লাল শ্রেণিভুক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের জন্য হুমকি

0
3739

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে ওঠা লাল শ্রেণিভুক্ত ২৪টি প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। এই এলাকার মধ্যে এই ২৪টি প্রতিষ্ঠানসহ ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকবে কিনা- সে বিষয়ে আগামী ৯ মে আদেশের দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। ছয় মাস আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর এ প্রতিবেদন তৈরি করে; যা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব আদালতে দাখিল করার পর বৃহস্পতিবার তা উপস্থাপন করা হয়। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ আগস্ট ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন শিল্প-কারখানা অনুমোদনে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।

একইসঙ্গে ওই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কতগুলো শিল্প-কারখানা রয়েছে, তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে জমা দিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই প্রতিবেদনটিই বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। মোতাহার হোসেন বলেন, “আদালতের আদেশ অনুযায়ী বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে; যা আমি আজ আদালতে উপস্থাপন করেছি। আগামী ৯ মে এটি রুল শুনানিতে উঠবে।” রিট আবেদনকারী জাকির হোসেন বলেন, ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণকারী লাল শ্রেণির ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। “এই ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারবে না। পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (এনভায়রনমেন্টাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া -ইসিএ) অর্ডিন্যান্স ১৯৯৯ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার মধ্যে এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই। “এছাড়া বাকি যে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এর থেকেও বেশি। ফলে আদালত এই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে ফেলার আদেশ দেবে কি দেবে না, সে ব্যাপারে ৯ মে পরবর্তী শুনানি হবে।” হাই কোর্টে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় সর্বমোট ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে বাগেরহাটে ৭৮টি, খুলনায় ৯২টি, সাতক্ষীরায় ২০টি। এগুলোর মধ্যে ৩৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বন্ধ। লাল শ্রেণির বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার বলেন, “রেড জোনের‍গুলো সার্বিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য রেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে রুল শুনানির সময় বিশেষজ্ঞ মতামতের দরকার। তাহলে বেরিয়ে আসবে এসব প্রতিষ্ঠান কতটুকু ক্ষতিকর।” সুন্দরবন এলাকায় ৩০০ অটো গ্যাস স্টেশন স্থাপনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমোদন দেওয়ার যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তাও আদালতের নজরে এনেছেন জাকির। “আদালত এই প্রতিবেদনটি দেখার পর তা হলফনামা (এফিডেবিট) আকারে আদালতে দাখিল করতে বলেছে। প্রয়োজনে আগামী ৯ মে এ বিষয়ে আদলত প্রয়োজনীয় আদেশ দেবে বলেছে।” সুন্দরবনের পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় অর্থাৎ ১০ কিলোমিটারের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কমবেশি ১৫০টি ছোটোবড় শিল্প কারখানা বা প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প করার অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন বিভিন্ন খবর যুক্ত করে গত বছরের ১২ এপ্রিল হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন সেইভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম। তিনি এসব শিল্পকারখানা সরিয়ে নিতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল জারি করে আদালত। রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৯৯ সাল এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সুন্দরবনের চারদিকে ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর ৫ ধারার (১) ও (৪) উপধারার ধারার ক্ষমতাবলে সংরক্ষিত এ এলাকাকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে সুন্দরবনের এ ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভূমি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =