ভুয়া পিএইচডি নিয়ে মালা খানের দাপট

0
1727

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া বলে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টারের কোনো বৈধ অনুমোদন না থাকায় মালা খানের পিএইচডি কোথাও গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিসিএসআইআরকে জানিয়েছে ইউজিসি। এ ছাড়া ওই ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সনদ বিক্রিসহ জালিয়াতির অভিযোগে ইউজিসি আদালতে মামলাও করেছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার কোনো ধরনের এখতিয়ার নেই বলেও জানায় ইউজিসি।

এদিকে বিসিএসআইআর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনেও মালা খানের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বিসিএসআইআরে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অবিশ্বাস্য কম সময়- মাত্র ১৫ মাসে মালা খান তথাকথিত পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার যে দাবি করছেন তা চরম অনৈতিক কাজ বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। এমনকি বিদেশি একটি প্রতিবেদনের হুবহু কপি থিসিসে লিপিবদ্ধ করেছেন মালা খান। ওদিকে বিসিএসআইআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সংস্থাটির বিজ্ঞানী সংঘের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে  সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। বিজ্ঞানী সংঘের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার এম ডি নুর-উস-সাদিক আদালতে রিটটি দায়ের করেন। ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি কেন অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিলা করা হবে না- জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রির জালিয়াতির ঘটনায় বিসিএসআইআরের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গঠন করা হয় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লাকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব হলেন বিসিএসআইআরের সচিব (উপসচিব) মো. খলিলুর রহমান ও কমিটির সদস্য ও পরিষদের পরিচালক (গবেষণাগার) ড. হুসনা পারভীন নূর। তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর বিগত ২/৩ বছর আগে মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না জানতে চেয়ে কমিটির সদস্যসচিব মো. খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে। ওই চিঠিতে মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন যথাযথ হয়েছে কি না, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রির স্বীকৃতি আছে কি না কিংবা তাদের পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। ওই চিঠির জবাবে ইউজিসির উপপরিচালক ড. দূর্গা রানী সরকার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় বিসিএসআইআরকে। পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশস্থ স্টাডি সেন্টার শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদন নেই তাই ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমসহ পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের বিষয়েও মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নেই। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন আছে বলে ইউজিসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউজিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মফিজুর রহমান  বলেন, ‘আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে যাঁরাই পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন, তাঁদের সবার ডিগ্রিই অগ্রহণযোগ্য।’ বিসিএসআইআরের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনেও মালা খানের জালিয়াতির মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রির বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিসিএসআইআর পরিষদের সচিবের কাছে জমা দেওয়া ওই প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মালা খান তাঁর পিএইচডি থিসিসের কোনো কপি জমা দেননি এবং তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হননি বা লিখিতভাবে কিছু জানাননি। মালা খান অবিশ্বাস্য কম সময়ে তথাকথিত পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার যে দাবি করছেন তা চরম অনৈতিক। মালা খান বিভিন্ন উৎস থেকে কতগুলো স্বীকৃত তথ্য এবং একটি ইউরোপিয়ান দেশের মেট্রোলজি হস কেমিস্ট্রির কান্ট্রি রিপোর্ট হুবহু নকল করে তাঁর থিসিসে লিপিবদ্ধ করেছেন। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মালা খানের থিসিসে অনাবশ্যক, অপ্রাসঙ্গিক এবং যার কোনো বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই এমন সব বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন মালা খানের স্বামী কে এম মোস্তফা আনোয়ার, যাঁর কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই এবং তাঁর কোনো গবেষণার অভিজ্ঞতাও নেই। নিজের স্বামীকে পিএইচডি থিসিসের সুপারভাইজার নিয়োগও অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক দিন পরই মন্ত্রণালয় ও বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × four =