প্রথম শিরোপা আজই ধরা দেবে

31
1511

স্টেডিয়ামের সামনে টিকিট কাউন্টার আছে। আছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সামনেও। কোথাও তেমন ভিড় নেই। থাকার কথাও অবশ্য নয়। নিজের উৎসবে নিজেই বসে থেকে অন্যের নাচ কেই-বা দেখতে চায়! নিদাহাস ট্রফিটা তো শ্রীলঙ্কারই উৎসব। শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই টুর্নামেন্ট। লঙ্কান শব্দ ‘নিদাহাস’ মানে স্বাধীনতা। যে কারণে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই সবখানে ছিল উদযাপনের ডাক। অথচ উদযাপনের শেষ মঞ্চে শ্রীলঙ্কা শুধুই দর্শক। ফাইনালে আজ ট্রফির জন্য যুদ্ধে নামবে বাংলাদেশ ও ভারত। তা উদযাপনের এই ট্রফিতে শেষ হাসিটা কার হবে? শ্রীলঙ্কার মানুষ কাকে সমর্থন দেবে, কে জানে।

হয়তো ভারতের দিকেই সমর্থনটা বেশি থাকবে। বাংলাদেশ যে ফাইনালে উঠল, তা তো তাদেরই বিদায় করে দিয়ে। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচের দুটি জিতেছে বাংলাদেশ, দুটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুটি জয়ই আবার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা উপহার দিয়ে। একবার শ্রীলঙ্কার ২১৪ টপকানো দুই বল হাতে রেখে। আর দ্বিতীয়টি পরশু মহানাটকীয় ‘সেমিফাইনালে’। ৪ বলে ১২ রানের সমীকরণের নখ কামড়ানো উত্তেজনার মাঝে মাহমুদউল্লাহর ছক্কায় ১ বল হাতে রেখে বাংলাদেশের জয়। শ্রীলঙ্কা স্তব্ধ। একটু ক্ষুব্ধও যেন। শেষ ওভারে নো বল হওয়া-না হওয়া নিয়ে নাটকের মাঝে মাঠে যেভাবে লেগে গেল শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের, ক্ষোভ সেটি নিয়ে। আম্পায়ারদের ভুল এড়িয়ে সবার নজর বাংলাদেশ কেন মাঠে তর্ক করল, সেটি নিয়ে। মুরালিধরনের বলকে নো বল ডাকার প্রতিবাদে অর্জুনা রানাতুঙ্গার মাঠ ছেড়ে যাওয়ার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাখা লঙ্কানদের বিরক্তি সাকিব ওভাবে খেলোয়াড়দের মাঠ ছেড়ে আসতে বললেন কেন, সেটি নিয়ে। ম্যাচ শেষে সেদিনই অবশ্য সাকিব শ্রীলঙ্কানদের ম্যাচ দেখতে আসার নিমন্ত্রণ দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সে নিমন্ত্রণ কয়জন গ্রহণ করবেন, কে জানে! তা দর্শক আগের দুই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের মতো হাজার দুয়েকই হোক বা ফাইনাল বলে কিছুটা বেশি, তাতে শেষ হাসিটা কার হবে? শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই দুই ম্যাচই বাংলাদেশকে নিয়ে আশাটা হয়তো বাড়িয়ে দিয়েছে। সাকিবকে অবশ্য ওসব প্রশ্ন করে একটাই লাভ হলো, দেখা মিলল সংবাদ সম্মেলনে ফুরফুরে মেজাজের সাকিবের। ‘ফাইনালে কী আশা করছেন’ কাল এমন প্রশ্নেও হেসে হেসে বললেন, ‘কী আশা করতে পারি?…আপনি কী আশা করেন, বলুন। সবাই জানি, আমরা কী আশা করছি। কী, জানি না?’ আশা মনে মনেই থাক। বলার কী দরকার! তবে সাকিবদের প্রেরণা হতে পারে রেকর্ড বইয়ের একটা দৈন্য ঘোচানোর আহ্বানও। এর আগে চারবার ফাইনালে খেললেও কখনো যে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডে টুর্নামেন্ট তিনটি (এশিয়া কাপ ২০১২, শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ২০০৯ ও ২০১৮-এর দুটি ত্রিদেশীয় সিরিজ)। অন্যটি টি-টোয়েন্টি। দুই বছর আগে সেই এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছিল আবার ভারতের কাছেই। সেই ভারতকে আজ আবার প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে জ্বালা জুড়ানোর একটা প্রতিজ্ঞা থাকবে? হয়তো থাকবে, কিন্তু খেলার মাঠে ওসব মুখে বলতে নেই। সাকিব যেমন কিছুই বললেন না, ‘এটা আরেকটা ম্যাচের মতোই। যেটাতে আমরা জিততে চাইব, জয়ের জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টা করব।’ আর ভারতের কাছে এই ম্যাচের তাৎপর্য? ভারতের মানুষ তো নাকি বাংলাদেশের কাছে হারই কল্পনা করতে পারে না! কাল সংবাদ সম্মেলনে এসে দিনেশ কার্তিকই জানিয়ে গেলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জিতলে কোনো বাহবা পান না তাঁরা, কিন্তু হারলে সমালোচনা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যান। এমনকি এই কোহলি-ধোনিহীন দ্বিতীয় সারির ভারত দলের কাছে চাহিদায়ও সেখানে হেরফের হচ্ছে না। এমনিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারানো তাদের কাছে ডালভাত। দুই দলের এর আগের সাত ম্যাচের সবগুলোতেই জিতেছে। টি-টোয়েন্টিতে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আর কোনো দলের এমন একতরফা রেকর্ড নেই। এই নিদাহাস ট্রফিতেও ভারতের সঙ্গে দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ফিরেছে হারের হতাশা নিয়ে। এবার বাংলাদেশের হতাশাটা ঘুচবে কি না, কে জানে। ভারতের স্পিন, পেস-বোলিংয়ে সবই ভালো হচ্ছে। ব্যাটিংয়েও কম কী! রোহিত, ধাওয়ান, রায়না…কেউ না কেউ জ্বলে উঠছেন। টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর টানা তিন ম্যাচে জয় সে কারণেই। একটা ‘অসাধ্য’ও সাধন করেছে ভারত। টুর্নামেন্টে আগে ব্যাট করে জেতা একমাত্র দল তারাই-বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে। কিন্তু কথা শুনে সেটি কে বুঝবে? আগে ব্যাটিং, না পরে-প্রশ্নে দুই দলের উত্তরটা শুনুন আগে। একটা উত্তর, ‘পিচের ওপর নির্ভর করবে। পিচ ধীরগতির হলে যারা ভালো বোলিং করবে তারাই জিতবে।’ আরেকটি উত্তর, ‘আগে ব্যাটিং হলে ভালো রান করতে হবে, বোলিং হলে কম রানে আটকে ফেলতে হবে।’ মাথা চুলকাতে হবে না। প্রথম উত্তরটা দিনেশ কার্তিকের। দ্বিতীয়টি সাকিবের। সংবাদ সম্মেলনে এমনই ভারহীন সাকিব। ম্যাচে বাংলাদেশও তা থাকতে পারলে…কে জানে, চার ফাইনালে চার হারের রেকর্ডটা আজও চারেই থেকে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 − 6 =