ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

1
881

নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংক ঋণ বিতরণে অনিয়ম, জালিয়াতি ও লুটপাটে অতীতের যে কোনো ব্যাংক কেলেঙ্কারি-অনিয়মকে ছাড়িয়ে গেছে। ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি-অনিয়ম ও লুটপাট করেই কেবল ক্ষান্ত হননি ব্যাংকটির পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও পদত্যাগ করা অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিজেদের অ্যাকাউন্টে অর্থ সরিয়ে নেয়ার মতো গুরুতর অপরাধ করতেও পিছপা হননি তারা। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের যোগসাজশে আমানতকারীদের অর্থ লোপাটে অস্তিত্বের সংকটে পড়া ব্যাংকটির বড় লেনদেনে অনিয়মের তদন্ত করতে গিয়ে জঘন্য অপরাধটি খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আলমগীর ও চিশতীর নৈতিক স্খলন ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, কেবল প্রতিবেদন দিলেই হবে না, এ দু’জনসহ অনিয়মে জড়িত ব্যাংকটির সব সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি লোপাট হওয়া গ্রাহকের টাকাও তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।

কারণ, ব্যাংক হচ্ছে বর্তমান সময়ে অর্থনীতির চালিকাশক্তি আর গ্রাহক হচ্ছে এর প্রাণ; কিন্তু একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান যদি রক্ষক হয়েও ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে নিতে পারে, তবে গোটা ব্যাংকিং খাত থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। এছাড়া এ দু’জনের বিরুদ্ধে আরও যেসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে, তাহল- অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়মবহির্ভূত ঋণ মঞ্জুর, ঋণ বিতরণ এবং ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া। এসব অনিয়ম করার জন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কেউ কেউ সরাসরি ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে কমিশনও নিয়েছেন। এভাবে অনিয়ম করে একটি ব্যাংককে পঙ্গু ও আমানতকারীদের পথে বসানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন এখনও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সেটাই বড় প্রশ্ন। বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের গুরুতর অনিয়ম ছাড়াও সরকারি সোনালী-রূপালী-জনতা-অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংকসহ কিছু বেসরকারি ব্যাংকেও বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি, জালিয়াতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে চিহ্নিত অপরাধী ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়াতেই অপরাধীরা যে বেপরোয়া হয়ে আরও মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে ফারমার্স ব্যাংকে, এটি সহজেই অনুমেয়। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম দূর করতে হলে তাই ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতাদেরসহ এ খাতের সব অনিয়ম-দুর্নীতিকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয়, ব্যাংক লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা ও কঠোর নিয়ম-নীতি করার পরিবর্তে এ খাতে তিন মেয়াদে পরিচালক থাকা ও পরিবারতন্ত্র কায়েমের মতো সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম রোধ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ কমিশন, আর্থিক অনিয়মের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিকল্প নেই। ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ-মূলধন লোপাটকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই কেবল পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। অন্যথায় একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারি থামানো সম্ভব হবে না। সরকারের শীর্ষমহল বিষয়টিতে দ্রুত উদ্যোগী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + 13 =