বাংলাদেশিদের ভিসা লাগাতে প্রচুর টাকা জরিমানা

0
536

সৌদি আরবে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার পর নির্ধারিত সময়ে এমআরপি পাচ্ছেন না প্রবাসীরা। এনিয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসী বাংলাদেশিরা চিন্তিত। বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা প্রকাশ করছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে বচসার ঘটনাও ঘটছে।

বিষয়টি সম্পর্কে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে গত ১২ই মার্চ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন  রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর গোলাম মসিহ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা সময়মতো এমআরপি না পাওয়ার কারণে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন। কারণ সৌদি আরবে শতকরা প্রায় ৯৯% প্রবাসীদের পাসপোর্ট জমা থাকে তাদের স্পন্সর বা কপিলের হাতে। যে কারণে অনেক সময় প্রবাসীরা ভিসা নবায়নের (আকামা) আগ মুহূর্তে পাসপোর্ট হাতে পায়। তখন দেখা যায় অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম। ৬ মাসের কম বা পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকলে ভিসা লাগানো সম্ভব হয় না। তখন প্রবাসীরা দ্রুত পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দূতাবাসে ছুটে যান। কিন্তু বর্তমানে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ঠিক সময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে পারছে না। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিসা লাগাতে প্রচুর টাকা জরিমানা চলে আসছে। জরিমানার টাকা অনেক কপিল বা স্পন্সররা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অনেক প্রবাসীকে বাধ্য হয়ে দেশে চলে আসতে হচ্ছে। আবার জরিমানা দিয়ে ভিসা লাগালেও তা সৌদি প্রবাসীদের বেতন থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ার কারণে হঠাৎ ভিসা ট্রান্সফারসহ বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, সকাল হলেই সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক লোক লাইনে দাঁড়ান। দ্রুত পাসপোর্ট চেয়ে অনুনয়-বিনয় করেন তারা। এদের মধ্যে অনেককেই পাসপোর্ট না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয়। গেল সপ্তাহে বিষয়টি সম্পর্কে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজি মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রিজওয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন অ্যাম্বাসেডর গোলাম মসিহ। পাসপোর্টের ডিজির কাছে ১২ই মার্চ পাঠানো চিঠিতে অ্যাম্বাসেডর মসিহ বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফেডেক্স (বহুজাতিক কুরিয়ার সার্ভিস) আমাদের কাছে পাসপোর্ট সরবরাহ করছে না। যার ফলে আমাদের মিশন/কনস্যুলেট মারাত্মক সমস্যার মুখে পড়েছে। সেবা গ্রহীতারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে অসুবিধার মুখে পড়েছেন। ১০টি চালানে এমআরপি শিপমেন্টের তথ্য তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ই মার্চ পর্যন্ত ১০টি চালানে ফেডেক্সের মাধ্যমে শিপমেন্টের তথ্য আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে একটি চালানের পাসপোর্ট আমরা গ্রহণ করেছি। বাকি চালানগুলো সম্পর্কে সৌদি আরবের ফেডেক্স আমাদের কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। এতে বলা হয়েছে, প্রথম সচিব (পাসপোর্ট অ্যান্ড ভিসা)-এর সঙ্গে আলাপ করে যতটুকু জেনেছি আপনার অধিদপ্তর থেকেই পাসপোর্ট পাঠাতে দেরি হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আমাকে দিয়েছেন। আপনার দিক থেকে বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করছি। অ্যাম্বাসেডর চিঠিতে বলেছেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশি সৌদি আরবে কাজ করছে। তারা বছর বছর ছুটিতে দেশে আসতে বা আকামা নবায়ন করতে বৈধ পাসপোর্টের প্রয়োজন। এ জন্য বিষয়টি সম্পর্কে জরুরি নজর দিলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপকৃত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বাসেডর গোলাম মসিহ’র চিঠির সঙ্গে ১০টি লটে পাসপোর্টের সংখ্যা সম্পর্কিত একটি ই-মেইল বার্তা দেয়া হয়েছে। ওই ই-মেইল বার্তায় দেখা যায়, ১ম লটে ১৮৬টি, দ্বিতীয় লটে ১৭২টি, তৃতীয় লটে ১৭৬টি, চতুর্থ লটে ১৮৭টি, পঞ্চম লটে ১৯২টি, ষষ্ঠ লটে ১৮৮টি, সপ্তম লটে ১৯২টি, অষ্টম লটে ১৯২টি, নবম লটে ১৮৬টি ও দশম লটে ১৮৮টি পাসপোর্ট থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব পাসপোর্ট এখনো বুঝে পায়নি রিয়াদস্থ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 1 =