বুকফাটা কান্নার এই ঢেউ কয়েক ঘণ্টা পর ভাসায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামও।

48
5648

সুন্দর করে সাজানো রাশি রাশি ফুল। পাশে ফুলের মতোই প্রিয়ন্ময়ী ও অনিরুদ্ধ। তবে তারা আর সেই চঞ্চল শিশুটি নেই। ঘুমিয়ে আছে কফিনে। এরপর সারি করে একে একে সাজানো হয়েছে বড়দের মরদেহগুলো। কোনো কোনো ফুল পাশ থেকে আলতো করে ছুঁয়ে রেখেছে একেকটি কফিন। ওপরে কাগজে সাঁটানো হয়েছে নাম, পাসপোর্ট নম্বর, বক্সের নম্বর। স্বজনরা কফিন খুঁজে বের করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেউ কেউ পরম মমতায় কফিনে হাত বোলায়। স্বজনরা একে অন্যকে জড়িয়েও কাঁদে। বুকফাটা কান্নার এই ঢেউ কয়েক ঘণ্টা পর ভাসায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামও। বিকেল সাড়ে ৫টা। ইউএস-বাংলা বিমানের নিহত ২৩ যাত্রীর মরদেহের কফিনগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষমাণ। বাবার কোলে চড়ে এসেছে দুই বছর পাঁচ মাস বয়সী শিশু হিয়া।

কফিনগুলোর একটিতে রয়েছেন তার মা কেবিন ক্রু শারমীন আক্তার নাবিলা। হিয়ার বাবা ইমাম হাসান বললেন, ‘হিয়া আমাদের একমাত্র মেয়ে। কয়েক দিন ধরেই হিয়া বলছে, মাম্মা অফিসে গেছে। আসতে দেরি হবে।’ বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে মরদেহগুলো যখন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়, তখন অনেকেই কফিন স্পর্শ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। গতকাল সোমবার বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে মরদেহগুলো নেপাল থেকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে জানাজার জন্য আনা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। দুপুর ২টার পর থেকেই স্টেডিয়ামে জানাজায় অংশ নিতে অনেকে হাজির হয়। বিকেল পৌনে ৩টা থেকে নিহতদের শোকার্ত স্বজনরা আসতে শুরু করে। তাদের মধ্যে নিহত বিমান ক্রু খাজা হোসাইন মো. শাফির পরিবারের সদস্যরা জানায়, তাদের প্রথমে বিমানবন্দরে যেতে বলা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে গতকাল নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কফিনগুলো বহন করে স্টেডিয়ামের পশ্চিম প্রান্তে একটি মঞ্চে সারিবদ্ধভাবে রাখতে শুরু করেন। জানাজা শুরু হয় আসরের নামাজের পর। পরে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সারোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কফিনে পুষ্পস্তবক দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জানাজায় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরাসহ তিন বাহিনীর কর্মকর্তাদের অনেকে অংশ নেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকনও এতে শরিক হন। জানাজার পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন। বিকেল পৌনে ৩টায় আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের স্বজনদের মধ্যে প্রথমে আসেন নিহত কো-পাইলট পৃথুলা রশীদের মা রাফেজা খাতুন, বাবা আনিসুর রশীদ, খালা, খালাতো বোনসহ আটজন। পৃথুলার মা জানান, মেয়ের সঙ্গে গত ১২ মার্চ সকালে শেষ কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘ফি আমানিল্লাহ।’ বিডিবিএল ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী আক্তারা বেগমকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন নেপালে। জীবনে এটাই ছিল তাঁদের প্রথম আকাশপথে ভ্রমণ। নিহত নজরুল দম্পতির দুই মেয়ে নাজনীন আক্তার কাঁকন ও নারগীজ আক্তার কনক, নজরুল ইসলামের ভাগ্নে সাকিবসহ আরো কয়েকজন আত্মীয় এসেছিল আর্মি স্টেডিয়ামে। নজরুল ইসলামের ভাই একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই নজরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’ সানজিদা হক বিপাশা ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) অ্যাসোসিয়েট কো-অর্ডিনেটর (যুগ্ম সমন্বয়কারী)। বিপাশা, তাঁর স্বামী রফিক জামান রিমু ও সাত বছরের ছেলে অনিরুদ্ধ জামানের লাশ নিতে এসেছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও তাঁর সহকর্মীরা। রানার অটোমোবাইলসের সিনিয়র ম্যানেজার এস এম মাহমুদুর রহমানের বৃদ্ধ বাবা এস এম মশিউর রহমান এসেছিলেন ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার জন্য। এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী সানজিদা আফরিনও। স্টেডিয়ামের গ্যালারির চেয়ারে বসে তাঁদেরকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাবা অনেকবার নেপালে গিয়েছে। এবার বাবাটা কেন ফিরে আসতে পারল না? আল্লাহ তুমি আমাকে নিলা না কেন?’ নিহত নুরুজ্জামান বাবুর স্ত্রী সুলতানা আক্তার তাঁর ৮-৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন আর্মি স্টেডিয়ামে। বুকে ছিল নুরুজ্জামানের ছবি। কান্নায় তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। ছেলে মায়ের হাত চেপে ধরে ছিল। তার চোখেও পানি। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় নুরুজ্জামান। সে ছেলেকে শেষ বলে যায়, ‘বাবা ভালো থেকো’।”ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান নিহত কেবিন ক্রু খাজা হোসেন সাফির মা দারাক শাহ সাইফুল্লাহ, শাশুড়ি শাম্মী ফেরদৌসী রহমানসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনরা এসেছিল। তারা জানায়, সাফির স্ত্রী সাদিয়া রহমানও একজন কেবিন ক্রু। তিনি দোহা ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময় খবর পান তাঁর স্বামী যে বিমানে নেপালে গিয়েছিলেন সেটি দুর্ঘটনাকবলিত। এ কারণে তিনি দোহা ফ্লাইটে আর দায়িত্ব পালন করতে যাননি। এক বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। নিহত উম্মে সালমার লাশ নেওয়ার জন্য এসেছিলেন তাঁর ভাশুর জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী উম্মে সালমা প্ল্যানিং কমিশনে চাকরি করতেন। তাঁর স্বামী মাসুদ উদ্দিন ব্রিটিশ টোব্যাকো কম্পানির কর্মকর্তা। তাঁর আরেক সহকর্মীর সঙ্গে তিনি নেপালে যাচ্ছিলেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিহত রকিবুল হাসান স্ত্রী রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইমরানা কবীর হাসিকে নিয়ে নেপালে গিয়েছিলেন। রকিবুলের মা সেলিনা পারভিন জানান, রকিবুল তাঁর একমাত্র ছেলে। সেলিনা পারভিনকে স্বজনরা কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছিল না। তাঁর কান্নায় অনেক সংবাদকর্মীও অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলেন না। সেলিনা পারভিন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার বাবাই ছিল আমার সব। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? বাবা, তুমি আমারে তোমার সঙ্গে নিয়া গেলা না কেন?’ রকিবুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। সাবেক যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম ও তাঁর স্ত্রী সাবেক কলেজ শিক্ষক হুরুম নাহার বিলকিস বানু দুজনই নিহত হন। তাঁদের দুই ছেলে কায়সার ইমাম ও তৌকির ইমাম দুজনই কানাডাপ্রাবাসী। মা-বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁরা দেশে এসেছেন। গতকাল এ দুই ভাই আর্মি স্টেডিয়ামে আসেন মা-বাবার লাশ নিতে। কায়সার  বলেন, ‘আমরা এতিম হয়ে গেলাম।’ মিনহাজ বিন নাসিরের মরদেহ নিতে এসেছিলেন তাঁর বড় ভাই মিরাজ বিন নাসির। তিনি বলেন, ‘লাশ আগে বাসায় মায়ের কাছে নিয়ে যাব। তারপর দাফনের ব্যবস্থা হবে।’ মিনহাজ বিন নাসিরের স্ত্রী আঁখি মনিও ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁদের বিয়ে হয় গত ৩ মার্চ। আঁখি মনির মা হাসনা বেগম জানান, বিয়ের আগে সব মার্কেটিং নিজেই করেছিলেন মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে নেপালে হানিমুনে গিয়েছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী গিয়েছিলেন তাঁর ভাগ্নে সাংবাদিক ফয়সল আহমেদের লাশ নিতে। ফয়সল আহমেদের সহকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর ভিভিআইপি টার্মিনালের সামনে বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান অবতরণ করে নেপালে ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের পাইলট, কো-পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ২৩ যাত্রীর লাশ নিয়ে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিমানমন্ত্রী, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ৪টা ১৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর কফলিফটার দিয়ে বিমানের ভেতর থেকে কফিনগুলো বের করতে থাকেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা। সারিবদ্ধ কফিন দেখে অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। বিমান অবতরণের আগেই আলিফ পরিবহনের লাশবাহী গাড়িগুলো সারিবব্ধভাবে রাখা হয়। লাশ আনাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। এর আগে নেপালের কাঠমাণ্ডুয় বাংলাদেশ দূতাবাসের পাকা উঠানে মৌলানা শফিকুর রহমান নিহতদের স্বজন, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে জানাজা সারেন। নিহতদের পরিবারের নারী স্বজনরা ছলছল চোখে অপলক তাকিয়ে ছিল একেকটি কফিনের দিকে। তাদের সঙ্গেই ছিলেন নেপালে বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত মাসফি বিনতে শামস। পরে স্বজনরা কফিন খুঁজে বের করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেউ কেউ পরম মমতায় কফিনে হাত বোলায়। স্বজনরা একে অন্যকে জড়িয়েও কাঁদে। উপস্থিত সবার এ সময় দৃষ্টি কাড়ে প্রিয়ন্ময়ী ও অনিরুদ্ধর কফিনের দিকে। প্রিয়ন্ময়ীর বাবা প্রিয়কের মরদেহ একই প্রাঙ্গণে থাকলেও মা-মেয়ের কফিনের মাঝে ছিল অনেক দূরত্ব। পরে বাবা ও মেয়ের সন্তানের মরদেহ উঠেও যায় আলাদা দুই পরিবহনে। নেপালে সকাল ৭টা থেকেই দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাঠমাণ্ডু টিচিয় মেডিক্যালের মর্গ থেকে দুটি বড় আকারের কাভার্ড ভ্যান আর একটি জিপে করে ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ দূতাবাসে নিয়ে আসতে শুরু করেন। সামনে-পেছনে নেপালি পুলিশের কর্ডনের মধ্য দিয়ে ৮টা নাগাদ মরদেহগুলো পৌঁছানো হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণে। জানাজা শেষ করেই আবার মরদেহগুলো একই কাভার্ড ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে। এই বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণকালেই গত ১২ মার্চ মারা যান মোট ৪৯ জন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২২ জন নেপালি ও একজন চীনা রয়েছেন। দূতাবাস থেকে সকাল ৯টা নাগাদ মরদেহগুলো বিমানবন্দরে নেওয়া হলেও বাংলাদেশ থেকে আসা বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানটি মরদেহগুলো নিয়ে দেশের উদ্দেশে আকাশে উড়াল দেয় দুপুর আড়াইটায়। এর এক ঘণ্টা আগে নিহতদের স্বজনদের নিয়ে ইউএস-বাংলার আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশে। বাংলাদেশ থেকে আসা মেডিক্যাল টিমের সদস্যরাও যান ওই ফ্লাইটে। সঙ্গে করে তাঁরা নিয়ে গেছেন সর্বশেষ কাঠমাণ্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থাকা বাংলাদেশি আহত যাত্রী কবির হোসেনকে। নরভিক হাসপাতালের ইয়াকুব আলী গেছেন দিল্লিতে। দুপুর সোয়া ২টায় (নেপালের স্থানীয় সময় ২টা) নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে লাশবাহী ৬১-২৬৪০ নম্বর বিমানটি। এর কিছুক্ষণ আগে নিহতদের স্বজনদের নিয়ে ইউএস-বাংলার আরেকটি বিমান ঢাকায় এসে পৌঁছে। মরদেহ গ্রহণের জন্য উপস্থিত হন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল নাইম আহম্মেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর থেকেই শেখ হাসিনার সরকার স্বজনহারাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। তবে কী সহযোগিতা করা হবে এ ব্যাপারে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। সময়মতো সব কিছু শেষ হবে বলে জানান তিনি।বিমান সূত্র জানায়, নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের লাশ দেশে আনা হয়। তাঁরা হলেন বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, এস এম মাহমুদুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা মিতু, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. রফিকুজ্জামান, সানজিদা হক, অনিরুদ্ধ জামান, মো. হাসান ইমাম, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, তাহারা তানভীন শশী রেজা, ফ্লাইটের পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ ও মিনহাজ বিন নাসির, আঁখি মনি, এফ এইচ প্রিয়ক, শারমীন আক্তার নাবিলা, উম্মে সালমা, মো. মতিউর রহমান, খাজা হুসাইন ও মো. নুরুজ্জামান। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশর ২৪ জনকে শনাক্ত করা গেছে। সর্বশেষ গতকাল শনাক্ত করা ব্যক্তি হচ্ছেন নজরুল ইসলাম। বাকি দুজন বাংলাদেশির একজন পিয়াস রায়, আরেকজন আলিফুজ্জামান বলে নিশ্চিত থাকলেও কোন মরদেহ কার, তা শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি।রাষ্ট্রদূত মাসফি বিনতে শামস গতকাল সকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, নজরুলের লাশ শিগগিরই ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে অন্য দুজনকে আলাদা করে শনাক্ত করতে ডিএনএর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের ফরেনসিক টিমের বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, সর্বশেষ নজরুলের মরদেহ শনাক্ত করা হয় তাঁর পরনের প্যান্টে রাজশাহীর একটি দরজি দোকানের লোগো অক্ষত থাকায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three − 1 =