হত্যার উদ্দেশ্যেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে

0
734

বিশিষ্ট লেখক-শিক্ষাবিদ ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ফয়জুর রহমান ফয়জুল নামে এক দুর্বৃত্ত। হত্যার উদ্দেশ্যেই তাকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এই ঘটনায় হামলাকারী ফয়জুর রহমান ও তার মামা ফজলুল রহমান এবং চাচা আবুল কাহার লুলইকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ফজলুর রহমান সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে জানিয়েছে পুলিশ। জাফর ইকবালের ওপর হালমার পর থেকে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জনপ্রিয় মিডিয়া গুরুত্ব সহকারে প্রচার করছে। কিন্তু কী কারণে তার ওপর এই হত্যার চেষ্টা তা এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

তথ্য মতে, জাফর ইকবাল পাঁচ বছর ধরে ভিন্ন মতাদর্শীদের কুপিয়ে হত্যায় বিশ্বাসী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আগের এবিটি) হুমকিতে আছেন। এই সংগঠনটির হিট লিস্ট (হত্যার তালিকা) এবং অনলাইনে হুমকির বার্তায় নাম থাকায় ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। একই কায়দায় হামলা চালিয়ে ১০ ব্লগার ও লেখককে হত্যার পর জাফর ইকবালের মতোই দুই ডজন বিশিষ্ট নাগরিকের নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেয়। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হক, ড. মুনতাসীর মামুন, সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী রয়েছেন। তাদের অনেকেই নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তদন্তে তথ্য বেরিয়ে আসে কথিত ইসলামবিরোধী হিসেবে শনাক্ত করে লেখক, বুদ্ধিজীবী ও প্রগতিশীলদের টার্গেট করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), যা পরে আল-কায়েদার ভারত উপমহাদেশের শাখা আনসার আল ইসলাম নামে চলছে। গত দুই বছরের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে সংগঠনটি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তবে গতকাল প্রকাশ্যে জাফর ইকবালের ওপর একই কায়দায় হামলার পর হামলাকারীকে এই সংগঠনের সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আনসার আল ইসলামের সবচেয়ে বেশি সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এসেছে। শীর্ষ পর্যায়ে আছে অন্তত ১২ জন। গত বছরের ২ মে শাবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র আশফাকুর রহমান অয়নকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সে আনসার আল ইসলামের প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিল। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে বলে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবেদন দেয়। ওই তালিকায় ড. জাফর ইকবালের নাম ছিল। তবে অনেকেই বলছেন, ভিন্নমত প্রকাশ ও লেখার কারণে জাফর ইকবালকে জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভিন্নমত পোষণকারী ড. জাফর ইকবালও কি তাহলে জঙ্গি হামলার শিকার? নাকি সম্প্রতি র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় তার ওপর এ হামলা? কিন্তু র‌্যাব কর্মকর্তারা হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, জাফর ইকবাল নাস্তিক, ইসলামের শত্রু, তাই তার ওপর হামলা করেছে সে।’ র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ জানান, হামলাকারী কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে এ হামলা চালিয়েছে কি-না এ বিষয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নই আমরা। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে নিজের পরিচয় নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে বলেছে, সে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তবে আমরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সত্যতা পাইনি।” ফয়জুলদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল কালিদারকাপন এলাকায়। তার বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পার্শ্ববর্তী টুকেরবাজারে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল শাবির মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে হামলার শিকার হন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে তার মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়। অধ্যাপক জাফর ইকবালের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, মঞ্চের পেছন থেকে এসে এক ছেলে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশসহ অন্যরা তাকে আটক করে। হামলাকারীর বয়স আনুমানিক ২৪-২৭ বছর। হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ড. জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়। তার মাথা ও হাতে চারটি আঘাত করা হয়েছে এবং ক্ষত স্থানে মোট ৩৮টি সেলাই দিতে হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ড. জাফর ইকবাল এখন শঙ্কামুক্ত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − two =