তবু দমে যায়নি তার স্বপ্ন

0
553

হেলেনা খাতুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়।

উপজেলার ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

হেলেনা পরীক্ষা দিচ্ছে পৌর শহরের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে।

জন্মগতভাবে দুই পা অচল হেলেনা খাতুনের। তবু দমে যায়নি তার স্বপ্ন। কখনো হামাগুড়ি দিয়ে আবার কখনো মায়ের সহযোগিতায় হুইলচেয়ারে চড়ে সে নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করেছে। সে এ বছর ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার বাড়ি উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। হেলেনা পরীক্ষা দিচ্ছে পৌর শহরের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে।

তার আসন দোতলার একটি কক্ষে। গতকাল শনিবার গণিত পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে, হেলেনা হামাগুড়ি দিয়ে দোতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। পেছনে পেছনে প্রবেশপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নামছেন তারমা ফজিলা খাতুন। পরীক্ষা শেষে কথা হয় হেলেনা ও তার মায়ের সঙ্গে। হেলেনা বলে, ছোটবেলা থেকেই তার পা দুটি অচল। বড় হওয়ার পরও শক্তি ফেরেনি পায়ে। স্কুলে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। শারীরিক অক্ষমতার জন্য পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার পড়াশোনা নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও তার কখনো মনে হয়নি সে পারবে না। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে স্কুল। শুরুর দিকে মা কোলে করে নিয়ে যেতেন। একটু বড় হওয়ার পর হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয় পরিবার। হুইলচেয়ারে করে একা একা স্কুলে যাওয়ার গোঁ ধরলেও মা কখনো একা ছাড়েননি। হুইলচেয়ারের হাতলে সব সময় থাকত মায়ের হাত। এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়ি থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে। বাড়ি থেকে ইজিবাইকে করে আসে সে। কেন্দ্রে প্রবেশের পর হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যায় নিজের আসনে। অনেকেই তাকিয়ে দেখে অদম্য হেলেনার মনের জোর। সদাহাস্যোজ্জ্বল মুখ হেলেনার। নিজের জীবনের স্বপ্ন কী জানতে চাইলে সে বেশ লজ্জা পায়। স্বপ্ন যদি পূরণ না হয়, এমন আশঙ্কায় বলতে চায় না নিজের স্বপ্ন। একপর্যায়ে হেসে হেসে বলে, এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে চাই। আপাতত এটুকুই স্বপ্ন।হেলেনার মা বলেন, মেয়ে পড়াশোনায় বেশ ভালো। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়া তার স্বপ্ন। বড় হয়ে ডাক্তার হবে মেয়ে। আবার মায়ের শঙ্কাও হয়। দেড় বছর আগে মারা গেছেন হেলেনার বাবা। ছয় ভাইবোনের সংসারে হেলেনার স্বপ্ন পূরণের পথে কোনো বাধা আসে কি না, এই শঙ্কা মায়ের মনে। হেলেনার স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, জেএসসিতে হেলেনা জিপিএ ৪ দশমিক ৮৫ পেয়েছে। শিক্ষকেরা আশাবাদী এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সে উত্তীর্ণ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − 3 =