৭ হাজার টাকা পোশাক শ্রমিকদের গড় মজুরি

0
775

শ্রমিকদের দাবি আদায়ে অনেক ফেডারেশন থাকলেও সংগঠিত না হওয়ায় তারা নায্য দাবি আদায়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) তাদের তুলনায় বেশ সুসংগঠিত। ফলে শ্রমিকরা তাদের যৌক্তিক পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। গতকাল শনিবার ‘তৈরি পোশাক খাতে চলমান সংস্কার অগ্রগতি’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডি। এতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর গুলশানে খাজানা গার্ডেন হোটেলে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেন, শ্রমিকদের ৭০টিরও বেশি ফেডারেশন থাকার পরও কার্যকর শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা রাখতে পারছে না সংগঠনগুলো। এর মূল কারণ শ্রমিক নেতা এবং সংগঠনগুলো বহুদাবিভক্ত। অন্যদিকে মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখনো মালিকরা প্রাচীন পদ্ধতিতে তাঁদের ব্যবস্থাপনা দিয়ে কাজ করছেন। শ্রমিকরা বর্তমানে যে সুযোগ-সুবিধা চায়, ওই পদ্ধতিতে তাদের প্রাপ্য নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ শ্রমিকদের মধ্যে ভাগাভাগির পরামর্শ দেন। এটা করলে এবং প্রশিক্ষণ দিলে শ্রমিকরা অন্য কারখানায় যাবে না। কারখানার প্রতি তাদের দায়িত্বও বাড়বে। বিদেশি ক্রেতারা সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক কথা বললেও এসব উদ্যোগে তাদের অংশগ্রহণ কম বলে মনে করেন তিনি। তাই সিপিডি বা অন্য অংশীদারকে এই ইস্যুটিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এর মাধ্যমে ক্রেতারাও এসব কর্মসূচির মধ্যে অংশগ্রহণ করবে। তারা পণ্যের দাম বাড়ানো এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক অবস্থার চেয়ে সামাজিক অগ্রগতি বেশি হয়েছে। বিনিয়োগও থেমে থাকেনি। এ ছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে। একক মালিকানা থেকে লিমিটেড কম্পানিতে ঝুঁকছে বেশি। তবে এতে পরিবারের অংশগ্রহণ বেশি। এ সময়ে অনেকে কারখানা স্থানান্তর করলেও ১২ শতাংশ কারখানা পুরনো ভবনে রয়ে গেছে। জরিপে উঠে এসেছে ১৬ শতাংশ কারখানায় এখনো বিদেশি কর্মকর্তা কাজ করছেন। সমীক্ষায় বলা হয়, কারখানাগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এতে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়ছে। শ্রমিকদের গড় মজুরি এখনো আট হাজার টাকার নিচে। কর্মসংস্থান কমার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কর্মসংস্থান কমেছে ৩.৩ শতাংশ। ২০০৫ থেকে ২০১২ সালে ছিল ৪.০১ শতাংশ। পুরুষের চেয়ে নারীদের মজুরিও কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। একজন পুরুষ শ্রমিকের গড় মজুরি ৭ হাজার ২৭০ টাকা এবং নারীদের ৭ হাজার ৫৮ টাকা। কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন ব্যবস্থাও বেশ দুর্বল। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং গাজীপুরের ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানে ২২৭০ জন শ্রমিকের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে কী ধরনের অগ্রগতি হয়েছে তা দেখানো। গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, ৯১ শতাংশ পোশাক কারখানাতেই ওয়ার্কার পার্টিসিপেশন কমিটি (ডাব্লিউপিসি) আছে। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন আছে মাত্র ৩.৩ শতাংশ কারখানায়। এ ছাড়া সাবকন্ট্রাক্টিং বা ঠিকা কাজ করা কারখানা ৬.৭ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে প্রায় ১৭ শতাংশ কারখানা আংশিক বা পুরোপুরি সাবকন্ট্রাক্টিং। বক্তারা বলেন, পোশাক খাতে কাঠামোগত এবং প্রযুক্তির নতুন প্রবেশ ঘটেছে। আকার ও অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি একটা নতুন ধারণার ভিত্তিভূমির সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে এই পরিবর্তন হয়েছে অসমভাবে। ফলে সামাজিকভাবে বেশি অগ্রসর হলেও অর্থনৈতিকভাবে পরিবর্তন সেভাবে হয়নি। তাঁরা মনে করেন অর্থনৈতিক পরিবর্তন না এলে সামাজিক পরিবর্তন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। মুক্ত আলোচনায় শ্রমিকের মজুরি নিয়ে মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়, বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সেটা মালিকের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখেই করতে হবে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবি করা হয়। সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক শ্রমসচিব মিখাইল শিপার, অর্থনীতিবিদ ড. এনামুল হক, বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে শামিম, শ্রমিক নেত্রী শামসুন নাহার ভূঁইয়া, শ্রমিক নেতা বাবুল আকতার, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − six =