Site icon Aparadh Bichitra

যাত্রাবাড়ি শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

মোঃ আবদুল আলীমঃ ঢাকার যাত্রাবাড়ি শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সনে। শুরুর দিকে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রী থাকলেও অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে ছাত্রী সংখ্যা ক্রমশ: কমে আসছে। অপরাধ বিচিত্রার পূর্ববর্তী সংখ্যায় তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আভিযোগ রয়েছে তিনি ১৯৯৩ সনে স্কুল শাখায় ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বর্তমানে অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছেন। তার অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন এবং আজ পর্যন্ত বরখাস্ত অবস্থা থেকে উঠতে পারেননি। অনেক শিক্ষককে তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগি শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়। এদিকে যেসব শিক্ষক ও কর্মচারী তার তাবেদার হিসেবে কাজ করছেন তাদেরকে তিনি অন্যায় আবদার পূরণে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। ফাতেমা রশিদ এমপিও এর আবেদনপত্রের কাগজপত্রের সাথে কলেজের একন সহকারী অধ্যাপক বুলবুল মির্জাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেখান। অথচ বুলবুল মির্জা একদিনের জন্যও দায়িত্ব পাননি। এর প্রমান হচ্ছে কলেজের প্রতিটি কাগজপত্রে ফাতেমা রশিদের স্বাক্ষর রয়েছে যা তদন্ত করলে প্রমানিত হবে। অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শাহীন আসমা নামে একজন শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

 

এই শাহীন আসমা সহকারী শিক্ষক হিসেবে অক্টোবর ২০১৬ সাল পর্যন্ত সরকারী টাকা উত্তোলন করেন। অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের সহায়তায় সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহীন আসমা নভেম্বর ২০১৬ মাসের বেতনের সাথে এক লাখ বাষট্রি হাজার পাঁচশত ছিয়াশি টাকা বকেয়া বেতন হিসেবে উত্তোলন করেন যা প্রশ্নবিদ্ধ। যে শিক্ষক বিদ্যালয়ে কোন দিন আসেনি তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ডিজি অফিসে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেখিয়ে জুলাই ২০১৭ তারিখে এমপিও ভুক্ত করেন। স্কুল শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় প্রমাণ নাছিমা বেগম নামে এই শিক্ষক ২০১৭ জুলাই মাস পর্যন্ত স্কুলে যোগদান করেননি। সুমি আক্তার নামে একজন শিক্ষকের নাম ফ্লুয়িড দিয়ে মুছে ১৫ নং সিরিয়ালে এই নাছিমা বেগমের নাম লেখা হয় যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে। আগষ্ট মাসে সুমি আক্তারকে সিরিয়াল ১৬ তে দেখানো হয়। অর্থাৎ তার স্থলে নাসিমা বেগমকে ১৫ নং সিরিয়ালে দিয়ে সুমি আক্তারের চেয়ে সিনিয়ার বানানো হয়। ফ্লুয়িড দিয়ে মুছে ফাতেমা রশিদ নিজে একাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফাতেমা রশিদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষযের কোন ক্লাস নেননি। অথচ প্রতি মাসে ইসলাম শিক্ষা প্রভাষক হিসেবে কলেজ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। ২০০৪ সালে ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক হিসেবে তার এমপিও হয়। ২০০৬ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার পর থেকে তিনি একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেতন+কলেজ শাখার ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক হিসেবে বেতন+ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক হিসেবে সরকারী বেতনের অংশ উত্তোলন করেন। অথচ ইসলাম শিক্ষার ক্লাস নেয়ার জন্য মোঃ হান্নান মিয়া নামক একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। এ শিক্ষককে প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কলেজ শাখার ছাত্রীদের কাছ থেকে ১ দিন গড় হাজির থাকার অপরাধে ৫০ টাকা কখনও ২০ টাকা করে জরিমানা আদায় করেন। এভাবে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন ও তা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি রেজিষ্ট্রারে জরিমানার টাকার হিসাব রাখা হয়। উক্ত টাকা যাত্রাবাড়ি অগ্রণী ব্যাংকের নির্ধারিত হিসেবে জমা রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এক্ষেত্রে খদিজা বেগম নামে একজন শিক্ষক তাকে সহযোগিতা করেন। দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, জেলা প্রশাসক, ঢাকা, জেলা শিক্ষা অফিসার, ঢাকাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিকবার ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অথচ অদ্য পর্যন্ত প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন তদন্তটুকু পর্যন্ত করছে না। শিক্ষা জীবনে একটি তৃতীয় বিভাগ থাকলে কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষক বা কলেজের অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব পওয়ার কথা নয়। অথচ ফাতেমা রশিদ শিক্ষা জীবনে একটি তৃতীয় বিভাগ নিয়ে অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছেন বলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জান যায়। একটি সূত্রে জানা গেছে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে প্রতিটি টেবিলে মোটা অংকের টাকা বিলি করেন। তার বহুবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে এ প্রতিবেদক তার বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কলেজে গিয়ে কথা বলতে বলেন। কলেজে গেলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে ইতোমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক কলেজে এসেছিল। আমি তাদেরকে রশি দিয়ে বাঁধতে চেয়েছিলাম।” এলাকার ৪৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,“ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলছেন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসি ও অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন,“দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদকে এখান থেকে বিদায় না করতে পারলে অসংখ্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক কেউ রেহাই পাবে না। ভুক্তভোগি শিক্ষকগন তার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাদের দাবি শিক্ষকদেরকে আলাদাভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করে জিজ্ঞাসা ও তদন্ত করলে আসল রহস্য উদঘাটিত হবে। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত চলছে। আগামী সংখ্যায় এ ব্যপারে আরও বিস্তারিত থাকছে।