২১ মার্চ হঠাৎ করেই, কোনো আভাস ছাড়াই মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন। একই দিনে সংসদের স্পিকারও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এ দুই ব্যক্তির পদত্যাগে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় ধরনের মতবিরোধ চলছে এবং সেটা সম্ভবত রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করেই। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) উচ্চপর্যায়ের কিছু নেতা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তৎপর রয়েছেন। অন্যদিকে ইস্যুটিতে সেখানকার সেনাবাহিনীর ভূমিকা চরম নেতিবাচক। সেনাবাহিনী ও এনএলডি’র মধ্যকার এই দ্বন্দ্বেরই খেসারত হিসেবে হয়তো শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।
এটাই সত্য যে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর চেয়ে কম। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত সফল হবে কিনা। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছিল, শূন্যরেখায় অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে তারা। কিন্তু এই শূন্যরেখায়ই সেনা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনীর এই আচরণের বিপরীতে সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো অবস্থান নিতে পারছে না, উল্টো দেখা যাচ্ছে একে একে তারা পদত্যাগ করছেন অথবা তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ঠিক কী ধরনের বিরোধ চলছে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খতিয়ে দেখতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই নানাভাবে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউই রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার তথা দেশটির সেনাবাহিনী আদৌ চাচ্ছে না রোহিঙ্গারা ফেরত যাক। বিষয়টি উদ্বেগের। মিয়ানমার যদি সত্যি সত্যি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে না চায়, তাহলে তাদের ওপর কীভাবে কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা যায়, তা নতুন করে ভাবতে হবে। মিয়ানমার সরকারের যারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চান, তারা সংখ্যায় যতই হোক, তাদের আমরা সাধুবাদ জানাতে চাই। তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে বলেও আমাদের প্রত্যাশা। বস্তুত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর সেদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।