হে নারী পর্দাই তোমাদের মুক্তির পথ                   

0
2122

মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনঃ অভিশপ্ত ইব্লিশ শয়তানের আহ্বানে যখন কোন নারী সাড়া দেয়, তখন ওই নারী নিজেকে সুসজ্জিত করে পর পুরুষের সামনে হাজির করে এবং প্রকাশ করে তার রুপ-যৌবন তখন ওই নারী হয়ে যায় পথভ্রষ্ট। শয়তানের কাজই হল- আদম সন্তানদের কুপথে বা খারাপ পথে নিয়ে যাওয়া। যে নারী কন্ঠশিল্পী বা নৃত্যশিল্পী হয়ে তার কন্ঠ এবং শরীর প্রদর্শন করে, তখন উপস্থিত পুরুষরা কেবল মাত্র তার গানই শোনে না,তার রুপ-যৌবন যেন গিলে খায়।

 

অভিশপ্ত শয়তানের কাজই হল- কোন আদম সন্তানকে লোভ-লালসা, অর্থ বা সুনামের আহ্বান জানিয়ে খারাপ পথে নিয়ে যাওয়া। আজ যেন সমাজে অশ্লীলতা আর বেলাল্লাপনার তুমুল প্রতিযোগীতা চলছে। আর এদেরকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে সমাজে বসবাসকারী প্রগতিশীলতার নামে বসবাসকারী কিছু পুরুষ। ওরা শয়তানের দলভুক্ত হয়ে অন্যদেরকেও দলে নিয়ে তাদের দল ভারী করে যাচ্ছে…….।    হাশরের ময়দানে এদের যে কি অবস্থা হবে, তা তারা একটুও ভাবছে না! অথচ কাল কেয়ামতের দিন ওরা একে অপরকে অস্বীকার করবে। ওদের স্থান হবে জাহান্নামে। ওই সময় ওদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। যে সকল মানুষ নিজে খারাপ পথে অগ্রসর হয়ে, অপরকেও খারাপ পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, তাদের ওপর মহান আল্লাহ্র তা’য়ালার লা’নত। ওরা নারী ও পুরুষকে রঙিন জগতের স্বপ্ন দেখায় ও বিলাসবহুল জীবনের কথা বলে……..!আজ কোন নারীকে ধর্মের কথা বললে, তারা রাগ করে বলে, ‘আমরা কি প্রগতি বিরোধী পথে যাবো? দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন আজও ব্যাকডেটে থাকবো?’ আজ নারীরা যে পোশাক  পড়ে সমাজে বা লোকালয়ে বের হয়, তা দেখে অন্যরা লজ্জা পায় কিন্তু ওরা লজ্জা পায় না!! ওরা  মনে করে শরীর প্রদর্শন করে চলাটাই সম্মানের। ওরা স্রোতের টানে চলতে চায় না। ওরা স্রোত বলতেই বুঝে খোলামেলা পোশাক পরিধান করে বন্ধু বা পর পুরুষের সাথে যেখানে মন চায়, সেখানে গমণ করা…..!      হায়রে স্বাধীনতা! আজকে অনেক নারী পুরুষের সাথে সমানতালে কাপড় বা পোশাক পড়ছে। ওরা এমন পোশাক পড়ে, তাতে শরীরের প্রায় অর্ধেকরও বেশি অংশ খোলা থাকে। ওরা নারীত্বের মহিমা ও গোপন সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করে নিজেদেরকে আধুনিকা হিসেবে জাহির করে। আবার অনেক নারী আছে, যারা তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে উল্কি এঁকে সভা, সেমিনার, রাস্তাঘাট বা বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। তারা আবার নিজেরাই একে অন্যকে উৎসাহিত করে। আবার অনেক নারী তাদের চুল ছোট করে পুরুষের মতো করে রাখে। শয়তান অনেক নারীকে বিপথে নিয়ে সু-সজ্জিত করে পুরুষের সামনে পেশ করে। তাদের চাল-চলন সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। শয়তানের আহ্বানে তারা এমন সাঁজ-গোজ করে, যা সম্পূর্ণ র্কোআন ও হাদিস বিরোধী। তারা নামে মাত্রই মুসলিম কিন্তু অন্য সব কিছু ইসলাম বিরোধী।  অথচ মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন, ‘তোমাদেরকে অবশ্যই নির্দেশ দেবো এবং তারা আল্লাহ্র সৃষ্টিকে বিকৃত করবেই। আল্লাহ্র পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করলে, সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’ ভ্রু সরু করা সম্পূর্ণই মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার লানতের কারণ। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ্ ইব্নে মাস্উদ (রা:) বলেন, ‘উল্কি চিহ্ন যারা নিজেরা আঁকে এবং আরেকজনকে এঁকে দিতে বলে, যারা ভ্রু সরু করে এবং কপালের চুল উপরে ফেলে, তারা আল্লাহ্ তা’য়ালার সৃষ্টির পরিবর্তনকারী। তাদের ওপর আল্লাহ্র রাসূল (সা:) অভিসম্পাত দিয়েছেন (আবু দাউদ শরীফ)।’  হাক্কানী উলামায়ে কেরামগণ ভ্রু সরু করা বা মুন্ডানোকে হারাম বলেছেন। এ রকম আরও অনেক ফতোয়া রয়েছে। নারী ও পুরুষকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন, ‘আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যে দয়াময়ের নিকট উপস্থিত হবে না। তিনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন, তিনি তাদেরকে গণনা করছেন এবং কেয়ামতের দিন তাদের সকলকেই আসতে হবে, তাঁর নিকট একা একা।’  আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, নারীরা সমুদ্রের মতো ভেসে যাচ্ছে। পর্দা তাদের কাছে একটা বড় বোঁঝা মনে হচ্ছে। পর্দাকে তারা ব্যাকডেট মনে করছে। তারা মনে করছে, খোলামেলা চলাটাই বাহাদুরী বা আধুনিকা। আর তাদেরকে উপস্থিত করছেন, সমাজের এক শ্রেণীর পুরুষরা। অথচ পর্দা যারা মেনে চলে, তারা আছে অনেকটাই বিপদমুক্ত এবং মহাসুখে। যারা পর্দার সাথে নিজেদের পরিচালিত করছে তারা যেমন সমাজে সম্মানিত হচ্ছেন, তেমনি কাল কেয়ামতের দিনেও তারা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে হবেন মহাসম্মানিত। শয়তানের কাজই হলো মানুষকে আল্লাহ্ ও রাসূলের পথ থেকে বিপথে নিয়ে আসা। তাই আজ যারা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে পর্দা প্রথাকে অবজ্ঞা করছে এবং নারীদেরকে পর্দা থেকে বাহিরে এনে আধুনিক নারী বানাতে চাইছে, তারা পবিত্র র্কোআন ও হাদিসের বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং এরা অবশ্যই শয়তানের শিষ্য বা অনুসারী। র্কোআন এবং হাদিসই আধুনিক। তাই র্কোআন ও হাদিস ব্যতিরেকে যারা আধুনিক হতে চায় বা আধুনিকতার ফর্মূলা দেয় তারা অবশ্যই শয়তানের অনুসারী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আধুনিক   এক দল শিক্ষিত নারী ও পুরুষ যারা নিজেরা আধুনিক সাঁজতে গিয়ে মূলতঃ ধ্বংসের দিকেই এগুচ্ছে। নারীকে বেশি করে আবেদনময়ী করে তুলে যারা সমাজে পরিচিত করতে চায়, তারা সত্যিকারের শয়তানের অনুসারী ব্যতীত অন্য কিছু নয়। তাই অতি দুঃখের সাথে বলতে চাই, ‘হে নারী! তুমি পুতুল খেলার পুতুল হয়ে নিজে ধ্বংস হয়ো না, আর অপরকেও ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করো না।’     পর্দাহীনতা ও উলঙ্গতা হল শয়তানকে অনুসরণ করে দোযখের পথ প্রশস্ত করা। পর্দা মানেই কোন কুপ্রবৃত্তিতাড়িত লোলুপ দৃষ্টিসম্পন্নদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এ সম্পর্কে পবিত্র র্কোআন পাকে র্এশাদ হয়েছে, ‘তারা যেন গ্রীবা বা বক্ষদেশ আবৃত করে কারো নিকট তার আবরণ প্রকাশ না করে।’ বলতে সামান্যতম দ্বিধা নেই যে, আজ নারীকে পণ্য করে ব্যবহার করে এবং ব্যবহারের পর তাদেরকে কলার ছোলার মত রাস্তাঘাটে বা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে! এ সম্পর্কে পবিত্র মুসলিম শরীফে আল্লাহ্র রাসূল বলেছেন, দুই প্রকার জাহান্নামীকে আমি দেখেছি। এদের এক দল রয়েছে গরুর লেজের মতো চাবুক, যার দ্বারা তারা মানুষকে চাবকাচ্ছে। আর একটি দল হল- মহিলাদের দল। যারা বাহ্যিক পোশাক পরিহিত হলেও বস্তুত তারা প্রায় নগ্ন।  যারা আকৃষ্ট হবে পুরুষের প্রতি এবং পুরুষদেরকেও আকৃষ্ট করবে নিজেদের প্রতি। তাদের মাথা হলো: বখতি উঠের কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ঘ্রানও পাবে না। যদিও তার ঘ্রান পাওয়া যাবে অনেক অনেক দূর থেকে। পর্দাহীনতা বা উলঙ্গপনা বা আধুনিকতা নারীকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা একটুও ভাবার বিষয় নয় কি…….?  এখন পথ দু’টি। একটি মহান আল্লাহ্র ও অপরটি হল শয়তানের। হে নারী এখন ভেবে দেখো। কোন পথে তোমার অগ্রসর হওয়া উচিৎ। পবিত্র আল্ র্কোআনে মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন- ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার মেয়েদেরকে এবং মুমিন স্ত্রীদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদেরকে জিলবাব দিয়ে ঢেকে বের হয়। তাহলে সহজেই তাদেরকে চেনা যাবে এবং তাদেরকে উত্যক্তও করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ সময় এসেছে সকল নারী-পুরুষের  মহান আল্লাহ্র কাছে পর্দাহীনতার অভিশাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা। এ সম্পর্কে র্এশাদ হয়েছে, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বক্ষদেশে ফেলে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইপো, ভগ্নিপুত্র, বাদী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো সামনে যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের সাঁজ-সজ্জা প্রকাশ না করার জন্য জোর পদক্ষেপে না চলাফেরা করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র কাছে তওবা করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’   হে আমার মায়ের জাত! নারী জাতি শোন আমার অনুরোধ- পর্দাহীনতা আর অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে ফানাহ্ চাও এবং র্কোআন-হাদিসের পথে নিজেকে সোপর্দ করো। এ পথই আসল পথ। এ পথে এ দুনিয়া ও পর জগতের শান্তি নিহিত। আমাদের একমাত্র কর্মই হল- আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের পথে নিজেদের পরিচালনা করা এবং অন্যদেরকে এ পথের সন্ধান দেওয়া। আল্লাহ্কে ভুলে গেলে মহাশাস্তি ভোগ করতে হবে। এ সম্পর্কে র্এশাদ হয়েছে, ‘যে আমায় স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং আমি কেয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উপস্থিত করবো। সে তখন বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় ওঠালেন? আমি তো অন্ধ ছিলাম না। আল্লাহ্ বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ আসার পর তুমি যেমন তা ভুলে গিয়েছিলে, আজ তেমনি তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে।’ লজ্জাই হচ্ছে  ঈমানের অঙ্গ। তাই নিজেকে সাঁজিয়ে নাও লজ্জার অলঙ্কার দিয়ে। ওই সকল শয়তানদের প্রত্যাখান করো, যারা পর্দাকে ব্যাকডেট বলে বা পর্দাকে ঝামেলা বলে। সামান্য অর্থের লোভে নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে নিজের জীবনের ধ্বংস ডেকে এনো না। তোমাদের সতীত্ব রক্ষা করে যদি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে পারো, তবেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে মহান আল্লাহ্র কাছে মহাপুরষ্কার। শোন হে নারী! যার লজ্জা নেই, তার ঈমানও নেই। আর যার ঈমান নেই, সে তো বেঈমান। বেঈমানের শাস্তি তো কঠিন থেকে কঠিনতর। আল্লাহ্ ও রাসূলকে ভুলে গিয়ে নিজেদের মনগড়া পথে চলতে গেলে মহাভুল হবে এবং এর শাস্তির কথা র্কোআন ও হাদিসে বার বার বলা হয়েছে। পাক কালাম র্কোআনে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন, ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর কোন অবকাশ নেই তাঁর নির্দেশ অমান্য করার। যে  আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ পরিশেষে সবাইকে একটা কথাই বলছি, আসুন আমরা সকলে তওবা করি, আমাদের রবের কাছে। বলি- ‘হে আমাদের রব! আমরা অনেক পাপ করেছি, অন্যায় করেছি, জুলুম করেছি নিজেদের ওপর। শয়তান আমাদের প্ররোচিত করেছে, যা আমরা বুঝতে পারিনি। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করে দিন। হে আমাদের রব! আপনি ক্ষমা না করলে তো আমাদের কোন উপায় নেই।’ (আল্লাহ্ আমিন)
লেখক- মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক। মোবাঃ ০১৭১০-৮৮৩৪১৩,   ই-মেইল: লধযধহমরৎযড়ংংধরহ৮৪৩১@মসধরষ.পড়স

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + one =