারিদের একটি চক্রের সন্ধান এরই মধ্যে পাওয়া গেছে।

 

এসব চোরাকারবারি আপন ছাড়াও অন্যান্য স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীর পক্ষে বিদেশ থেকে বিভিন্ন কৌশলে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, সরকারকে বড় ধরনের রাজস্ববঞ্চিত করে বছরের পর বছর অপকর্মটি করে এলেও বিষয়টি আরও আগে কেন আলোচনায় আসেনি সেটাই বড় প্রশ্ন। জানা যায়, ১৯ স্বর্ণ চোরাকারবারি নজরদারিতে রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময় বিদেশ থেকে স্বর্ণ এনে আপন জুয়েলার্সের কাছেই বিক্রি করেছেন। স্বর্ণ আনার জন্য সপ্তাহে তিনবার, এমনকি সকালে সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গিয়ে বিকালে ফেরত আসার ঘটনাও ঘটিয়েছে চোরাচালানিরা। অথচ তাদের বিদেশে কোনো চাকরি নেই, তারা যথেষ্ট স¤পদশালীও নয়। আরও উদ্বেগের বিষয়, এসব চোরাকারবারি বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তাদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘোষণাও দেয়নি। এভাবে নিয়মনীতি লংঘন করে বিদেশ যাওয়া-আসার পেছনে যে বড় ধরনের সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা মনে করি, কেবল চোরাকারবারি ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীরাই নয়, এর পেছনে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কাস্টমস কর্মকর্তা, পাইলট-বিমানবালা অনেকেই জড়িত থাকতে পারেন। এমন আশঙ্কা যে অমূলক নয়, বিভিন্ন সময় বিমানের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনাই তার উৎকৃষ্ট নজির। ফলে স্বর্ণ চোরাচালান ও চোরাকারবারিদের মূলোৎপাটন করতে হলে এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। কাস্টমস ও বিমানের কেউ জড়িত থাকলে তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এটা অজানা নয়, দেশে স্বর্ণালঙ্কারের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন সেটা বাড়ছেই। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বর্ণ আমদানির জন্য স্বচ্ছ একটি নীতিমালা তৈরি করা দরকার। তাহলেই কেবল সঠিক চ্যানেলে স্বর্ণ আসবে এবং সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি জুয়েলারি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। অন্যথায় নিজেদের স্বার্থে এ খাতের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা চোরাচালান ও অনিয়মের নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করবে এবং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাবে। সু¯পষ্ট নীতিমালা করার আগ পর্যন্ত স্বর্ণ চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কাস্টমস ও বিমান কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স করা যেতে পারে। ভিন্ন কারণে আলোচনায় আসায় কেবল আপন জুয়েলার্সকে ঘিরে চোরাচালানের তদন্ত করলেই হবে না, অন্য সব জুয়েলার্সের স্বর্ণ সংগ্রহের পদ্ধতিও খতিয়ে দেখা দরকার। একইসঙ্গে নিয়মনীতি মেনে বৈধ পথে যারা ব্যবসা করছেন তারা যেন ক্ষতিগস্ত না হয়, তা আমলে নিয়ে দ্রুত স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা করা এখন সময়ের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

14 + one =