চন্দ্রগঞ্জ খাবার হোটেল গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ,বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

30
1138

এস এম আওলাদ হোসেন
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানার সর্বত্রই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে খাবার হোটেল। এসব হোটেলে আইন অমান্য করেই পরিবেশন করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হোটেলের ভিতরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে যেন, বাহিরে পিটপাট ভিতরে সদরঘাট। প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবেই এমনটি করছেন হোটেল মালিকরা, অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে থানার, দত্তপাড়া, মান্দারী, হাজিরপাড়া ও দিঘলী ইউনিয়নের কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা যায়, হোটেলের বাইরে চাকচিক্য থাকলেও খাবার তৈরি করার জায়গাটির অবস্থা যাচ্ছে তাই। কর্দমাক্ত, স্যাঁত সেঁতে, মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। নেই খাবারে ঢাকনা। বাবুর্চির গায়ের গাম পড়ছে খাবারে। তার উপর মশা-মাছি উপদ্রব, আর ভনভন করছে সেগুলোর উপর। চারিদিকে দুগন্ধময়। যেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই নয় এক নর্দমাক্ত খোলামাঠ।

হোটেলের সামনের ভাগে আছে টাইলস বসানো ও আকর্ষনীয় সাজসজ্জা। মনে হচ্ছে উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট। খাবার পরিবেশনের পর দাম নেন হাঁকাই এবং মনগড়া, অতিরিক্ত। কিন্তুু ভেতরের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবার মতো। এমন নোংরা পরিবেশ চন্দ্রগঞ্জের সবগুলো হোটেলেরই। সবগুলোরই এক চিত্র।

এসব বিষেয়ে হোটেলের মালিকরা বলেন পূর্বের চেয়ে তাদের খাবারের মান ভালো। খারাফ হলে বিক্রি করতেন কিভাবে। তবে তারাও ভিতরের পরিবেশ কিছুটা নোংরা বলে শিকার করেন। তার পরেও পূর্বের চেয়ে ভালো দাবি করেন।

কোন হোটেলই মানছে না সরকারি বিধিমালা। বিএসটিআই অধ্যাদেশ-১৯৮৫ (সংশোধনী ২০০৩) এখন তাদের কাছে একেবারেই উপেক্ষিত। অধিকাংশ মালিকই জানে না বাংলাদেশ পিউর ফুড অধ্যাদেশ-১৯৫৯ (সংশোধনী ২০০৫) সম্পর্কে। অথচ এ আইনের ১৪ (বি) ধারায় বলা আছে, উৎপাদিত খাবার মান সম্মত না হলে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ম পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। এ আইনে আরও বলা আছে হোটেলগুলোর রান্নাঘর হবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, খাবার থাকবে ডাকা, বাবুর্চিদের নিদিষ্ট ইউনিফর্ম থাকবে, হাতের নখ থাকবে ছোট ইত্যাদি। কিন্তু তার কয়েকটি নিয়ম ছাড়াই বাকিগুলো কোন হোটেলই মানছে না।যেন সবই তাদের কাছে অধরা।

স্থানীয়রা জানান, এখানে দেদারছে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় মালিকরা আরো বেপোরোয়া হয়ে পড়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না, অপরিচ্ছন্নভাবে খাবার সংরক্ষণ ও পরিবেশন করছে হোটেল মালিকরা। আর তা ছাড়া মনগড়া মুল্য আদায়, আর প্রতিবাদ করলে গ্রাহকদের হয়রানিতো আছেই। রান্নায় একই তেল বার বার ব্যবহার ও পুরনো খাবার খাওয়াচ্ছে এসব হোটেল গুলোতে। তবে এর চেয়ে তেমন ভালো মানের হোটেল না থাকায় গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে এসব হোটেলগুলিতে। এ দিকে হোটেলের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে স্থানীয়দের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

জেলা স্যানেটারী ইনস্পেক্টর নূরে আলম বলেন, মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে সচেতন ও সরকারি নিয়ম মানার জন্য তাগিদ দিয়েছি। তবে যারা অমান্য করছে তাদেরকেই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানেও এমন প্রমান পেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় শাস্তি প্রদান করা হবে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত হোটেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =