পানি যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই

0
5996

পানির অপর নাম জীবন। মানুষ, জীব-জন্তু, প্রকৃতি সব মিলিয়ে পৃথিবীর প্রাণ পানি। কিন্তু বাংলাদেশের এই সময়ের কঠিন বাস্তবতায় আমরা বলতে পারি, পানির অপর নাম মৃত্যু। পানি এই মৃত্যুর অন্যতম ঘাতক। আমাদের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যে এগিয়ে আসছে ঘাতক পানি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় টেলিভিশন সংস্থা সিবিএস ১৯৯৯ সালের জুন মাসে প্রচারিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশে পানি পান করে প্রতি ১০ জনের একজন মারা যেতে পারে। ভয়াবহ সমস্যা আর্সেনিক বিষয়ক ওই  প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকায় বাংলাদেশের মতো এমন ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনীকে তলব করা হতো।’

অন্যদিকে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ ক্যালির্ফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জন স্মিথ বাংলাদেশের পানিসংক্রান্ত এই সমস্যা সম্পর্কে বলেছেন, ‘ভূপালের গ্যাস বিপর্যয়, চেরনাবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়, জাপানের মার্কারি বিপর্যয় সব কিছুকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশের আর্সেনিক বিপর্যয়। এইসব বিপর্যয়ে মৃত্যুর সংখ্যা হাজারে হিসাব করা হলেও বাংলাদেশে আর্সেনিক বিপর্যয়ের কারণে তা লাখে হিসাব করতে হবে।’ এমন মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ওপরের নিরাপদ পানিও লবণ বিষে পরিণত হচ্ছে। জনবায়ু পরিবর্তনে এখন তিন কোটি মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। ২০০৭ সালের সিডর আর ২০০৯ সালের আইলা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪০ লাখ মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এক লাখ মানুষ এখন জলবায়ু উদ্বাস্তু। আর ১০ লাখ হেক্টর জমি লবণে পরিণত হয়েছে। মিঠা পানির সব আধার লবণ বিষে ভরে গেছে। তৃষ্ণা নিবারণের নিরাপদ পানিও হাত ছাড়া হয়ে গেছে। এখন উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ পানির জন্য যুদ্ধ চলছে। এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়ে আমরা আজ ‘বিশ্ব পানি দিবস’  উদযাপন করছি। আমরা লক্ষ্য করছি, জল শিল্প আর জলকেন্দ্রিক জীবিকার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষি, শিল্প কারখানা, গৃহস্থ, পরিবেশসহ আমাদের জীবন-জীবিকার অত্যাবশক পানি হলেও তা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পৃথিবীর ১৫০ কোটি মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম উপাদান পানি। কিন্তু এই পানি সোনার চেয়েও দামি হয়ে যাচ্ছে। অনিরাপদ পানির কারণে প্রতিবছর তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। পানির অভাবে বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিক, জেলে, মাঝি বেকার হয়ে পড়ছে। জনস্বাস্থ্য, নৌচলাচল ব্যাহত, কৃষি বিপর্যয়, মৎস্য সম্পদ হ্রাস, গবাদি পশু লালন পালনে ঝুঁকিসহ পানির কারণে বছরে শত শত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সবাই জানি পানি কী। পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ স্থল। পানির জোয়ার, পানির সাগরের মধ্যে আমরা বসবাস করলেও আমাদের জানা প্রয়োজন, পৃথিবীর ১০০ ভাগ পানির মধ্যে মাত্র এক ভাগ পানি পানযোগ্য অর্থাৎ নিরাপদ পানি। বাকি ৯৯ ভাগ পানি লবণ মিশ্রিত আর বরফ। এখন এক ভাগ যে নিরাপদ পানি রয়েছে তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ। অর্থাৎ এই পানি আমাদেরকে কষ্ট করেই অর্জন করতে হয়। আমাদের আরো মনে রাখা দরকার, প্রতি ২১ বছরে পানির চাহিদা দ্বিগুণ হচ্ছে। আমাদের পানি সম্পদের পরিমাণ তিন হাজার ৬২৩ বর্গ মাইল। আর আমরা এক কোটি নলকূপের মালিক। আমাদের দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান সঠিক নয়। কয়েক বছর আগে ৯৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পান করলেও বর্তমান এই হার নেমে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা কমে বৃটিশ শাসন আমলের পর্যায়ে পৌঁছাবে। বর্তমানে সঠিকভাবে জরিপ করা হলে নিরাপদ পানি পান করার সংখ্যা ৮০ শতাংশের আরো কম হবে একথা পানি বিশেষজ্ঞরা কবুল করবেন। ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউনিসেফের পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক প্রধান কলিন্স ডেভিস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে আর্সেনিকের কারণে গত তিন বছরে নিরাপদ পানির সরবরাহ ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবী এগুলেও আমরা খুবই জরুরি একটি বিষয় পানির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের জানা দরকার, নিরাপদ পানি পান করার অধিকার প্রতিটি মানুষের রয়েছে। এই অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু আমাদের পানি সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি। এই সর্বনাশকে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে আমাদের নাগালের বাহিরে চলে যাবে নিরাপদ পানি। কোমল পানীয়, দুধের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামেও পানি কিনতে পাওয়া যাবে না। এই মূল্যবান পানি সম্পদের সর্বনাশের নেপথ্যে রয়েছে আর্সেনিক, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, অতিরিক্ত আয়রণ, মলমূত্র, নদী শাসন, নদী দখল, নদী ভরাট, বৃক্ষ নিধন, অনাবৃষ্টি, খরা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি। বাংলা সেঁকো বিষই হচ্ছে আর্সেনিক। ১৯৯৩ সালের আগে বাংলাদেশের মানুষ আর্সেনিক সম্পর্কে অবগত ছিল না। ওই বছর প্রথম নলকূপের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়ে। নলকূপের পানির সঙ্গে ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক বের হয়ে আসছে। এর কোন রং, বর্ণ, স্বাদ নেই। আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পান করলে পেটের পীড়া, চর্ম রোগ, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার এমনকি মৃত্যু হতে পারে। ইতিমধ্যে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পান করে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশে আর্সেনিক আক্রান্ত ১২ হাজার রোগী রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভে পরিচালিত এক জরিপে ৬১টি জেলার ৫৮ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই পরিসংখ্যানকে ভিত্তি ধরলে দেশের আট কোটি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। সরকার, এনজিও ফোরামসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আর্সেনিক সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে। ১৯৯৯ সালে সরকার ১৯৭ কোটি টাকার ‘বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফেজ ১ এর অধীন দেশের ছয় জেলার ছয় উপজেলা গোপালগঞ্জ সদর, বরিশালের উজিরপুর, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, পাবনার ইশ্বরদী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামার ও চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার নলকূপের পানি পরীক্ষা, রোগী শনাক্তকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শেষ হয়েছে। ৩৫টি উপজেলার ছয় লাখ ২৫ হাজার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে ৪৬ শতাংশ নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের সন্ধান পাওয়া যায়। নলকূপের পানির পরিবর্তে বিকল্প পানির উৎস্য হিসেবে তিন কলস ফিল্টার, পাতকুঁয়া, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পুকুর ফিল্টার, আর্সেনিক আয়রন রিমুভ্যাল প্লান্ট, গভীর নলকূপ বসানোর কাজ পরীক্ষামূলকভাবে করা হচ্ছে। তবে নানা কারণে এসব বিকল্প পানির উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।  ভুক্তভোগীরা এই পদ্ধতিগুলো আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করছে না। কাজেই শেষ পর্যন্ত বিকল্প পানির উৎস্য কি হবে? তা এখনো পরিষ্কার নয়। আমাদের জানা প্রয়োজন, নিয়মিত আর্সেনিক মিশ্রিত পানি পান করলে একজন মানুষ ‌এক  থেকে ২০ বছরের মধ্যে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই আমরা পাতালের দানব আর্সেনিকের থাবার মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছি। পানির অন্যতম শত্রু রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। খাদ্য বিপ্লবের নামে যত্রতত্র সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ওপরের পানি নীচের পানি দূষিত হচ্ছে। মাছ ছাড়াও উপকারী পোকা মাকড় মরে যাচ্ছে। ফলে জীব বৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর ৫০ হাজার মেট্রিকটন কীটনাশক এদেশের মাটিতে ব্যবহার করার কারণে তা পানির সঙ্গে মিশে দেশের সব পানি সম্পদকেই দূষিত করে তুলছে। এর মধ্যে দুই হাজার টন কীটনাশক একপর্যায়ে বঙ্গোপসাগরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। প্রতিবছর ভয়াবহ আকারে কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। ১৯৯৭ সালে আট হাজার মেট্রিকটন কীটনাশক আমদানি হয়। ২০০০ সালে ১৬ হাজার মেট্রিকটন, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৭৩১ মেট্রিকটন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৪৫ হাজার ১৭২ মেট্রিকটন, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ৫২ হাজার ২৯৫ মেট্রিকটন, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪৯ হাজার মেট্রিকটন কীটনাশক দেশে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবছর কীটনাশক আমদানিতে খরচ হচ্ছে হাজার কোটিরও বেশি টাকা। পানির আরেক শত্রু কলকারখানা, ক্লিনিকের বর্জ্য। দেশে প্রায় এক লাখ ছোট বড় কলকারখানা রয়েছে। অনেক কলকারখানা নদীর কিনারে প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ করে ট্যানারি, ডায়িং, পাটকল, প্লাস্টিক কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, রঙের কারখানা, ঢালাই কারখানার বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করছে। ইতিমধ্যে ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর পানি বর্জ্যের কারণে বিষ হয়ে গেছে। যশোরের অভয়নগরের ভৈরব নদীর পানি বিষ হওয়ার কারণে নদীর সব মাছ মরে যাচ্ছে। ক্লিনিকের বর্জ্যও পানিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছে। এ ছাড়া জাহাজের জ্বালানি, বর্জ্য সমুদ্রে নির্গত হওয়ার কারণে সমুদ্রের পানিরও ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি মরে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণি। পানির সঙ্গে স্যানিটেশন ওতপ্রোতোভাবে জড়িত। এখনো  অনেক গ্রামে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পায়খানা না থাকার কারণে বিশেষ করে নারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা রাতে ঘুমাতে পারে না। পানি কম খায়। ভোররাতে মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য সব সময় উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে হয়। দেশে ২০ হাজার মেট্রিকটন মল প্রতিদিন খোলা জায়গায় ত্যাগ করা হয়। এক কেজি মল সাড়ে তিন বর্গ কিলোমিটার পানিকে দূষিত করতে পারে। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার কারণে তা পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করছে। ফলে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টায়ফয়েড, চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই পানিবাহিত রোগে প্রতিবছর লক্ষাধিক শিশু মারা যাচ্ছে। নদী শাসনের কারণে নদী ভরাট হয়ে পানিসম্পদের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের চার হাজার মাইল নদী খাল রয়েছে। শুধুমাত্র নদী শাসন, অপরিকল্পিত বাঁধ, রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণে অন্তত এক  হাজার ৬০০ মাইল নদী খাল ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে দেশে প্রতিবছর আড়াই হাজার টন পলি জমা হয়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে অনেক বেগবান বড় নদীও উধাও হয়ে যাবে। আর নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানি সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, সমুদ্র থেকে জোয়ারের পানিতে লবণ উঠে আসছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চিত্রা, নবগঙ্গা, ভৈরব, কপোতাক্ষসহ অন্যান্য নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব নদীর পানি ইতিমধ্যে দূষিত হয়ে গেছে। আবার উজানে ভারত সরকারের ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ৩৭ ভাগ জমি ও ৩৫ ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। উজানের পানির ওপর নির্ভরশীল ৫৪টি নদী সংকটের মধ্যে পড়েছে। ১৭০টি নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এমনকি দেশের অন্যতম নদী পদ্মাও আজ ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। গভীর নলকূপের দূরত্ব এক হাজার ৮০০ ফুট থাকার নিয়ম থাকলেও পানি নীতিকে অগ্রাহ্য করে ৩০০-৪০০ ফুটের মধ্যে লাখ লাখ নলকূপ স্থাপন করে ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই বিকল হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার নলকূপ। গ্রাম শহর সর্বত্র দেখা দিচ্ছে নিরাপদ পানির সংকট। এই সংকট দূর করার জন্য ধনী লোকরা জলমোটর বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি লুট করে নিচ্ছে। বাংলাদেশে নিরাপদ পানির যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে সহসাই পরিত্রাণের কোনো পথ নেই। এই সমস্যার সমাধানের জন্য সরকার, দাতা সংস্থা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছাড়াও দেশবাসীকে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে। আর্সেনিক সমস্যার সমাধানের জন্য ভালোমন্দ বিবেচনা করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পানির উৎসের সন্ধান করে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপগুলো সিল করার প্রয়োজন। কৃষি কাজের জন্যে ভূ-পৃষ্ঠের পানিকেই ব্যবহার করতে হবে। এ জন্যে জরুরি ভিত্তিতে দেশের হাজামজা সব খাল বিল সংস্কার করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে খাল বিলের পানি পরিশোধন করে পানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিবছর দেশ বন্যায় তলিয়ে যায়। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয়। এ কারণে বন্যার পানি ধরে রেখে তার ব্যবহার করা যেতে পারে। পানিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে শতভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজন। খরা অনাবৃষ্টি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বনায়ন কর্মসূচির অধীন দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে সবুজ অরণ্য গড়ে তুলতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকীকরণ করে ক্ষতিকর বর্জ্যকে ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে। যত্রতত্র রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ কারো পানির মঙ্গলের জন্য জরুরি। বাঁচাতে হবে আমাদের পানির ভাণ্ডার খাল-বিল, নদী-নালাকে। নদীমাতৃক এই দেশের জল ও জীবিকার স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ছাড়া আমাদের পানি যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − one =