কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এখনো ডিজিটাল যুগেও গরীব সংসার চালাতে গিয়ে মেয়েরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সেচ যন্ত্রের ভীরে ঢেকিকল মেশিন দ্বারা ইরি-বোরো ধান চাষ করে। ডিজিটাল যুগে যন্ত্রের ভীরে প্রায় বিলুপ্তির পথে আধুনিক প্রযুক্তির এই সেচ ঢেকিকল, এখন আর চোখে পড়ে না।
কালে ভদ্রে এ যন্ত্রটি এখনোও কোথাও দেখা গেলেও তা কেবল হতদরীদ্রদের স্বল্প পরিসরের জমি বা অল্প কাজে ব্যবহারের জন্য আজোও কোন কোন হতদরীদ্র কৃষক এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নিজেদের প্রয়োজনেই।
দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কম সময়ে অধিক ফসল ফলাতে কৃষি বিজ্ঞানিরা নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে কৃষিতে ব্যপক উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি কাজে ব্যবহৃত নানা যন্ত্রপাতি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে আসছে। সেই সাথে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ঢেকিকল সেচ। বিশেষ করে শতশত বছর আগে মানুষ কৃষি কাজে পানির জন্য নানা কৌশলে সেচ দিতেন। এর মধ্যে একধরনের পদ্ধতি ছিল ঢেকিকল।
জানা গেছে আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা হতো টিন বা বাঁশের তৈরী ছেউতি। নদী, খাল বিল, বা জলাশয় থেকে টিন বা বাঁেশর চাটাই দিয়ে তৈরী করা ছেউতি দিয়ে পানি সরবরাহ করে চাষাবাদ করতো। গ্রামবাংলার কৃষকেরা আদিকাল থেকেই চিন্তা চেতনার ফসল হিসেবে আবিস্কার করেছিল এ প্রযুক্তি। গ্রামবাংলার এ প্রযুক্তি গুলি শেষের দিকে। আধুনিক কালে শ্যালো, পাম্প মেশিন প্রভৃতি যন্ত্রচালিত সেচযন্ত্র আসায় গ্রামীন কৃষি সমাজ থেকে এ ঢেকিকল সেচ প্রায় উঠেই গেছে।
রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের সোনাভরি নদীর এলাকার কৃষানী ঢেকিকল চালিত অবস্থায় তিন সন্তানের জননী সুফিয়া বেগম বলেন, এ জায়গাটি ব্রম্মপুত্রের নালা ছিল, এখানে এক সময় সারা বছর পানি থাকতো। এখন সব শুন্য। এখন নদীটি সোনাভরি নামে পরিচিত। বর্তমানে নদীটি ভরাট হয়ে ফসলের ক্ষেত হয়েছে। পঙ্গু স্বামী তিন মাইয়া নিয়ে সংসার চালাতে উপায়ন্তর না পেয়ে কাজেই আমার নিজের পনের শতক অন্যের পনের শতক জমি বর্গা নিয়ে দিন রাত কষ্ট করে এই ঢেকিকল চালিয়ে যা উৎপাদন হয় তাতে সারা বছর না গেলেও ৭-৮ মাস চলে। ফলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচসহ অতিকষ্টে দিনাতী পাত করি। সরকারী ভাবে কিছু পাইনা বললেও চলে।