বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, অবশেষে ভোলাবাসীর দাবী পূরণ হতে যাচ্ছে।
ভোলা-বরিশাল সংযোগ সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। ভোলাবাসীকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় আলোর মূখ দেখতে যাচ্ছে ভোলা-বরিশাল সংযোগ সড়ক। মন্ত্রী বলেন, সড়কটি নির্শাণের মাধ্যমে ভোলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। এজন্য ভোলাবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। ভোলায় ২ ট্রিলিয়নের বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আবিস্কৃত হয়েছে। অনুসন্ধান চলছে, আরো গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোধ্যে ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা যাবে এবং বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ সুষ্টি হবে। এর মধ্যদিয়ে ভোলা শুধু শিল্প নগরিই হবে না, ভোলা হবে দেশের শ্রেষ্ট জেলা।
ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণ কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই জমি অধিগ্রহণসহ ব্রিজ নির্মাণ কাজের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের উধর্বতন একটি টিমের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণ হলে আর পদ্মা ব্রিজের কাজ শেষ হলে ভোলার মানুষ ৫ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় যেতে পারবে। তা ছাড়া ভোলায় প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতকি গ্যাসের ওপর ভিত্তি করে ব্যাপক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এমন এক সময় আসবে যখন ভোলার টাকা দিয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর মেঘনা ব্রিজও নির্মাণ করা হবে।
সভায় ভোলা-বরিশাল ব্রিজের সম্ভাব্যতা যাচাই (সার্ভে রিপোর্ট) উস্থাপন করা হয়। রিপোর্টে তিনটি পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করা হলে ভেদুরিয়া-লাহারহাট পয়েন্টেটিতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ উপস্থিত সকলে সম্মতি প্রদান করেন। এদিকে দ্বীপজেলা ভোলাবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের সেতু ভোলা-বরিশাল ব্রিজের সাইট সিলেকশনের খবর ছড়িয়ে পড়লে আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
বাংলাদেশ সেতু কৃর্তপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার ওহিদুজ্জামান জানান, ভোলা বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের লক্ষে গত বছর ভারতের স্টুপ, ইংল্যান্ডের কাউই এবং বাংলাদেশের ডিডিসি ও দেবকন কনসাল্টেন্ট নামের এই চারটি কোম্পানির যৌথ একটি পরামর্শক গ্রুপ ভোলা-বরিশাল ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইর কাজ শুরু করেছিল। ইতোমধ্যে প্রাথমিক রির্পোট পেশ করা হয়েছে। আগামী ৫ মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এদিকে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ভেদুরিয়া ফ্রেরিঘাট থেকে লাহারহাট ফেরিঘাট এই সাইটটিতে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে লাহারহাট সংলঘœ আড়িয়ালখা নদীতে আধা (৫০০ মিটার) কিলোমিটার, কালাবদর নদীতে ৩.৪ কিলোমিটার এবং ভেদুরিয়া সংলঘœ তেঁতুলিয়া নদীতে ১.২ কিলোমিটার ব্রিজ এবং মাঝখানের চর ও ছোট ছোট খালে ৩.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাাজর ৫৯৩ কোটি টাকা।
পরামর্শক গ্রুপের প্রধান নিরমাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিকভাবে ৩টি সাইটে (পয়েন্টে) ব্রিজটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে বরিশালের লাহারহাট ফ্রেরিঘাট থেকে ভোলার ভেদুরিয়া ফ্রেরিঘাট। দ্বিতীয়টি পটুয়াখালির ধুলিয়া লঞ্চঘাট হয়ে থেকে ভোলার ভেলুমিয়া লঞ্চঘাট এবং ৩য়টি বরিশাল বাকেরগঞ্জের টুমচর থেকে ভোলার ভেলুমিয়ার গাজীরচর।
সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে লাহারহাট সাইটটিতে তুলনা মূলক কম খরচে ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়ে সচিব আরও বলেন, যত দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হবে তত দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
পরে পরামর্শক গ্রুপের সাথে ভোলা-বরিশাল ব্রিজের দুটি স্পট সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বাণিজ্যন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ সময় তার সাথে ছিলেন, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লবসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
