তুলা চাষ করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী

31
1913

তিস্তার চরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কার্পাস তুলা চাষ হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। এরই মধ্যে তুলা চাষ করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা এলাকায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার তীস্তার বিস্তীর্ণ চরে তুলা চাষ হয়েছে। হারাগাছের ধুমগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার জেগে উঠা চরে বেলে-দোআঁশ মাটিতে কৃষক কার্পাস তুলা (আপল্যান্ড কটন) চাষ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

ধূসর বালি মাটিতে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় চাষিরা এক রকম হতাশায় পড়েছিলেন। এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তুলা উন্নয়ন বোর্ড আশার প্রদীপ নিয়ে আসে কৃষকের মধ্যে। ২০১৬ সালে পরীক্ষা মূলকভাবে দুই-একজন উৎসাহী চাষিকে দিয়ে পরীক্ষামূলক তুলা চাষের ব্যবস্থা করে। প্রথম বছরেই চাষিরা তুলা চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় পরের বছর ২০১৭ সালে ওই এলাকার অনেক চাষি তুলা চাষে এগিয়ে আসেন। চাষি নুরুল আমিন দাজু ও বাদশা মিয়া জানান, তারা দুজনে চলতি মৌসুমে ২০ একর জমিতে রুপালি চায়না, ডিএমথ্রি, লালতীর সিভি-১২ জাতের কার্পাস তুলা চাষ করেন। গেল মৌসুমে তুলা চাষ করে লাভের মুখ দেখায়, এবার তারা দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে তুলা চাষ করেন। ধুমগাড়া গ্রামের তুলা চাষি খোরশেদ আলী জানান, হাইব্রিড জাতের তুলা একরে ৫০ মন পর্যন্ত ফলন হয়। প্রতি মন তুলা ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। জুলাই আগস্ট মাসে রোপণ করা তুলা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে উত্তোলন করা হয়। এ তুলা দিয়ে উন্নতমানের সুতা ও কাপড় তৈরি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। তাদের উৎপাদিত তুলা রংপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ডও ক্রয় করে থাকে। ফলে তুলা বিক্রয় করতে বেগ পেতে হয় না। তুলা উন্নয়ন বোর্ড রংপুর জোনের কটন ইউনিট অফিসার মো. আ. মান্নান সরকার জানান, চলতি মৌসুমে হারাগাছ ধুমগাড়া অঞ্চলে ১৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কার্পাস তুলা (আপল্যান্ড কটন) চাষ করা হয়েছে। কৃষককে ঋণের মাধ্যমে বীজ, সার সরবরাহসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ চাষি এ এলাকায় তুলা চাষ করেন। তুলা চাষে তেমন খরচ হয় না। বীজ সার ছাড়া পাঁচ থেকে ছয়বার সেচ দিয়ে তুলা ঘরে তোলা যায়। তুলা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, কাউনিয়ার চরাঞ্চলের মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। এলাকার প্রান্তিক চাষিরা কৃষি বিভাগের অন্য ফসলের মতো তুলা চাষে প্রণোদনা দাবি করেন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সারওয়ারুল হক জানান, বিগত কয়েক বছর থেকে তিস্তার চরে বিস্তীর্ণ এলাকায় তুলা চাষ করে চাষিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। দিন দিন তুলা চাষে তাদের আগ্রহ বাড়ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 − six =