Site icon Aparadh Bichitra

খেলাপিদের তালিকায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নাম

প্রতি বছরই খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশের ভেতর থেকে বিভিন্ন মৌসুমে ধান, চাল ও গম সংগ্রহ করে। খাদ্যশস্য সংগ্রহে খাদ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলার সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে। সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধে খাদ্য মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। সরকার ঘোষিত দামে সরবরাহকারীরা খাদ্য অধিদপ্তরের গুদামে পণ্য সরবরাহ করেন। সরবরাহকারীরা যখন গুদামে খাদ্যশস্য দিয়ে আসেন তখন গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের পণ্য বুঝে পাওয়ার একটি রসিদ দেন। যাকে বলে ‘ডব্লিউকিউএসসি’। রসিদে কে কত খাদ্যশস্য কোন দামে সরবরাহ করেছে তা উল্লেখ থাকে।

রসিদ নিয়ে সরকার নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়ে নগদ অর্থ তুলে নেন সরবরাহকারীরা। মন্ত্রণালয় খাদ্য সংগ্রহ বাবদ বাজেট থেকে ব্যাংককে অর্থ পরিশোধ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে কিছু সুদও পেয়ে থাকে ব্যাংক। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সংগ্রহের অর্থ পরিশোধ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার একটি হিসাব থেকে এ বাবদ কয়েকশ’ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ব্যাংকের দাবি করা পুরো পাওনা পরিশোধ করেনি মন্ত্রণালয়। সুদ আসলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অগ্রণী ব্যাংক ৭৭ কোটি টাকা পাবে বলে দাবি করে আসছে। বছরের পর বছর ধরে এ অর্থ পরিশোধ না করায় অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপিদের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত রয়েছে। ১৫ বছর ধরে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে না পারায় ২০০৭ সালে অগ্রণী ব্যাংক খেলাপি ঋণের পুরোটা অবলোপন করে। কোনো ঋণ দীর্ঘদিন খেলাপি থাকলে এবং সাধারণ উপায়ে আদায়ের সুযোগ সীমিত হলে তার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে অবলোপন করে থাকে ব্যাংক। এ ধরনের ব্যাংকের সাধারণ হিসাব থেকে বাইরে রেখে আলাদা সেলের দায়িত্বে এ ধরনের আদায় করার চেষ্টা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অবলোপন করা ঋণও খেলাপি ঋণ। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অগ্রণী ব্যাংক অর্থ দাবি করলেও এর সপক্ষে যথাযথ নথিপত্র দিতে পারছে না। ফলে অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর ব্যাংক বলছে, এ ধরনের লেনদেনে যত প্রকার নথিপত্র থাকা দরকার তার সবই আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা মানছে না। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ শামস উল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিষয়টি অনেক পুরনো। অবলোপন করা এ ঋণ আদায়ের চেষ্টা চলছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে। উভয়পক্ষ আলোচনার ভিত্তিতে নিশ্চই একটা সমাধানে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ নিয়ে ঋণ দেয়। যার বিপরীতে আমানতকারীদের সুদ দিতে হয়। ফলে ব্যাংকের অর্থ আটকে থাকলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য লোকসান সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে জানতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও হিসাব বিভাগের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, খাদ্য সংগ্রহের পাওনা পরিশোধের বিষয় খাদ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন। মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের মতামত চেয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। খাদ্য অধিদপ্তরের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক স্বপন কৃষ্ণ বণিক সমকালকে বলেন, সবসময় ব্যাংকের মাধ্যমেই অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের অর্থ পরিশোধ করা হয়। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ওই সময়ে সংগ্রহ করা খাদ্যশস্যের আসল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি যে অর্থ অগ্রণী ব্যাংক দাবি করেছে তার পক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকায় তা পরিশোধ হয়নি। এ নিয়ে অনেকদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এখন বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে তা বলা যাচ্ছে না।