Site icon Aparadh Bichitra

দৈনিক স্বপ্নপুরী লটারী স্বপ্ন ভাঙ্গছে নোয়াখালীর মানুষের

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে মেলার নামে চলছে জমজমাট জুয়া ও লটারীর নামে চলছে মানুষের পকেট কাটা। সেনবাগ উপজেলার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিক উল্যাহ বীর বিক্রয় স্টোডিয়াম প্রাঙ্গনে চলছে মাসব্যাপী আনন্দ মেলা। এর মাধ্যমেই “দৈনিক স্বপ্নপুরী” একটি কোম্পানি র‌্যাফেল ড্র দিয়ে লটারীর টিকেট বিক্রি করে নোয়াখালীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অসহায় হত-দরিদ্র মানুষকে মোটর সাইকেল, গরু, সিএনজি চালিত অটোরিকসা, হ্যান্ডসেটের মতো এসব আকর্ষণীয় কিছু পুরস্কারের লোভ দেখানো হচ্ছে। যাতে নিরক্ষর জনগোষ্ঠী সহজেই সচেতনতার অভাবে কর্তৃপক্ষের প্রলোভনে লটারীর টিকেট কিনে প্রতারিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটির আয়োজন করছে সেনবাগ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যার নেপথ্যে রয়েছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। ৮০টি সিএনজি বা অটোরিকসা দিয়ে মাইকিং করে জোর প্রচারণার মাধ্যমে চলছে এ আয়োজন। বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালীর বিভিন্ন মহাসড়কের ওপর দেখা যায় জোর প্রচারনার মাধ্যমে কয়েকটি সিএনজিতে লটারীর টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। যেখানে টিকেট কিনতে ব্যস্ত স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাও। এবং কি সারাদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে মেলায় আড্ডা জমাতে ব্যস্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।
লটারী ও জুয়া খেলার মাধ্যমে চক্রটি কৌশলে মানুষের কাছ থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিলেও নিশ্চুপ স্থানীয় প্রশাসন।
” লটারী বিক্রেতা এক জনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “আমাদের মোট প্রচারণা গাড়ি ৮০টি। প্রতিদিন আমরা আট-দশ হাজার টাকার লটারীর টিকেট বিক্রি করতে পারি। মোটামুটি জাকজমক ভাবেই চলছে মেলা। স্থানীয় একটি ডিশ লাইনও আমাদের মেলা প্রচার করে।”
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক একজন অভিযোগ করে বলেন, “এভাবে সচেতন মানুষদের চোখের সামনেই সেনবাগে এই মেলা থেকে স্বপ্নপুরি কোম্পানি এসে গরীব মানুষদের চুষে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। অথচ আমরা চুপ করে আছি!
একটি প্রচারণা গাড়িতে থাকা লোকদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, গাড়ি ভাড়া ১৫’শ টাকা আর অপারেটরের ৬’শ টাকাসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে ২৫০০হাজার টাকা খরচ হয় একটি গাড়িতে। যেখানে লটারীর টিকেট বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার। নিম্মে যদি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ও বিক্রি করা হয়, তবে প্রতিদিন ৮৪টি প্রচারণার টিকেট বিক্রির গাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা। এভাবে এক মাস চলতে থাকলে কত কোটি টাকা চলে যায় বোঝেন এবার!”
স্থানীয় আরেকজন লোক বলেন, “সময় যত বাড়ে ততই আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভ দেখানো হয়। প্রচার মাইকের সংখ্যাও বাড়ে। তাদের প্রচার মাইকের সংখ্যা হবে ১’শটি। পুরস্কার পাওয়ার আশায় এখানকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীও এ জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে।” এ প্রসঙ্গে স্বপ্নপুরি কোম্পানির দায়িত্বে থাকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কল সংযোগ মিলেনি।
তবে এই ব্যাপারে সেনবাগ থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, বিজয় মেলায় এইসব র‌্যাফেল ড্র পরিচালনা করা হয় না।
এদিকে বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের মীরআলীপুর গ্রামের মুল্লুক ময়দানে লটারীর নামে চলছে জুয়া। প্রতি রাতে এই মেলা থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। অনুমোদনহীন এই মেলায় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালালেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহার সাজু একদিনের জন্য মেলার অনুমতি নেন। গতকাল বুধবার বিকালে মেলা বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হরদম মেলায় জুয়া চলছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, মেলাতো গতকাল বন্ধ করে দিয়েছি এখন কি ভাবে মেলা চলবে। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা খানম জানান, সময় মতো মেলা বন্ধ না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, কোন মেলায় লটারী বা জুয়া খেলার খবর আমার কাছে নেই। আপনারা যেহেতু বলেছেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।