সক্রিয় সিন্ডিকেটের কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

1
6931

হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। বিশ্বব্যাপী ক্রয় বিক্রয়ের বিনিময়ের অন্যতম এই মুদ্রাটির বাজারে (বিনিময় মূল্য) যেন আগুন লেগেছে। জুলাইয়ে যে ডলারের দর ছিল ৮০ দশমিক ৬৬ টাকা; গত বৃহস্পতিবার সে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ দশমিক ২৫ টাকায়। জুন থেকেই দেশে ডলারের বাজারে সংকট চলছে। বাজারে ডলার ছেড়েও সক্রিয় সিন্ডিকেটের কারণে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। অথচ গত অর্থ বছরে কোন ডলারই বিক্রি করতে হয়নি। আর তাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রতিনিয়তই কমছে। এক বছর আগের চেয়ে এখন বেড়েছে প্রায় চার টাকা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি বৈঠকও করেছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। সংগঠনটি ডলারের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ডলারের দর বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এদিকে গত বছরের নভেম্বর মাসে ডলার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে তিনটি বিদেশী ও ১৭টি দেশীয় ব্যাংককে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও থামানো যায়নি ডলারের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধি। এদিকে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়। এটি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের মূল্য এক শতাংশ বাড়ার অজুহাতে দেশের আমদানিকারকরা পণ্যের মূল্য দুই শতাংশ বাড়িয়ে দেন। এতে সাধারণ ভোক্তার ভোগান্তিও বেড়ে যায়। অপরদিকে আমদানির তথ্যের আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারকেও এর একটি কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাই কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নয়, আমদানি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির গতি ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণে গুরুত্বারোপ করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে ডলার সংকট আরও তীব্র হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের ধারণা, আমদানি বাড়ার পাশাপাশি ‘প্রচুর অর্থ’ বিদেশে পাচার হচ্ছে। তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে আমদানি বাড়ার কারণে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে; রপ্তানি আয় তার চেয়ে অনেক কম হারে বাড়ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের গতিও খুব বেশি নয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই দর বাড়ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়টি হল, বিরাট একটা অংশ বিদেশে পাচার হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থার বরাত দিয়ে ফরাসউদ্দিন গতবছর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। আহসান মনসুর বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এটা হয়ে আসছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ কারণে এটা আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সজাগ দৃষ্টি দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট দুই হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে। এই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে এক হাজার ৭৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই হিসাবে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৬২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯১ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। অর্থবছর শেষে এই ঘাটতি ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। যদিও বাণিজ্য ঘাটতি কখনোই ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি। আর তাই বাণিজ্য ঘাটতি বৈদশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবেই স্থানীয় মুদ্রার মান ৩ টাকা ৬৪ পয়সা হ্রাস পেয়েছে। যদিও বাস্তবে এটা ৫ টাকার বেশি। এতে করে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার।

সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে আন্তঃব্যাংক ডলারের দর ছিল ৮০ দশমিক ৬৬ টাকা। গত জানুয়ারি শেষে এই দর বেড়ে হয়েছে ৮২ দশমিক ৯০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার ডলার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ২৫ টাকায়। গত সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৭৯ টাকা ৩০ পয়সা। এ বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় হয়েছে ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ডলারপ্রতি দাম বেড়েছে ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। যদিও বাস্তবে তা আরও বেশি। গত বৃহষ্পতিবারও ব্যাংকগুলোর ঘোষিত প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংক ঘোষিত দামের চেয়েও দেড় থেকে দুই টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ কম হওয়ায় ডলার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোন কোন ব্যাংক ডলার ধরে রেখে ব্যবসা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোর আয়ের একটি বিশেষ অংশই ডলার কেনাবেচা থেকে হচ্ছে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বিক্রি করেছিল মাত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বিপরীতে কিনেছিল ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত কয়েক মাসে বাজারে প্রচুর ডলার ছেড়ে দাম ঠিক রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য গত দুই-তিন মাসে দাম ব্যাপকহারে না বাড়লেও ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক বছর আগের চেয়ে এখন বেড়েছে প্রায় চার টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক দরের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার প্রতি আরও প্রায় দেড় টাকা বেশি রাখছে আমদানি পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছ থেকে। গত বৃহস্পতিবার ডলারের আন্তঃব্যাংক দর ছিল ৮২ দশমিক ৯৬ টাকা। অন্যদিকে আমদানি পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর ডলারের দর ছিল সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ টাকা। বিদেশি ওরি ব্যাংকের ডলারের দর ছিল আন্তঃব্যাংক দরের থেকেও কম, ৮২ দশমিক ৪০ টাকা। ওই দিন বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নগদ ডলারের দর ছিল ৮৪ দশমিক ৩০ থেকে ৮৫ দশমিক ৩০ টাকার মধ্যে।

সূত্রমতে, বৈদশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয়। কয়েকটি ব্যাংকও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলারের প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের তথ্য গোপন করছে। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অন্যদিকে আমদানিকারকদের পাশাপাশি সাধারণ বিদেশগামী রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বিশেষ একটি গোষ্ঠী হুন্ডির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার বাড়িয়ে দেওয়ায় টাকার বিপরীতে হু হু করে দাম বেড়ে চলেছে ডলারের। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থ। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে এসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রাসাদ গড়ে তুলছে চিহ্নিত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অনেকে বাণিজ্যিক ভবনও ক্রয় করছেন। আবার কেউ কেউ ভুয়া এলসি অথবা ওভার ইনভয়েস করে অর্থ পাচার করছেন বিভিন্ন দেশে। অব্যাহতভাবে ডলারের দাম বাড়ায় সংকটে পড়েছেন আমদানিকারকরা। তাই বাড়ছে আমদানি ব্যয়। ফলে আমদানি পণ্যের দামও বাড়ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সার্বিক অর্থনীতিতে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং দেশের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় ডলারের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা পূরণ করতে পর্যাপ্ত ডলারের জোগান দিতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। যে কারণে সা¤প্রতিক সময়ে ডলারের দরে কিছুটা উর্ধমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছে বাফেদা। সংকট উত্তোরণের বিষয়ে বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাজারের পরিস্থিতি ও ব্যাংকগুলোর সংকট নিয়ে বাফেদার পক্ষ থেকে একটি লিখিত প্রস্তাবনা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করা। এছাড়া রফতানি আয় বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ এবং রেমিটেন্স বাড়াতে জোরালো পদক্ষে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বাফেদা চেয়ারম্যান সোনালী ব্যাংকের সিইও ও এমডি মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ইনকিলাবকে বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির প্রধান কারণ আমদানি বৃদ্ধি। ব্যাংকগুলোতে ঋণপত্র খোলার তুলনায় নিষ্পত্তি কম। চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতার কারণে দর বাড়ছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ কম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। রেমিটেন্স বাড়লে আস্তে আস্তে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বায়েদার সভায় টেকনিক্যাল কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়ার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। এছাড়া বাফেদার পক্ষ থেকে বিদেশী মুদ্রার বাজারের ওপর প্রতিনিয়ত নজরে রাখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া ইনকিলাবকে বলেন, আজ (রোববার) সভা রয়েছে। সভায় ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরা হবে। মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘সময়ে সময়ে ডলারের দাম বাড়ে। পেমেন্ট প্রেসার ও ডিমান্ড ও সাপ্লাই ব্যবধানের কারণেও হয়ে থাকে। তবে কিছুদিন থেকে এটা একটু বেশি বেড়েছে।’ পাশাপাশি বেশ কিছু বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে অনেক খরচ হচ্ছে। গত বছর বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্য আমদানি অনেকগুণ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে এর দরকে একটু একটু করে বাড়িয়ে তুলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডলার ছেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। আরও বাড়বে। তাই তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব শিগগিরই ডলারের বাজার ঠিক হয়ে যাবে।

সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসেই এলসি খোলার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বছর শেষে এই অঙ্ক ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। আমদানি বাড়ার কিছু ক্ষেত্র যেমন বড় উন্নয়ন প্রকল্পের যন্ত্রাংশ উপকরণ আমদানি বেড়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ। যেখানে রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানি বেড়েছে ২১২ শতাংশ। শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশের মতো। জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে ২৮ শতাংশ এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ (৯০০ শতাংশ) বেশি। সাধারণত চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হলে দেশকে ঋণ করে ওই ঘাটতি মেটাতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে তিন হাজার ২৭৬ কোটি ডলারের বেশি বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। ডলারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ১৫০ কোটির বেশি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকের মতো মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ডলারের দর বেড়েছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে বিভিন্ন মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ডলার বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮৫ টাকায়।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আমদানি এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে, সে পরিমাণ রফতানি আয় ও রেমিটেন্স দেশে আসেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে খোলা এলসিগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। ফলে বাজারে ডলার সংকট আরো তীব্র হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আমাদের পাশে চাচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদার আলোকে বাজারে ডলার ছাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। অন্যথায় বিদ্যমান সংকট আরো তীব্র হয়ে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশিস চক্রবর্তী বলছেন, ডলারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফলে বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × three =