বাড্ডা থানার ওসি ওয়াজেদ আলীর সীমাহীন অপকর্ম ডিএমপিতেই একাধিকবার বরখাস্ত

0
2197

বাড্ডায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আতঙ্কজনক অবস্থায়
পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে পুরো পুলিশ বিভাগ দুর্নাম থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সরকার এবং পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও চেষ্টা করছেন পুলিশের দুর্নাম ঘুচাতে। যেমন ডিএমপি পদক, রাষ্টপতি পদক, ডিএমপি কর্তৃক প্রতি মাসে ভালো কাজের জন্য পুরুষ্কার, ঝুঁকি ভাতা সহ নানা কর্মসূচি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কারনে। তেমনই এক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার হলেন বাড্ডা
থানার ও’সি ওয়াজেদ আলী।
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
অগণিত অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও রহস্যজনকভাবে ঘুরেফিরে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, তার হাত অনেক লম্বা। তার ভাবসাবে মনে হয়, তিনি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও তোয়াক্কা করেন না। থানায় সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের রুক্ষ্ম মেজাজে ধমকিয়ে থাকেন। বলেন, “যান! আমি ওই আসামি ধরবো না, আমি ধরতে বাধ্য নই, আপনার কথা মতো কাজ করবো না, পারলে ডিসিকে বলেন। তিনি আমার কিছুই করতে পারবেন না।” ইত্যাদি ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত, নানা অপকর্মের কারনে ইতোমধ্যে তিনি কয়েকবার বরখাস্তও হয়েছেন। সর্বশেষে বদলী হয়ে তিনি এখন বাড্ডা থানায় ও’সি হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন অপকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মহা দুর্নীতিবাজ ও’সি ওয়াজেদ আলী বাড্ডায় থানায় যোগদান করতে না করতেই থানা এলাকায় ব্যাপকহারে খুন-খারাবি শুরু হয়ে গেছে।

 

বাড্ডা থানা এলাকায় চলছে থানার নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ডিএমপির অন্যান্য থানা এলাকার তুলনায় বাড্ডা থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন থানা এলাকার সর্বশ্রেণির বাসিন্দারা। অভিযোগ রয়েছে, তিনি আদালতের নির্দেশও মানতে চান না। চাহিদা মাফিক ঘুষ পেলেই ওয়ারেন্টের আসামীও তিনি আটক করা থেকে বিরত থাকেন। এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ভুরিভুরি। তার দম্ভ একটা, তিনি বিশাল লম্বা হাতের অধিকারী।
একটি সূত্রে প্রকাশ, বাড্ডা থানা ভবনের সন্নিকটে আলোচিত মাফিয়া ও ৩৫টি মামলার আসামী শীর্ষ অবৈধ্য অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচারিত কিলার জয়নাল জোরপূর্বক একটি বাড়ি দখলে রয়েছে। একারণে উক্ত সন্ত্রাসী প্রতি মাসে ও‘সি ওয়াজেদ আলীকে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করে। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, তোতলা জাহাঙ্গীরের ছোটভাই কিলার আলমগীরের জোরদখলে রয়েছে একটি হোটেল। জানা গেছে, উক্ত হোটেলটিকে নিজস্ব কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র মতে তার এই অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনায় পরোক্ষ সমর্থন করছেন ও’সি ওয়াজেদ আলী।
বাড্ডা থানার ও‘সি ওয়াজেদ আলী প্রায়শঃই প্রচার করেন, তিনি তিনটি প্রচারবহুল পত্রিকায় বিনিয়োগ করেছেন। বাড্ডা থানার ২০/২৫ জন কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সামনেই তিনি বললেন, অপরাধ বিচিত্রা থেকে বেশী প্রচারবহুল পত্রিকায় তার বিশাল অংকের টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। উক্ত দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ এমই নিকৃষ্ট যে, অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উক্ত বিভাগের ডিসির উচিৎ তার আচার-আচরণ ও ব্যবহার শিক্ষার জন্য তাকে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো।
কারন একজন ও‘সির আচার ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণ। বাড্ডা থানার ও‘সি ওয়াজেদের আচার ব্যবহারের কারনে থানার অনেক কর্মকর্তাই তার ওপর নাখোস। কিন্তু ও’সি বলে কথা। ফলে তারা প্রতিবাদের পরিবর্তে চুপ থাকতেই বাধ্য হচ্ছেন। ইতোপুর্বে যতগুলি থানায় তিনি কর্মরত ছিলেন সবগুলো থানায়ই তিনি নানান অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ডিএমপির কদমতলী, মিরপুর, পল্লবী থানায় দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অগণিত অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। ফলে সাময়িক বরখাস্তও হয়েছেন কয়েকবার। এতসব অপকর্ম করেও রহস্যজনক কারনে ঘুরেফিরে তাকে ডিএমপির কোনো না কোনো থানার দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে। তিনি যে থানাতেই দায়িত্ব পান সেই থানা এলাকাটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। থানা এলাকায় খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, মাদক ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে। তার অপকর্মের খবরগুলোও জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে বিভিন্ন সময়।
প্রথম শ্রেণির জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা অপরাধ বিচিত্রা উক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিগত দিনের অপকর্মের খবরগুলো তুলে ধরা হলো। ওয়াজেদ আলী যখন কদমতলী থানায় কর্মরত ছিলেন তখন এক দেহব্যবসায়ী ও মাদক সম্রাজ্ঞীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি তখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। এখনও অন-লাইনে ক্লিক করলেই উক্ত খবরটি পাওয়া যায়।
হোসনে আরা খাতুন হ্যাপিকে নিয়ে রয়েছে ও’সি ওয়াজেদ আলীর প্রেমের অনৈতিক চাঞ্চল্যকর কাহিনী। যা নিয়ে মামলাও হয়েছে আদালতে। যার পিটিশন মামলা নং- ৮৮/১৩।
উক্ত থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় মানবাধিকার সাংবদিক কমিশন (সমাক)’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন কাজী ওয়াজেদ আলী। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলাধীন গোলাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আলোচিত মাদক সম্রাজ্ঞী ও নারী পাচারকারীদের অন্যতম মূলহোতা মানিক মিয়া, নান্নু মিয়া, ফোরকান ও বাবু মিয়ার স্ত্রী শারমিন ওরফে বুসকি শারমিন, ওরফে পাসর্পোট শারমিন, ওরফে ফর্মা শারমিন নানা রকম চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে “স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও মানবাধিকার সাংবদিক কমিশন (সমাক)’র” চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রাইম অন-লাইন নিউজ পোটাল “ক্রাইম ফাইল ”র প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম রবিউল আউয়ালের বিরুদ্ধে গত ৮ মে কদমতলী থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২১, তাং- ০৮-০৫-২০১৭ ইং। ধারা ১৪৩/৩২৩/৩৫৪/ ৩৭৯/১১৪/৫০৬ দঃ বিঃ। মামলা সূত্রে জানা যায়, কদমতলী থানাধীন মেরাজনগর এলাকার শাহী মসজিদের সামনে ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়। শাহী মসজিদ এলাকাটি একটি জনবহুল এলাকা। ওখানে রাত ১২টা পর্যন্ত লোকজন ব্যাপকহারে আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা যেখানে ঘটে, সেখানের কোন মানুষ তা জানেনই না। এতে সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, মামলায় উল্লেখিত কোন ঘটনাই ঘটেনি। আসলেই সেটি ছিলো একটি মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা। এ ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত মামলার বাদী শারমিন একজন নারী পাচারকারীর হোতা, মক্ষীরাণী, দেহব্যবসায়ী। লোকজন জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, আমি বিদেশ লোক পাঠানোর কাজ করি। আসলে বিদেশে লোক পাঠানোর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে নারী পাচার করে আসছে সে। রূপগঞ্জের গোলাকান্দা এলাকায় নিজের বাড়ী থাকার পরও শারমিন সেখানে বসবাস করতে পারে না। বহু নারীদের বিদেশ পাঠানোর নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের পাঠাতে ব্যার্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং চাপে পড়ে ২/১ জনকে পাঠালেও তাদের ভাগ্যে মিলে পতিতাবৃত্তির মতো জঘণ্য কাজ। এ নিয়ে মামলা হামলা ও গণধোলাইয়ের ভয়ে নিজ এলাকা থেকে সে গাঢাকা দেয়। এমন কি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে কদমতলী থানাধীন মেরাজ নগর বি ব্লক এলাকায় বসবাস করে সীমাহীন কূকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে একাধিক সমস্যা নিয়ে শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে এ নিয়ে থানায় আসা যাওয়ার সুবাদে তৎকালিন ও‘সি কাজী ওয়াজেদ আলীর সাথে গড়ে উঠে অনৈতিক সর্ম্পক। এই সুবাধে শারমিন মেরাজ নগর গড়ে তুলে অপরাধের অভয়ারণ্য। করছে নানান রকম অপকর্ম। কাজী ওয়াজেদ আলী হয়ে যান শারমিনের অতি কাছের মানুষ। এর জন্য শারমিনকে কখনো থানার সোর্স হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রাণী, আবার কখনো মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাধারণ ডায়েরীর বাদী হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রাণী করাসহ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল গ্রহণ করে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাত সাড়ে ১০টায় যেখানে ঘটনা ঘটে তখন সেখানে গলায় ব্যাবহার করা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, মোটা অঙ্কের টাকা দামী মোবাইল সাথে থাকার যুক্তিকতা কি? এটা অবশ্যই রহস্যজনক বা একেবারেই মিথ্যা, সাজানো বা বানোয়াট মামলা। বিবাদীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লাভলী নামের এক মহিলা এই মামলার ৪ নং আসামী। উক্ত লাভলী ও তার জামাতা মনির হোসেনের নিকট থেকে আলোচিত মক্ষিরাণী শারমিন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সৌদি আরবে পাঠাবে বলে বহুরকম টালবাহানা করে অবশেষে লাভলীকে পাঠায় সৌদি আরবে। সেখানে লাভলীর ভাগ্যে জোটে আপত্তিকর পতিতাবৃত্তি। এরপর লাভলী কাজ না করে দেশে ফিরে এসে টাকা ফেরৎ চাইলেই নানা রকম হুমকী ধমকী, থানায় মিথ্যা মামলাসহ জীবননাশের হুমকী পর্যন্ত দেয় শারমিন। কেন শারমিন ভালো কাজের কথা বলে বিদেশ পাঠালে সেখানে অন্যায় কাজ করতে হবে? এর প্রতিবাদ করলেই লাভলীর পরিবারের সদস্যদের নামে শুরু করে মিথ্যা মামলা। অথচ শারমিনের নানান অপকর্মের কথা উল্লেখ করে লাভলী থানায় একাধিকবার মামলা করতে গিয়ে তৎকালিন ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলীর নিকট থেকে কোন আইনি সহায়তা পাননি। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ৭ মে রাতে পরপর ৩বার পুলিশ হানা দেয় লাভলীর ছোট মেয়ে ঝুমুরের বাসায়। প্রথম দফায় রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় পুলিশ হানা দেয়, এর কারণ জানতে চাইলে পুলিশ অফিসার এসআই মফিজ বলেন, নিচের তলায় চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করতে আসছি। দ্বিতীয় দফায় একই বাসায় রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় এএসআই কামরুল হাসান হানা দেন। এর কারণ জানতে চাইলে কামরুল জানান, তোরা দেহব্যবসা করিস। এসময় ঝুমুরের স্বামী ঘরে ছিলেন। পুলিশ অফিসার কামরুলের এরূপ কথা শুনে ঝুমুরের স্বামী চলে যান। তৃতীয় দফায় পুলিশ হানা দেয় রাত আনুমানিক ৩টার সময়। এবারও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন কামরুল হাসান। এবার তিনি বলেন, এ বাসায় মাদক ব্যবসা হয়। এরপর ঘর তল্লাশি করেন তিনি। এসময় ঘরে ছিলো ঝুমুর, ঝুমুরের স্বামী ও ভাগিনা মেহেদি। সবশেষে মেহেদিকে ধরে নিয়ে আসে থানায়। থানায় এনে ২দিন থানা হাজতে আটক রাখে এবং ২০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবী করে।
এ ঘটনাটি লাভলী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মকর্তাদের জানালে, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা সোচ্চার হলে উক্ত আটককৃত মেহেদী হাসানকে ছেড়ে দেয়। পরে ও’সি সুপরিকল্পিতভাবে শারমিনের হয়রাণীর শিকার হয়ে যারা দিশেহারা তাদের নামেসহ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এস এম রবিউল আউয়ালের স্থলে শুধু রবিউল নাম উল্লেখ করে সাজানো ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেন। এরূপ মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করার প্রেক্ষিতে “স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও মানবাধিকার সাংবদিক কমিশন (সমাক)’র সারা দেশের সকল বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শাখার সভাপতি ও মহাসচিবসহ সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ নিন্দা ও ঘৃণা জানান।
কাজী ওয়াজেদ আলী মিরপুর থানায় দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা হয়। সুস্পষ্ট ডাকাতির অভিযোগে তিনিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
জানা যায়, ডাকাতির অভিযোগে তৎকালিন ও’সি (তখন তিনি মিরপুর থানায় ছিলেন)সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও ডাকাতির ওই ঘটনার কথা অস্বীকার করেন তিনি। সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ মে ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে উক্ত মামলাটি দায়ের করা হয়। কাজী ওয়াজেদ আলী বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, ‘অভিযোগকারী আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে নেত্রকোণার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে প্রতারণা মামলায় (৪২০(১)০৮) প্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও মালামাল ক্রোক পরোয়ানা মিরপুর থানায় আসে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গত ১৫ এপ্রিল মিরপুরস্থ বাড়িতে পুলিশ গিয়ে তাকে না পেয়ে আদালতের আদেশ অনুযায়ী তার বাড়ির মালামাল ক্রোক করে।’ ওসি জানান, ‘আমি সেখানে যাইনি। মিরপুর থানার এএসআই শহিদুল ইসলাম, পিএসআই আব্দুল্লাহ বিশ্বাস তার বাসার ১টি কম্পিউটার, ১টি টিভি, ১ সেট সোফা ও ১টি খাট সাক্ষীদের সম্মুখে ক্রোক করেন।’ প্রকৃত পক্ষে কোন আসামীকে রিমান্ড ছাড়া এভাবে অপরাধের কথা স্বীকার করেন না। ওয়াজেদ আলী এভাবেই নিজের অপকর্মের কথা আড়াল করার অপচেষ্টা করেন। ওই ডাকাতীর ঘটনায় ওয়াজেদ আলীকে মিরপুর থানা থেকে বরখাস্ত করা হয়।
মিরপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপহৃত ছাত্র শফিকুল ইসলামের কফিনবন্দী লাশ উদ্ধার হয় সাভারের জয়েনবাড়ির মকবুল মার্কেটের পেছনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে। এর আগে বনানী এলাকায় অপহরণকারীদের দেওয়া হয় মুক্তিপণের ২০ লাখ টাকা। অপহরণ ও পরে হত্যার পুরো পরিকল্পনায় ছিলেন কাফরুল থানার এসআই মনিরুজ্জামান। পুলিশি তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এলে থানার তৎকালিন ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলী এবং এসআই মনিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে ডিএমপির তৎকালিন কাফরুল থানার ও‘সি কাজী ওয়াজেদ আলীকে গত ২২ জানুয়ারি রাতে প্রত্যাহার করা হয়।
ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে দেননি। ওয়াজেদ আলী বাড্ডা থানার বর্তমান ও‘সি। রাজধানীর বাড্ডায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ময়নারবাগে ডাকা সমাবেশ করতে দেননি তিনি, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সমাবেশের আয়োজকদের একজন বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আলী হোসেন দাবি করেন, মিয়া ভাই বাহিনীর শতাধিক সন্ত্রাসীর কাছে এলাকার মানুষ জিম্মি। তাই সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী সভা ডাকা হয়। সে হিসেবে পত্রিকায় দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু ও’সি সমাবেশ করতে দেননি। আলী হোসেন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে না দিলে এলাকাবাসী ও’সির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করবে। তারা আরো বলেন, ও’সি হীনস্বার্থের জন্য এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস মাদকবিরোধী সমাবেশ করতে দেননি।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে সাভারের বলিয়ারপুরে শিশু অপহরণকারী গ্রেফতারে ফাঁদ পাতে ঢাকা জেলা ডিবি পুলিশ। ওই ফাঁদে ধরা পড়েন কাফরুল থানার এসআই মনির হোসেন ও এএসআই জাহিদ হোসেন। সে রাতেই পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তাকে কাফরুল থানায় হস্তান্তর করা হয়। তখন উক্ত থানার ও’সির দায়িত্বে ছিলেন ওয়াজেদ আলী। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কারনে কাফরুল থানার তৎকালিন ও’সিকে প্রত্যাহার করা হয়। এর কয়েকদিন পর অভিযুক্ত পুলিশের ওই দুই কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনাটি বর্তমানে পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। ছাত্র অপহরণে কাফরুল থানার সেসময়কার অফিসার ইনচার্জ (ও’সি) ওয়াজেদ আলীসহ দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডায় গুলি করে আবুল বাশার বাদশা নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে ২টার দিকে মেরুল বাড্ডার মাছবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাদশা ‘পুলিশের সোর্স’ ছিল বলে এলাকায় চাউর আছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে অস্ত্র ও গুলিসহ মাদক ব্যবসায়ী নুরু ওরফে নুরাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি বাড্ডা থানার ও’সি ওয়াজেদ আলী গণমাধ্যমগুলিকে নিশ্চিত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেরুল বাড্ডার মাছবাজারে প্রকাশ্যে বাদশাকে গুলি করে এক ব্যক্তি। এরপর সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া করে। রামপুরা ব্রিজের কাছে তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা জানান, বাদশা মেরুল বাড্ডার আনন্দনগর ১৭নং রোডে মা-বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। সে শরীয়তপুরের ডামুড্ডার মোস্তফা ফকিরের ছেলে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্ত্রী শিউলি আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে বাদশার লাশ শনাক্ত করেন। শিউলি জানান, তারা বছরখানেক ধরে বাড্ডায় থাকেন। এর আগে টঙ্গিতে থাকতেন। সেখানে থাকার সময় বাদশা মাদক মামলায় একবছর জেল খাটে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সে বাড্ডা থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। শিউলি আরো জানান, জনতা ধাওয়া করে যাকে পুলিশে দিয়েছে, সেই নুরু ওরফে নুরাকে তিনি চেনেন। সে এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েকবার সে বাদশাকে মাদক ব্যবসা করতে অনুরোধ করে। কিন্তু এতে বাদশা রাজি হচ্ছিল না। সে কারণে নুরা বাদশাকে হত্যা করতে পারে।
তবে বাড্ডা থানার ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, বাদশা নামে তাদের থানায় কোনও সোর্স ছিল না। নুরার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে সেগুলো কিসের মামলা তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী নুরার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪০-৪২টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে বাড্ডা থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এলাকাবাসী দুষছেন উক্ত থানার ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলীকে। তারই প্রত্যক্ষ মদদে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, খাল ভরাট, বালুমহাল দখল, অন্যের জমিতে মাছের ঘের নির্মাণ করে দখলে রাখা; মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে গত বাড্ডা এলাকায় বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোন কিনারা হয়নি। সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মেরুল বাড্ডার মাছের আড়তে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা তাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপের আবুল বাশার বাদশাকে গুলি করে হত্যা করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি হত্যার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজনদের কেউ কেউ নিহত হয়। বাদশা হত্যার ঘটনার পর আটককৃত আসামি নূর ইসলাম নূরী ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
স্মরণকালে বাড্ডার আদর্শনগর পানিরপাম্প এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা, বাড্ডার ছয় নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা, ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ মানিক ও যুবলীগ নেতা আবদুস সালাম। নিহত মাহবুবুর রহমান গামার বাবা মতিউর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সাইদুল নামে স্থানীয় এক ছিঁচকে সন্ত্রাসী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দেয়। মামলার বাদী অভিযোগ করেন, আফতাবনগর গরুর হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ভাগ্নে ফারুখ ও বিদেশে আত্মগোপন করে থাকা মেহেদীর নির্দেশে তার ছেলেকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয়। খুনের মিশনে অংশ নিয়েছিল আরিফ, পবন, পুলক, রমজান, মানিক, মান্নানসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী। ডিবি যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতে গরুর হাটের ইজারার বিষয়টি উল্লেখ করেনি। অথচ এই গরুর হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে ভাগ্নে ফারুক ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তারা তার ছেলেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল।
বাড্ডা থানার ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেছেন, মেরুল বাড্ডায় মাছের আড়তে বাদশা খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী শিউলী আক্তার বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নূরী ছাড়াও আরিফ, জয় ও মাসুমকে আসামি করেছেন। এদের মধ্যে আরিফের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর বানানীতে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে ঢুকে প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক মুন্সীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। আরিফ বাড্ডায় এর আগে আরো বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাড্ডা এলাকায় এসব অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভাগ্নে ফারুক গ্রুপ, মেহেদী গ্রুপ, রায়হান গ্রুপ, ডালিম-রবিন গ্রুপ, জাহাঙ্গীর-আলমগীর গ্রুপ ও অনিক গ্রুপ। আরিফ বাড্ডা এলাকার ভাগ্নে ফারুক গ্রুপের সক্রিয় ক্যাডার। অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত এসকল সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে পৃষ্টপোষকতা দিচ্ছেন স্বয়ং বাড্ডা থানার ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলী।
সম্প্রতি আনন্দনগরে দুই গ্রুপের গোলাগুলির সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আমির হোসেন নামের একজন। একই বছরের ৩ মে বাড্ডা জাগরণী সংসদ ক্লাবে আফতাবনগর পশুর হাটের ৬০ লাখ টাকা চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর একটি বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাহিনকে। একই মাসের ১৬ তারিখ বাড্ডায় দুলাল হোসেন নামের এক পুলিশ সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাদের দায়িত্ব, সেই পুলিশই এখন মানুষের নিরাপত্তা ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুন, অপহরণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং নারী কেলেঙ্কারির মতো ভয়ঙ্কর সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বাড্ডা থানায় অর্থের জন্য সাজানো মামলায় যাকে-তাকে হয়রাণী ও থানায় এনে নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে অনেকের জীবণ এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অপরাধে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকেই ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতি মাসে সদর দফতরে এমন সহস্রাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে। এ অবস্থায় ফৌজদারি অপরাধে না জড়ানো ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার না করার ব্যাপারে সারা দেশের পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক করে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা যেন কোনো অপকর্মে লিপ্ত হতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, তারপরও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রাইজ পোস্টিং পাচ্ছেন অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা। তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাড্ডা থানার ও’সি কাজী ওয়াজেদ আলী। চলবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 2 =