দুর্নীতির শীর্ষে শহীদ জিয়া স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

119
6812

মোঃ আবদুল আলীমঃ
ঢাকার যাত্রাবাড়ি শহীদ জিয়া স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ ফতেমা রশিদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে ডুবতে বসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। দুর্নীতিবাজ এ শিক্ষয়িত্রী ০১-১১-১৯৯৩ তারিখে স্কুল শাখায় ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে একে একে কলেজ শাখায় ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক, ভারপ্রাপ্ত অদ্যক্ষ ও অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষ পদে বসে পড়েন। এই দীর্ঘ সময় তিনি অনিয়ম দুর্নীতি করে একদিকে গড়ছেন টাকার পাহাড়, অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে এপর্যন্ত অসংখ্যবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এক সময় ছাত্রী সংখ্যা প্রচুর থাকলেও বতমানে তা ক্রমশ: কমে আসছে। ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ:পতনের জন্য দায়ি করছেন অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের দুর্নীতিকে। শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বার্ডের চেয়ারম্যান এবং সচিব বরাবর একাধিবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে রহস্যের ব্যপার হচ্ছে এসব অভিযোগের বিষয়ে আজ পর্যন্ত তদন্তটুকুও হয়নি।

 

অভিযোগকারীদের কাছ থেকে তাদের হতাশার কথা শোনা গেছে। অনেক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেককে জানান যে, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারনে অনেক শিক্ষককে তিনি বরখাস্ত করেছেন। প্রায় দুই বছর অতিক্রম হলেও এই বরখাস্ত অবস্থা থেকে শিক্ষকগন উঠতে পারেন নাই। শিক্ষা অধিদপ্তরের আদালত এসব বরখাস্তকৃত শিক্ষকদের বরখাস্ত থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য আদেশ দিলেও সে আদেশ মানছেন না ফাতেমা রশিদ। তিনি কাগজপত্র জলিয়াতি করে কলেজের অভিজ্ঞতাকে স্কুলের অভিজ্ঞতার সাথে যোগ করে দেখিয়েছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এমপিওর আবেদনের কাগজপত্রের সাথে কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক বুলবুল মির্জাকে অধ্যক্ষ সাজিয়ে আবেদনপত্র জমা দেন। অথচ বুলবুল মির্জা একদিনের জন্যও অধক্ষের দায়িত্ব পানননি। এর প্রমাণ হচ্ছে কলেজের প্রতিটি কাগজপত্রে অধ্যক্ষ হিসেবে ফাতেমা রশিদের স্বাক্ষর রয়েছে। বুলবুল মির্জা কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত অধ্যক্ষ ছিলেন তা তদন্ত করলে প্রাণিত হবে। কলেজের নামে মাইক্রো ক্রয় করে তিনি এগারো লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ তিনি ৫ লাখ টাকায় মইক্রো ক্রয় করে ১৬ লাখ টাকা কলেজ থেকে তুলে নেন। ক্রয়ের কাগজপত্র অদ্য পর্যন্ত তিনি কলেজে দাখিল করেননি বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা গেছে। প্রচুর সংখ্যক শিক্ষক প্রায় দু-বছর যাবত বেতন পাচ্ছেন না অথচ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ প্রতি মাসে প্রচুর টাকা উত্তোলন করছেন। প্রশাসনের কাছে দ্বায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে তিনি ২০০৬ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেতন+কলেজ শাখার ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক হিসেবে বেতন+ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক হিসেবে সরকারী বেতনের অংশ উত্তোলন করেন।
অধ্যক্ষ হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কলেজ শাখায় ছাত্রীদের কাছ থেকে ১ দিন গড় হাজির থাকার কারনে ৫০ টাকা করে জরিমানা আদায় করেন। আদয়কৃত টাকা কলেজ তহবিলে জমা না করে তিনি আত্মসাৎ করেন মর্মে অভিযোগে প্রাকশ। একটি রেজিষ্ট্রারে জরিমানার টাকার হিসাব রাখা হয়। খদিজা নামে একজন কলেজ শিক্ষক উক্ত রেজিষ্ট্রার সংরক্ষন করেন। তার বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর দাখিল করা অভিযোগ থেকে জানা যায় স্কুল শাখার ১ম শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্রীদের থেকে প্রাপ্ত বেতন ও সেশন ফি এর টকা জমা না করে তিনি আত্মসাৎ করেন। ২০০৯ থেকে অদ্য পর্যন্ত এভাবে তিনি প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন। তিনি তার নিজের অফিস কামরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে টাইলস, হাই কমোড, দামী পর্দা দিয়ে সজ্জিত করে রেখেছেন। প্রতি পিচ পর্দার মূল্য ৫,০০০ টাকা। অথচ শিক্ষার্থীরা বসে ভাঙা বেঞ্চে, রুমের দরজা জানালা নেই এবং টয়লেটগুলো ময়লা, দুর্গন্ধ ও ব্যবহারের অনুপযোগি। ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ এটাচ বাথরুমের সাথে থাকার ফলে দুর্গন্ধে ও মশার কামড়ে টিকতে পারছে না। যেখানে শিক্ষার্থীদের বসার মত পর্যাপ্ত রুম নেই সেখানে নিচ তলার ৪ টি শ্রেণী কক্ষ ভেঙে প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে তার কয়েকজন অসৎ তাবেদার নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্যান্টিন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে চাচ্ছেন কলেজ প্রাঙ্গনের ভেতরে। এর আগে তিনি কলেজ ভবনের গা ঘেঁষে চারটি দোকান নির্মান করেছেন কলেজ তহবিল থেকে টাকা তুলে। দোকানগুলো থেকে তিনি প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কলেজ ভবনের ছাদের ওপর রবি নামক মোবাইল কোম্পানির বিশাল সাইনবোর্ড ছিল। উক্ত সাইনবোর্ড তিনি দোলাইরপাড়ে অবস্থিত মহানগর স্টিল মিলস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে কেজি হিসেবে প্রায় দশ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে কলেজ সুত্রে জানা গেছে। অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ তার ভাতিজা জাহিদ হোসেনকে কলেজের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের অনুমাতি ছাড়া। জাহিদ হোসেন শুধু অধ্যক্ষের গোপনীয় বিষয়গুলো নিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছে। ভাতিজা জাহিদ হোসেনকে কলেজ থেকে প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছেন ফাতেমা রশিদ। ভাতিজা কলেজে কোন দিন এক ঘন্টার জন্য বসে আবার কোনদিন একেবারে আসেই না। শহীদ জিয়া কলেজ এন্ড স্কুলকে জিম্মি করে তিনি বছরের পর বছর টাকা লুট করে যাচ্ছেন অথচ দেখার কেউ নেই। লুট করে তিনি আজ বিশাল সম্পদ ও বিত্ত বৈভবের মালিক। তিনি দামি প্রাইভেট কারে চলাফেরা করেন, যাত্রাবাড়িতে বিশাল ভবন নির্মান করেছেন, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি এপার্টম্যান্ট ক্রয় করেছেন ও বিশালাকারের ব্যাংক ব্যালেন্সের মালিক বলে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে। সম্প্রতি দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ কলেজের কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কারন দর্শানো নাটক খেলছেন। তার দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন কোন শিক্ষক তথ্য সরবারহ করছেন বলে সন্দেহ করছেন তিনি। যেসব শিক্ষককে তিনি সন্দেহ করছেন তাদেরকে তিনি স্কুলের কিছু ছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক ধরে এনে এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অতি সামান্য বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বাধ্য করছেন। এসব লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ফাতেমা রশিদ কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করছেন ও বরখাস্ত করার হুমকি দিচ্ছেন যা হাস্যকর। লাগাতার এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তার বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ভীষন ক্ষেপে যান ও দাপটের সাথে বলেন যা খুশি তা লিখেন। ডিএসসিসির ৪৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুর সাথে এ ব্যপারে যোগাযোগ করলে এ প্রতিবেদককে বলেন ফাতেমা রশিদ শহীদ জিয়া স্কুল ও কলেজটিকে গিলে খাচ্ছে। কাউন্সিলর আরও বলেন দুর্নীতিবাজ এ অধ্যক্ষকে অপসারন না করলে কলেজটিকে বাঁচানো যাবে না। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে। আগামী সংখ্যায় এ ব্যপারে আরও বিস্তারিত থাকছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + five =