এস এম আওলাদ হোসেন
লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কে কার্পেটিং তুলে ফেলে রাখায় ধুলাবালুতে বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ। যানবাহন দেখলেই সড়ক থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছেন পথচারী আর মোটরসাইকেল আরোহীরা। বড় গাড়িগুলো চলছে জানালা-দরজা বন্ধ করে, কিন্তু ধুলা থেকে নিন্তার নেই পথচারী আর ছোট যানগুলোর। গত চার মাস ধরে লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুরের বর্ডার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারসহ চলছে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন লরিতে করে ধুলারোধের জন্য পানি ছিটানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার পানি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন পথচারীসহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও কয়েক জন জনপ্রতিনিধিরা জানান, ধীরগতির সংস্কারকাজের কারণে বাড়ছে এ সড়কে দুর্ঘটনা ও ধুলাবালুর অত্যাচার। বর্ষাজুড়েই ছিল কাদাপানি আর খানাখন্দের দুর্ভোগ। এখন সড়কে বেরোলেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে ধুলাবালির দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী। আর ধুলাবালুর আন্তরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে সড়কের আশপাশের ভবন, দোকানপাট ও গাছপালা। এ সড়কে পথচারী আর যাত্রীদের চলাচল করতে হয় নাক ও মুখ চেপে। দেখে মনে হয় মরুভূমিতে বসবাস করছে মানুষ। সড়কে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি শুরু দেখা দিচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। সড়কে পানি না দিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছে মত কাজ করায় উন্নয়ন-ধুলায় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এলাকাবাসীর।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, ধুলার দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ বহু রোগী হতে পারে। গত চার মাস ধরে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সড়কের অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা। সড়ক প্রশস্তকরণের সময় পানির জন্য বড় অংকের টাকা বরাদ্দ তাকলেও পানি ব্যবহার না করায় ধুলাবালিতে চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি না থাকায় নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছেন ঠিকাদার। এচাড়াও সড়কের কিছুদূর পর পর এক লেন বন্ধ রেখে অন্য লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় রায়পুর থেকে লক্ষ্মীপুর পৌঁছাতে দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুরের বর্ডার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ৫৮ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৭ টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে ধুলা-বালি রোধে পানি দেওয়ার জন্য বড় অংকের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কাজটি পায় কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স। পরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হাসান বিল্ডার্স ও মেসার্স সালেহ আহমেদ। তারা গত বছরের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে।
ঠিকাদার আজিজুর কবির বাচ্চু বলেন, পানির লরিতে সংকটে একটু কম দেওয়া হয়েছে। সড়কের দু’পাশে সম্প্রসার করার জন্য মাটি রাখায় ধুলাবালু একটু বেশি হচ্ছে। এছাড়াও এ সময় সব সড়কেই ধুলাবারি একটু বেশি থাকে। সড়কের গাছ কাটাসহ বিভিন্ন কারণে কাজ কিছু ধীরগতি হচ্ছে। তবে প্রকল্প মেয়াদের আগেই কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে নিয়মিত পানি দেওয়ার জন্য। তবে এই সড়কের কাজে কোন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কাজটি খুব গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে।