এ সময় অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন

0
5661

বগুড়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষায় অংশ নেন ৪ হাজার ৩০০ জন। তাঁদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০০ জন। অনেক অভিভাবকের দাবি, এবার ঘুষ ছাড়াই চাকরি হচ্ছে। ঘুষ ছাড়াই চাকরি হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের, এই খুশিতে শতাধিক অভিভাবক গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। সোনাতলা উপজেলা থেকে এসেছেন আকতার হোসেন নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর এক নাতি কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশে নিয়োগ মানেই ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা ঘুষ লাগত। ঘুষের টাকা জোগাতে না পেরে গরিব মানুষের সন্তানেরা চাকরি পেত না।

এবার নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেখলাম, পুলিশে ঘুষ ছাড়াই নিয়োগ হচ্ছে। এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে শতাধিক অভিভাবক জড়ো হন। দুপুর সাড়ে ১২টায় অভিভাবকদের সামনে আসেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা। এ সময় কয়েকজন অভিভাবক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। শেরপুর উপজেলার খানপুর গ্রাম থেকে কুলি শ্রমিক তোতা শেখ আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ঘুষ ছাড়াই তাঁর ছেলে মাসুদ রানার চাকরি হতে যাচ্ছে। এতে তিনি কত খুশি হয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না। মেধার ভিত্তিতে ছেলে আল ফাহাদ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ দিতে এসেছেন মা আলেয়া জেসমিন। তিনিও আনন্দে কেঁদে ফেলেন। শিবগঞ্জ উপজেলার দোপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি তফসির উদ্দিন বলেন, স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর ছেলে নাজমুল হকের পুলিশে চাকরি হবে। সোনাতলা উপজেলার উত্তর সুখানপুকুর গ্রামের ভ্যানচালক শাহিদুল ইসলামের অভাবের সংসার। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ তালিকায় কলেজপড়ুয়া মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনের নাম দেখে তিনি পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মেয়েডার খুব ইচ্ছা পুলিশ হয়্যা দ্যাশের সেবা করবি। হামি কই, মা, পুলিশের চাকরিতে ১৫ লাখ টেকা ঘুষ লাগে, হামি সেই টেকা কুনটি পামো। মেয়ে কয়, আব্বা এবার টেকা লাগবিনা। ১০০ টেকা দেও, নিয়োগ পরীক্ষাত দাঁড়ামো। নিয়োগ স্বচ্ছ হওয়ায় মেয়েডার স্বপ্ন আজ সত্যি হচ্চে।’ সোনাতলার মহিষপাড়া গ্রামের রোমানা আকতার উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর মা হতদরিদ্র গৃহবধূ ফাতেমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী মুকুল মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। মাথা গোঁজার মতো বসতবাড়ি ছাড়া কোনো সম্বল নেই। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে দরজির কাজ করে সংসার চালান তিনি। কাউকে ঘুষ দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। ঘুষ ছাড়া চাকরি পাচ্ছেন তাঁর মেয়ে, এটা এখনো তাঁর কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। মেয়ে জান্নাতুল পারভীন পুলিশে চাকরি পেতে যাচ্ছেন, এমন খবর জেনে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁর মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। বিনা ঘুষে চাকরি হচ্ছে। এতে খুব উপকার হলো।’ ছেলে পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জলার চন্দনবাইশা ডিগ্রি কলেজের পিয়ন মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া ছেলে পুলিশে চাকরি পাবে, এটা কখনো ভাবিনি।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, এ জেলায় এবার কনস্টেবল পদে ১৭০ জন পুরুষ ও ৩০ জনকে নারী প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা শতভাগ স্বচ্ছ করতে প্রথমবারের মতো পুলিশ লাইনস মাঠে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দাখিল করায় ১৪ জন প্রার্থীকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। পাঁচজন ভুয়া প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কুলি, শ্রমিক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন বর্গাচাষি, দিনমজুর ও ডাব বিক্রেতার সন্তানেরাও নিয়োগের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় মাদক গ্রহণের প্রমাণ মিললে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেছেন, উত্তীর্ণদের ডাক্তারি পরীক্ষা হবে। গতকাল ১০০ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। এতে প্রায় এক মাস লাগবে। এরপর উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। ছয় মাসের প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হলেই তাঁদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 4 =