ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছে রোহিঙ্গা সহিংসতায়

0
836

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ফেসবুককে ব্যবহার করা হয়েছিলো বলে স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে ভক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা স্বীকার করেন বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জাকারবার্গ বলেন, মিয়ানমারের ইস্যু নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে এবং অস্বীকার করার উপায় নেই যে ফেসবুক দিয়ে ‘বাস্তব ক্ষতিসাধন’ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এক শনিবার আমি একটা ফোন পেলাম। তারপর দেখতে পেলাম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার দিয়ে বার্তা চালাচালি হচ্ছে, দুই পক্ষের মধ্যেই হচ্ছে…কিছু বার্তায় মুসলিমরা একে অন্যকে সাবধান করছে- ‘বৌদ্ধরা ক্ষেপে উঠেছে সুতরাং আত্মরক্ষার্থে সাথে অস্ত্র রাখো, অমুক জায়গায় যাও।’ অন্য পক্ষের লোকজনও একই কথাবার্তা চালাচালি করছে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আমরা বিষয়টি ধরতে পেরেছিলাম, বন্ধ করতে পেরেছিলাম। এখন এ ধরনের বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। জাকারবার্গ যদিও দাবি করছেন যে তারা বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন এবং ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, কিন্তু রাখাইনে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ফেসবুককে ব্যবহার করা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা এখনো চলছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ফেসবুক এখন মিয়ানমারে সংবাদের প্রধান সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সেদেশের বাজার নিয়ে ফেসবুকের কোনো মাথাব্যথা নেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে মিয়ানমারের ৫ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট ছিল। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৪০ লাখ। মোবাইল সংস্থাগুলোর এক জরিপে দেখা যায়, মিয়ানমারে ফেসবুকের পোস্টকে বহু মানুষ খবর হিসেবে বিবেচনা করে। গত মাসে মিয়ানমারের সহিংসতার ওপর জাতিসংঘের তদন্তকারী ইয়াংহি লি বলেন, ফেসবুক হিংস্র জানোয়ারের রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, কট্টর বৌদ্ধ নেতাদের ফেসবুক পাতা রয়েছে এবং তার মাধ্যমে তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলছে, মিয়ানমারে গতবছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরুর ঠিক আগে ফেসবুকে ‘হেট স্পিচ’ বা ঘৃণামূলক বিবৃতি বেরুতে শুরু করেছিলো। শীর্ষস্থানীয় অনলাইন বিশ্লেষক রেমন্ড সেরাটোকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান লিখেছে, গতবছর অগাস্টে যখন নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালাতে শুরু করে সেসময় ফেসবুকে রোহিঙ্গা বিরোধী একটি গ্রুপের সদস্যদের পোস্ট ২০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। গবেষণা সংস্থা ইন্সটিটিউট অব ওয়ার এ্যান্ড পিস রিপোর্টিং- এর গবেষক অ্যালান ডেভিস দুই বছর ধরে মিয়ানমারে কট্টর বৌদ্ধ নেতাদের বক্তব্য বিবৃতি বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, গত বছর অাগস্ট মাসের আগের বেশ কিছুদিনে তিনি দেখেছেন কীভাবে ফেসবুকে পোস্টগুলো ‘অনেক বেশি সংগঠিত, ঘৃণা-মিশ্রিত এবং সামরিক’ হয়ে উঠছে। গত বছরের ২৫ আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়ন চালাতে শুরু করে। এতে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + 15 =